ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সাইবার ক্রাইম

ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি এড়াবেন কীভাবে

ড. রাগিব হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি এড়াবেন কীভাবে প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নিয়ে ঘুরছেন? এটিএম থেকে আরামে টাকা তুলছেন? কিংবা দোকানে খেয়ে-দেয়ে বা জিনিস কিনে কার্ডে দাম দিচ্ছেন? সাবধান! অভিনব কায়দায় আপনার কার্ড ও টাকা-পয়সা লোপাট করতে মাঠে নেমেছেন সাইবার ক্রিমিনালরা! সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও তারা হাজির।  
 
বাংলাদেশে সাইবারক্রাইম খুব জোরেসোরে শুরু হবে, বছর দু’য়েক আগে ভবিষ্যতবাণী করেছিলাম।

এটাও বলেছিলাম, সরকারি নানা সংস্থা এসব সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে একেবারেই প্রস্তুত নয়। এমনকি সরকারি পর্যায়ে ওয়েবসাইট ডিফেস করা ‘ছিঁচকে লোকজন’-কে ধন্য ধন্য করা হয় আর অন্যদিকে, ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়।
 
আমার আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে সম্প্রতি দেশে ডেবিট কার্ড স্কিমিং জালিয়াতির বেশকয়েকটি বড় ঘটনা শুরু হয়েছে। এবং এক বিদেশি বাটপার ধরা পড়লেও শান্তিতে থাকার কিছু নেই। এভাবে সহজে টাকা কামানো যায়, এ ব্যাপারটি আরও অনেক চোর-বাটপারের নজরে এসে গেছে, কাজেই এ ঘটনা ঘটবেই।
 
ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং কী
ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিছনে একটা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে কালো বা খয়েরি রঙের। সেখানে কার্ডের নম্বর থেকে শুরু করে অন্য তথ্য ভরা থাকে। আপনি যখন এটিএম-এ কার্ড ঢোকান কিংবা দোকানে সোয়াইপ করেন, তখন কার্ড রিডার সেই স্ট্রিপ থেকে কার্ডের তথ্য পায়। এই তথ্যটুকু যদি কারও হাতে চলে যায়, তিনি কিন্তু চাইলেই আপনার কার্ডের একটি ক্লোন বা কপি বানিয়ে ফেলতে পারবেন, এরপর সেটি দিয়ে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ডে চার্জ করতে পারবেন। অপরাধীরা এই সুযোগটাই নেন। এটিএম’র কার্ড ঢোকানোর জায়গাটায় তারা অতিরিক্ত একটি যন্ত্রাংশ লাগিয়ে দেন। সেটার কাজ হলো, মেশিনে ঢোকার আগে কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপটা পড়ে নেওয়া, আর সেই তথ্য অপরাধীর কাছে পাঠানো। এই যন্ত্রটিকে বলা হয় স্কিমার (skimmer)।
 
আবার অনেক সময় পোর্টেবল স্কিমার পাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে খেয়ে ওয়েটারের হাতে কার্ড দিলে আড়ালে গিয়ে এক সেকেণ্ডের মধ্যেই কিন্তু আপনার কার্ড স্কিমার দিয়ে কপি করে নেওয়া যায়। এরপর কার্ডের তথ্যগুলো ব্ল্যাংক একটি কার্ডে ঢোকানো হয়, ফলে সেটি কার্যত আপনার কার্ডের কপি হয়ে যায়।
 
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে পিন সংখ্যাটি পেতে হলে আরেক ধাপ বেশি করতে হয়, অনেক সময় এটিএম’র কি-বোর্ডের উপরে আলগা নকল কি-বোর্ড লাগানো হয়। অথবা কি-বোর্ডের জায়গাটি দেখা যায়, এমন একটি জায়গায় গোপন ক্যামেরা বসিয়ে যান অপরাধীরা। এভাবেই আপনার পিন সংখ্যাটি পড়ে ফেলতে পারে।
 
স্কিমিংয়ের বাটপারিটা পশ্চিমা দুনিয়াতে বহুদিন ধরেই হয়ে আসছে। আপনি একটু সাবধান থাকলে এটি এড়াতে পারেন।  

কীভাবে জালিয়াতি এড়াবেন
- এটিএম বুথে কার্ড ঢোকাবার আগে দেখে নিন, কার্ড ঢোকানোর জায়গাটি কী আলগা বা আলাদা লাগছে কিনা। সেটি কী অস্বাভাবিক বা বেঢপ ধরনের, মনে হচ্ছে কী এটি পরে লাগানো হয়েছে? দরকার হলে হালকা টান দিয়ে দেখুন সেটি আলগা নাকি।
 
- পিন এন্টার করার সময় কি-বোর্ডটি আলগা নাকি দেখে নিন।
 
- পিন এন্টার করার সময় কোন কি চাপছেন সেটি অন্য হাত দিয়ে ঢেকে রাখুন।
 
- রেস্টুরেন্ট বা অন্যত্র ওয়েটারের হাতে নিশ্চিন্তে কার্ড দিয়ে দেবেন না। সম্ভব হলে কাউন্টারে গিয়ে নিজের চোখের সামনে থাকা অবস্থায় বিল দিন। রেস্টুরেন্ট যতো নামী-দামীই হোক না কেনো, বিশ্বাস করবেন না। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আমেরিকার এক নামকরা জায়গায় রেস্টুরেন্টের ওয়েটার আমার ক্রেডিট কার্ড কপি করে নিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি সন্দেহজনক চার্জ দেখে আমাকে ফোন করে।
 
স্কিমিং এখন বেশ লো-টেক সাইবার ক্রাইম। তবে বাংলাদেশে এটি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষসহ কারও ধারণা নেই বলে পিটার নামে ওই বিদেশি প্রতারক এর সুযোগ নিয়েছেন। এবার মাঠে নামবেন দেশি প্রতারকেরাও। কাজেই সময় থাকতে সাবধান হোন।
 
ড. রাগিব হাসান
সহকারী অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান
ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।