ঢাকা: বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো পর্যায়ে গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সরকার। এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী চক্র প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (০৬ মার্চ) সচিবালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সংক্রান্ত এক সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং এই বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী এসব কথা বলেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু হয়েছে, যাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
সিম নিবন্ধনে অপারেটররা আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করে সেই তথ্য বিদেশে পাচার হচ্ছে- এমন সমালোচনাও উঠে। এ নিয়ে সরকারকে একটি উকিল নোটিশও পাঠানো হয়।
এসব বিভ্রান্তি দূর করতে দেশে ফিরেই বিটিআরসি, এনআইডি, সিআইডি, ডিজিএফআই এবং অ্যামটবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।
সভা শেষে সাংবাদিকদের তারা বলেন, এক এনআইডি’র বিপরীতে হাজার হাজার সিম ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা বন্ধ করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেই।
এই পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে শুধু কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে রক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে এবং এখানে কোনোভাবেই এই ছাপ সংরক্ষিত হচ্ছে না, জানান প্রতিমন্ত্রী।
তারানা হালিম বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে সেখানে অপারেটরদের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার প্রযুক্তিগত কোনো সক্ষমতা নেই। আঙ্গুলের ছাপ একটি বাইনারি ডিজিটাল কোড, এটা কোনো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তারা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ। এক সময় পুকুরে জাল ফেলে সিম পাওয়া গিয়েছিলো, আমরা সেই অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না।
‘এই প্রোপাগান্ডা শুরুতেই যেন শেষ করতে পারি। যারা এই পদ্ধতি ভেস্তে দিতে চায়, তারা অনেক ক্ষমতাবান, অনেক টাকাওয়ালা, আমাদের টাকার শক্তি নাই। আমাদের শক্তি মোরাল’, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট, ভিসা, কেনাকাটা, এটিএম বুথ, ডিজিটাল নম্বর প্লেট করতে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি; তাহলে এখন কেন প্রশ্ন উঠলো।
এই পদ্ধতি ভেস্তে গেলে মোবাইল অপারেটররা সব চেয়ে বেশি খুশি হবে। কারণ তাদের রিটার্ন নেই। সিম বিক্রি কমে গেছে।
সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, একটি গোষ্ঠী বায়োমেট্রিকের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। সেটা চাঁদাবাজ, অবৈধ ভিওআইপি বা হুমকিদাতারা; তারা করছে বা করাচ্ছে।
“যারা কথা বলছে তাদের ভেরিফিকেশন দরকার, তাদের চিহ্নিত করেন, গোড়ায় হাত দেব। দুই একজনকে বের করে ধরতে চাই”।
এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, যে যন্ত্রের সাহায্যে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা শুধু অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, ওই যন্ত্রে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার কোনো প্রযুক্তি নেই। ব্যাংক ও অন্যান্য সেবা খাতেও এইভাবে ছাপ যাচাই করা হচ্ছে।
সিআইডি পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার বলেন, যেভাবে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে তাতে কারও ব্যক্তিগত আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে অপরাধ কার্যক্রমে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, এগুলো কেবল সিনেমাতেই সম্ভব।
এই পদ্ধতি শেষ হলে চাঁদাবাজি, হুমকি, হয়রানি একদম শেষ হয়ে যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
উন্নত বিশ্বের আমেরিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে বিটিআরসি’র মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে সেখানে কোনোভাবেই তা সংরক্ষণ করার উপায় নেই।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, বায়োমেট্রিক নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তাতে অপারেটরদের নেপথ্য কোনো হাত নেই। বরং এ বিষয়ে অপারেটররা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যাতে খুব দ্রুত এই কাজ শেষ হয়।
শুরুর পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই কোটি ৫৩ লাখ সিমের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্ভব হয়েছে, জানান বিটিআরসি কর্মকর্তা বারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬/আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা.
এমআইএইচ/এটি