ঢাকা: চলার পথে হাতে স্মার্টফোন-ট্যাবলেট, কর্মস্থলে ল্যাপটপ-কম্পিউটার, আর বাসা-বাড়িতে টেলিভিশন। এ যুগে মানুষের পুরো সময়টাই যেন কাটে ডিজিটাল ডিভাইসে চোখ রেখে।
রঙচঙা এসব ডিভাইসের পর্দায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখের ‘বারোটা’ বেজে যায়। দেখা দেয় চোখে ব্যথা, লালচে দাগ, ক্লান্তি, এমনকি দৃষ্টি-সমস্যাও। এ ধরনের অসুস্থতাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ বলা হয়।
তবে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম হলেও এ অসুস্থতা নেমে আসে স্মার্টফোন-ট্যাবলেটসহ অন্যান্য হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস ব্যবহারের কারণেও।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডিজিটাল পর্দায় চোখ রেখে কাজ করে যদি এর যত্ন নেওয়া না হয়, তবে ‘সিনড্রোম’ কেবল ‘সিনড্রোম’ই থাকবে না, ঠেলে দিতে পারে অন্ধত্বেও।
এ বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে কথা বলছিলেন সিঙ্গাপুরের হুইলক প্যালেসের শিনাগাওয়া আই সেন্টারের মেডিকেল ডিরেক্টর ও খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. লি সাও বিং।
তিনি বলেন, আমরা যতোটা সময় কম্পিউটার বা এ ধরনের ডিজিটাল পর্দায় তাকিয়ে থাকছি, ততোটা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে চোখের সমস্যা। এ ধরনের ডিভাইসে আমরা লম্বা সময় অপলক তাকিয়ে থাকি, যার ফলে চোখ ভিজতে পারে না। এতে আমাদের চোখ শুকিয়ে যায়। আর শুষ্কতার কারণে দেখা দেয় যাবতীয় অসুস্থতা।
কম্পিউটার ও প্রযুক্তির এ যুগে যেহেতু এসব ডিভাইস এড়িয়ে কাজ করা সম্ভব নয়, সেহেতু এর মধ্যে থেকেই সুস্থ থাকতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও চোখের যত্ন-আত্তি। ড. লি সাও বিং বাতলে দিয়েছেন সেসব যত্ন-আত্তি।
প্রয়োজন মতো ডিভাইসের লাইটিং সেট
কম্পিউটার-স্মার্টফোন বা এ জাতীয় ডিভাইসে কাজের ক্ষেত্রে তার আলোক ব্যবস্থা বা লাইটিং সঠিক মানে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে কাজেও থাকে স্বাচ্ছন্দ্য, সুযোগ থাকে সৃজনশীলতা প্রকাশেরও। কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্য কোনো উৎস থেকে যেন ডিভাইসটির ওপর আলো না পড়ে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী যেখানটায় বসছেন তার পেছনের কোনো বাল্ব অথবা জানালা দিয়ে আসা আলো ভোগাতে পারে। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি নিশ্চিত করেই কাজে মনোযোগ দিতে হবে।
পর্দার ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্টে সামঞ্জস্য
কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনের পর্দা ‘চক্ষুবান্ধব’ করতে এর ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্টে সামঞ্জস্য রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য ডিভাইসের ডিসপ্লে সেটিংয়ে গিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে ডিভাইসের ব্রাইনেস ও কনট্রাস্ট সেট করতে হবে। যেমন- যদি কোনো শব্দ বা বাক্য সহজে না পড়া যায়, তবে তার মানে ডিভাইসের পর্দার আলো অনেক কমানো। তাই শব্দ বা বাক্য ভালোভাবে পড়ার মতো করে ব্রাইটনেস সেট করতে হবে।
বর্ণের ফন্ট বাড়ান
কম্পিউটার-ল্যাপটপ-স্মার্টফোনে কাজের ক্ষেত্রে ফন্ট ছোট থাকলে সেটা চোখের ওপর চাপ ফেলে। এই চাপ কমাতে ফন্ট বাড়াতে হবে। ফন্ট বাড়ালে পড়ার অভিজ্ঞতাও বাড়বে। ফন্ট বড় থাকলে পড়ার ক্ষেত্রে বিরক্তি আসে না, তাতে অনেক দীর্ঘ সময় ধরেও কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে কিছু পড়া অথবা সম্পাদনা করা যায়।
চশমা-লেন্সের ব্যাপারে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের যথার্থতা যাচাই
ডাক্তার আপনার চশমা বা লেন্সের ব্যাপারে যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, তা অবিরাম কম্পিউটার-ল্যাপটনির্ভর কাজের বিবেচনায় ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি কাজের বিবেচনায় চশমা বা লেন্সের পাওয়ার সঠিক না হয়, তবে চোখ নিয়ে আরও বেশি ভুগতে হবে।
দীর্ঘ সময় ধরে কন্টাক্ট লেন্স পরবেন না, যেখানে-সেখানে ফেলে রাখবেন না
দীর্ঘ সময় ধরে কন্টাক্ট লেন্স পরে থাকা যাবে না। আবার যেখানে-সেখানে ফেলেও রাখা যাবে। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখলে লেন্স বা চশমায় ময়লা জমতে পারে, তাতে চোখে বাড়তি নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু সংক্রমণ অন্ধত্বের দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
নিয়মিত চোখকে বিশ্রাম দিন
আপনি যদি অনেক বেশি সময় ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দায় তাকিয়ে থাকেন, তবে চোখ শুকিয়ে যেতে থাকবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকলে এই ঝামেলা আরও বেশি হবে। এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে নিয়ম করে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে। যেমন হতে পারে- ডিভাইস ছেড়ে একটু দূরে তাকান। অথবা আধা ঘণ্টা পরপর কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখুন।
প্রয়োজনে ড্রপস ব্যবহার
যদি চোখ অনেক বেশি শুকিয়ে যায় অথবা এ ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের ড্রপস ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিয়ম করে ডাক্তারকে চোখ দেখান
সর্বোপরি ডিজিটাল যুগে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে সুযোগ বের করে নিয়ম করে চক্ষু ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। চোখের ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, চোখ থাকতে চোখের মর্যাদা না বুঝলে সুন্দর আলোর জগতে অন্ধকার নেমে পড়ার শঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এইচএ/