ঢাকা: একটি দারুণ সুযোগ তৈরি হলো। আমরা এখন সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারবো, আর সারাবিশ্বকে জেনে আমরা দেশে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারবো।
পলক এখন কেবল বাংলাদেশ সরকারের তরুণ মন্ত্রীই নন, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও তিনি এখন একজন স্বীকৃত তরুণ নেতৃত্ব। গত ১৬ মার্চ পলককে গ্লোবাল ইয়াং লিডার হিসেবে নির্বাচিত করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সে নিয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে কম্পিউটার কাউন্সিলে তার কার্যালয়ে।
গত ১৬ মার্চটিকে নিজের জীবনের একটি ভাললাগার দিন হিসেবেই উল্লেখ করলেন এই তরুণ প্রতিমন্ত্রী। বললেন, হাইটেক পার্কের সাফল্য, আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড, টেকসই উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির দিনগুলোর মতোই একটি আনন্দের দিন ছিলো এটি।
তিনি বলেন, আইটি সেক্টরের সাফল্যের দিকগুলোই এতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
একজন উচ্ছ্বসিত জুনাইদ পলক বলেন, ২০০৭ সালে এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের কাছে তথ্য প্রযুক্তির মেন্টর সজীব ওয়াজেদ জয়। এখন নয় বছর পর একই ফোরাম আমাকে নির্বাচিত করেছে। এ থেকে নিশ্চিত হয়, আইটি সেক্টরে আমাদের সকল কার্যক্রম সঠিক পথে রয়েছে। শুধু এই সাফল্যই নয়, গত সাত বছরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
‘আমি বলবো প্রতিটি অ্যাওয়ার্ড, প্রতিটি স্বীকৃতি নতুন করে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে উজ্জীবিত করে আর সাথে সাথে দায়িত্বশীলতাও বাড়িয়ে দেয়। মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যায়, ফলে সে প্রত্যাশাপূরণ একটা বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে,’ বলেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
বয়সের ঘাটতি আর অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, সবকিছু কাটিয়ে যাতে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টিওয়ান পূরণ করতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সেই দিনই সবচেয়ে বেশি আনন্দ হবে যখন ২০২১ সালে আমরা ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি এক্সপোর্ট করতে পারবো। দেশে শতভাগ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবো। যখন এদেশে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী আইসিটি সেক্টরে কর্মরত থাকবে।
‘সেটাই হবে আমাদের সত্যিকারের অর্জন। ’
ইয়াং গ্লোবাল লিডারের নেটওয়ার্কটি নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বললেন তিনি। জানালেন, এটি অনেক বড় নেটওয়ার্ক। কোনও বছর ১০০ জন, কোনও বছর ২০০ কোনও বছর ২৫০ জন নেতা গোটা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলা, বিনোদন সব অঙ্গন থেকেই তারা আসছেন। অভিনেতা-অভিনেত্রী-প্রযুক্তিবিদ-রাজনীতিক সবাই এতে স্থান পান। জাকারবার্গ যেমন আছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও আছেন। এটা বৈচিত্রপূর্ণ একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে সবাই প্রভাবশালী এবং ভবিষ্যতে আরও প্রভাবশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪০’র নিচেই যারা অ্যাচিভার্স তাদেরই তারা নির্বাচিত করছে। ফলে এটা একটা বিশাল শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের টপ লিংকে সবাই কানেকটেক হবে। এটাই একটা অসাধারণ দিক।
এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে পলক বলেন, গত ১৬ মার্চের পরপরই অফার ছিলো নতুন কোনও আইডিয়া দেওয়ার, যা পৃথিবীকে সমাজ পরিবর্তনে সহায়তা করবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।
জানালেন, অনলাইন একটা অ্যাপস তৈরির আইডিয়া তিনি দিয়েছেন যার মধ্য দিয়ে মাদক বিরোধী আন্দোলন, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ, অনলাইন ব্লাড ডোনেশনকে উৎসাহিত করা হবে। আর সে আইডিয়া ফোরামে গৃহীত হয়েছে। এখন আলোচনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হবে।
পলক বলেন, আগামী পাঁচটি বছর ধরে বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারদের সঙ্গে আমাদের কথা হবে, যোগাযোগ হবে। আমরা আমাদের সাফল্যের গল্প বলবো, আইডিয়াগুলো নিয়ে কথা বলবো। বিশ্বের অন্যান্য তরুণ গবেষক, আবিষ্কারক নেতৃত্ব তাদের আইডিয়া জমা পড়বে। তা নিয়ে ব্রেইনস্টর্মিং হবে। আমাদের কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অপার সুযোগ তৈরি হবে। আমরা সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরবো, আর সারা বিশ্বকে জেনে আমরা এখানে প্রয়োগ করবো। ফলে এ এক দারুণ সুযোগ।
তিনি আরও বলেন, এই বিশাল গ্রুপটি ফেসবুক ভাইবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংযুক্ত। তাছাড়া টপ লিংকের নিজেদেরও একটা গ্রুপ রয়েছে। এখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন আইডিয়া আসছে। কেউ কোনও আইডিয়া এখানে তুলে ধরলে সেটি নিয়ে সবার কথা বলার সুযোগ রয়েছে। সেখানে অনেক মন্তব্য দিচ্ছে, আলোচনা করছে। ফলে সেখান থেকে নিজেকে সম্মৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছি। কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে উঠেছে।
বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে তিনি গুগলের উদাহরণ দেন। বলেন, গুগলের ভেনচার ক্যাপিটালের সঙ্গে মিটিং করতে চাইলে এই প্ল্যাটফর্মে তাকে সহজেই পেয়ে যাচ্ছি, জানাতে পারছি বাংলাদেশের আইটি সেক্টর এখন কোথায় পৌঁছেছে, যা আগে অতটা সহজ ছিলো না।
দেশে অনেক ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট আয়োজন করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এসব আয়োজনে এই নেটওয়ার্কের সবাইকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন আইসিটি সেক্টরে উন্নয়নের রোল মডেল তা আরও দৃঢ়ভাবে সবার জানা হয়ে যাবে।
তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি নিয়ে কাজ মানেই তরুণদের নিয়ে কাজ। আমি এটা উপভোগ করি। দায়িত্বটি আমি সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবো যাতে ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন তরুণদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্বরা দায়িত্ব দিতে দ্বিধা না করে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নেতৃত্বে তার সঙ্গে কাজ করার আনন্দটাই ভিন্ন রকম ও গর্বের। আর বাংলাদেশে আইটি প্রজন্মের মেন্টর বলা চলে প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে। তিনি নিজে খুব কাছে থেকে গাইড দিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন, ফলে আমরা অনেক বিষয়েই বিশ্বের অনেক আধুনিক রাষ্ট্রের মতো করে চিন্তা করতে পারছি। অনেক আধুনিক বিষয়ও দুরদর্শিতার সঙ্গে অনেক যুগোপযোগী কর্মসূচি আমরা শুরু করতে পারছি।
এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গেও চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হার্ডওয়্যার-সফটওয়ার ও সার্ভিস এই তিনটি জায়গায় যারা কাজ করছে সেসব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে এবং এডুকেশনিস্টদের সঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এটা যদি সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তাহলেই আমরা আমাদের ভিশন দ্রুতই পূরণ করতে পারবো।
কি সেই ভিশন? আর কিভাবে কোনপথেই তার পূরণ করার চেষ্টা? সে নিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আরও বিস্তারিত কথা হয়। বাংলানিউজের পাঠকের কাছে তা সাক্ষাৎকারের পরবর্তী পর্বে তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশ সময় ২৩২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
এমএমকে