ঢাকা: ‘নিজের কাজ ফেলে বায়োমেট্রিকের কাজ করছি, একটা সিমের পিছনে পাঁচ মিনিট সময় যায়। এটা বাড়তি কাজ, বাড়তি টাকা তো দিতেই হবে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম কার্ডের তথ্য যাচাইয়ে অবৈধভাবে ২০ টাকা আদায়ের জন্য এভাবে যুক্তি তুলে ধরলেন একজন রিটেইলার।
রাজধানীর মিরপুর দশ নম্বরে শাহ আলী মার্কেটের পেছনে ‘ফেনী টেলিকম’ নামে মোবাইল ফোন রিচার্জ, সিম বিক্রির এই দোকানটি প্রত্যেক সিম ২০ টাকা দিয়েই তথ্য যচাই করে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিমের তথ্য যাচাইয়ে অর্থ আদায়ের এমন চিত্র দেখা গেলো শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শাহ আলী মার্কেটের আশে পাশের আরও কয়েকটি রিটেইলারের কাছে। তারা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অর্থ নিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছ থেকে।
শুধু মিরপুর নয়, বায়োমেট্রিক বা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিমের তথ্য যাচাইয়ে রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ফেসবুক পাতায়ও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন গ্রাহকরা।
ফেনী টেলিকমের ওই রিটেইলার বাংলানিউজকে বলেন, বায়োমেট্রিকের ডিভাইস মোবাইল অপারেটররা দিয়েছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারণে তো কমিশন দেয়নি, তাই অর্থ দিতেই হবে।
সব অপারেটরই নিবন্ধন করাচ্ছেন ফেনী টেলিকমের এই রিটেইলার। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে নিজ সিমের তথ্য যাচাই করছিলেন রিপন নামে এক গ্রাহক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের ব্যস্ততার কারণে সময় পাই না। তাই ছুটির দিনে এসেছি, বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই বায়োমেট্রিকে আঙ্গুলের ছাপ দিচ্ছি।
এসময় অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে সরকারের মনিটরিং জোরদারের দাবি জানান রিপন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিমকার্ড নিবন্ধন-পুনর্নিবন্ধনে অর্থ নিলে কালো তালিকা করে রিটেইলারশিপ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
গত ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধন শুরুর পর ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে মোবাইল অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিমন্ত্রী হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের মধ্যে শুক্রবার মিরপুরের সেনপাড়া স্পোটর্স কর্নারের দেখা গেল সেখানে শুধু গ্রামীণফোনের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা হচ্ছে। ওই রিটেইলার বলেন, আমাদের কাছে করালে বায়োমেট্রিকের জন্য অর্থ দিতে হবে। তবে কাস্টমার কেয়ার বা অপারেটরদের ছাতার নিচে বসা অস্থায়ী পয়েন্টে টাকা দিতে হয় না।
‘টাকা না দিতে চাইলে সেখানে যান’, বলেন স্পোটর্স কর্নারের সত্ত্বাধিকারী।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বনানী লেক সংলগ্ন ১৯ নম্বর রোডের পাশে অস্থায়ীভাবে বসে রিচার্জ ছাড়াও বাংলালিংক ও গ্রামীণফোনের তথ্য যাচাই করছিলেন রনি।
বায়োমেট্রিকে তথ্য যাচাইয়ে কী কী লাগবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি (জাতীয় পরিচয়পত্র), এক কপি ছবি ও সিম। আর খুশি হয়ে ২০/৩০ যা দেন।
রিটেইলারদের টাকা নেওয়ার কথা না, আপনি নিচ্ছেন কেন- প্রশ্নে রনি বলেন, সেটা ঠিক আছে। বাড়তি সময় যাচ্ছে, খুশি হয়ে কাস্টমার যা দিচ্ছে সেটাই লাভ।
আগামী এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শেষ করার কথা রয়েছে, এখন দিন দিন চাপ বাড়ছে বলে জানান রনি।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে নর্দা এলাকায় রাস্তার পাশের একটি দোকানে সিমের তথ্য যাচাইয়ে দু’দিন আগে একজন গ্রাহক গেলে তার কাছে গ্রামীণফোনের সিমের জন্য ৩০ টাকা চাওয়া হয়।
ওই গ্রাহক টাকা না দিয়ে করাতে চাইলে বলেন, তাহলে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যান, যা ইচ্ছে তাই করেন।
আশেপাশের আরও কয়েকটি দোকানে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন অপারেটরের সিম ২০ থেকে ৫০ টাকায় বায়োমেট্রিকে তথ্য যাচাই করানো হচ্ছে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে অপারেটররা রিটেইলারদের ইনটেনসিভ দিচ্ছেন; তাই বাড়িতি অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বলছেন গ্রাহকরা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ছয় মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর পর এক মাসে গ্রাহক কমেছে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমআইএইচ/এটি