ঢাকা: মোবাইল সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে না জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী।
বুধবার (১৬ মার্চ) সচিবালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।
সিমের তথ্য যাচাইয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আঙ্গুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শুরু করে সরকার। সরকার বলছে, এর মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিচিতি নিশ্চিত হবে এবং অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।
সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে, অপারেটরদের লোগো ব্যবহার করে ফেসবুক-অনলাইনে মিথ্যা প্রচার চলছে। গণমাধ্যমেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে- এমন দু’জনের কথা উল্লেখ করেন তারানা হালিম।
‘আপনারা ভালভাবেই জানেন, এটি কারা করতে পারে। যারা অবৈধ ভিওআইপি, যারা চাঁদাবাজি, খুন রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারাই মূলত আমাদের এই প্রক্রিয়াটি বানচাল করার জন্য অত্যন্ত সক্রিয়। ’
তারানা হালিম বলেন, যাকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে বার বার তুলে ধরা হয়েছে, যারা নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তুলে ধরেছেন, তাদের পরিচয় একটু দেখুন। তাদের মধ্যে একজন অবৈধ ভিওআইপি’র জন্য সরঞ্জামসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং চাকরি চলে যায়।
মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দানকারী এই ব্যক্তি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার ব্র্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে, তিনি র্যাংসটেলে অবৈধ ভিওআইপি করার সময় সরঞ্জামসহ গ্রেফতার হন। তার নামে নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং তার চাকরি গেছে। এখন তিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে হাজির হয়ে টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। বলছেন, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে ওই ব্যক্তির নাম বলেননি প্রতিমন্ত্রী।
‘আরেকজন আইসিটি বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থার একজন বলে দাবি করছেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইসিটি বিভাগ কনফার্ম করেছে তিনি আইসিটি বিভাগ বা গোয়েন্দা সংস্থার কেউ নন। ’
** রিজার্ভ চুরির স্পর্শকাতর বিষয়ে তানভীর জোহাকে নিয়ে সর্তকতা
দ্বিতীয় ব্যক্তি তানভীর জোহাকে নিয়ে দু’দিন আগে বিবৃতি দেয় আইসিটি বিভাগ। তাতে বলা হয়, তানভীর জোহা আইসিটি বিভাগের কেউ নন। তানভীর জোহা সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় আইসিটি বিভাগের বিবৃতিতে।
পরিচয় যদি মিথ্যা হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার মতো স্পর্শকাতর পরিচয় ব্যবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব। পরিচয় ভুল দিয়ে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা জালিয়াতির মধ্যে পড়ে, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
‘যিনি ভণ্ড, প্রতারক, অবৈধ ভিওআইপি করে তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে চিহ্নিত করতে চাই। তারা তো ক্ষুব্ধ হবেন। ’
টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা অ্যাকশনে আছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করবো প্রত্যেকের পিসিপিআর (প্রিভিয়াস ফেস প্রিভিয়াস রেকর্ড) জানতে চাই। প্রত্যেকের পিসিপিআর বের করবো। সাধারণ মানুষ বায়োমেট্রিকের বিরোধীতা করছে না, করছে স্বার্থান্বেষী মহল। যাদের স্বার্থে আঘাত লাগছে। পিসিপিআর নিয়ে পরবর্তী স্টেপ নিতে চাই।
নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ দাবি করে ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয় এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধনের বিপক্ষে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানকারী তানভীর হাসানকে সভায় ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
সভায় উপস্থিত গোয়েন্দা (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা রাশেদুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যাচাই করেছি, কোনো গোয়েন্দা সংস্থাই তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি। আমরা তার সঙ্গেও কথা বলেছি। যতটুকু তথ্য-উপাত্ত যাচাই করেছি, তাকে একজন ভণ্ড-প্রতারক বলে মনে হয়েছে। আরও যাচাই-বাচাই করে তাকে সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা করছি।
বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটররা আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে না। এটা নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব চলছে। আমরা অত্যন্ত কনফিডেন্ট, সরকার অত্যন্ত সতর্ক, আমরা কনফিডেন্টের সঙ্গে বলতে চাই যেহেতু আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ হচ্ছে না, তৃতীয় পক্ষের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমের নিবন্ধন চলবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন ও ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে এক রিটের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচার ও গুজবের ভিত্তিতে কোনো মামলা হলে তার মেরিট থাকে না। সময় মতো আদালতে হাজির হয়ে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করার কোনো প্রযুক্তি নেই। আঙুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা শুধু অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, এনআইডি ডাটাবেজ থেকে কোনো তথ্য বের হয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
বিটিআরসির মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে সেখানে কোনোভাবেই তা সংরক্ষণ করার উপায় নেই। এটি শুধু অনলাইনে ভেরিফাই হচ্ছে।
অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, বায়োমেট্রিকের জন্য প্রতিটি অপারেটর ১শ’ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছে। অপারেটররা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায়।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজীব শেঠি বলেন, সিম নিবন্ধন গ্রাহকরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। কোনোভাবে তথ্য সংরক্ষিত হচ্ছে না।
রবির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহেদ আলম বলেন, অপারেটররা যে ডাটা সংরক্ষণ করে তা শুধু গ্রাহক যাচাই করার জন্য, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার কোনো কারণ নেই।
বাংলালিংকের সিইও এরকি অস, এয়ারটেলের সিইও পিডি শর্মা, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ এবং অন্যান্য অপারেটরের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬/আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা.
এমআইএইচ/এটি