ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা শামসু বাহিনীর চরের মধ্যে একটি পাকিস্তানি ক্যাম্প দখল। শহীদ হন বাহিনীর সদস্য সজল।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের এমন নানা কাহিনী নিয়ে তৈরি মোবাইল গেম ‘হিরোজ অব ৭১’ ডাউনলোড করা যাবে ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে। এটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে-স্টোরে।
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে পোর্টব্লিস তাদের নতুন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল গেমটি নির্মাণ করেছে।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল গেমটির উন্মোচনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, ভূমিসচিব মেজবাউদ্দিন, বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গেমের পরের অংশে দেখা যায়, বরিশালের শনিরচরের পর উল্লারহাটে পাকিস্তানি টর্চার ক্যাম্পে আক্রমণ করার সময় শামসু বাহিনীর পরিচয় হয় অনিলার সঙ্গে। মেয়েদের নিয়ে একটি গেরিলা গ্রুপ গঠনের সময় অনিলা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
অনিলা শামসু বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর এবার কাছেই আন্ধারমানিক খালের ওপর তাকা পাকিস্তানি কনভয়ের ব্যবহৃত একটি ব্রিজ উড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু এ মিশনে আসে বাধা। নীরবে অগ্রসর হওয়া শামসু বাহিনীর অবস্থান জেনে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। তখন শামসু বাহিনীর পথ- ‘যুদ্ধ করে বাঁচো, মরো নয়তো মারো’।
গেমটির ঘটনা, কাহিনী ও চরিত্র কাল্পনিক হলেও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোর্টব্লিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাফায়েত লতিফ বলেন এটি ভালো সাড়া ফেলেছে এবং তরুণ প্রজন্ম গেমের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে জানবে।
গেমের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি জানান, গুগল অ্যানালিস্ট ডাটা অনুযায়ী গেমটি গুগল প্লে-স্টোর থেকে তিন লাখ ৮০ হাজার বার ডাউনলোড হয়েছে, বর্তমানে গেমটি খেলছেন ছয় লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ জন। গেমটির সেশন সংখ্যা ৪৯ লাখ এবং ইউজার রেটিং ৪ দশমিক ৭।
গেমের নির্মাতারা আরও বড় পরিসরে নতুন সিক্যুয়াল নিয়ে এসেছেন, যার নাম ‘হিরোজ অব ৭১:রিট্যালিয়েশন’। গেমটিতে থ্রিডি গ্রাফিক্স এবং অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকালীন পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েডের পাশাপাশি শিগগিরই গেমটি অন্যান্য ভার্সনে পাওয়া যাবে বলে জানায় পোর্টব্লিস।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, তরুণ প্রজন্ম বায়ান্নে প্রাণ দিয়ে বাংলা ভাষা ও একাত্তরে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য তুলে ধরতে না পারলে হবে না। এ গেমের মাধ্যমে তা সম্ভব।
‘তরুণ প্রজন্ম নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ গেম তৈরি করেছে, গেম খেলে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে উজ্জীবিত হবে তরুণরা। সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষি ৪০ কোটি, লাখ লাখ বার ডাউনলোড হবে। ’
গেমটি ডাউনলোড করে সবাইকে খেলার অনুরোধ জানান পলক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সারা বিশ্বে এখন মোবাইল গেমের মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট। এটা সম্ভাবনাময় খাত। আগামীতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীকে আইসিটি খাতে নিয়োজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে, আমাদের নতুন নতুন গেম ডেভেলপার দরকার, তারা নতুনত্ব নিয়ে আসবে।
‘ওয়ান থাউজেন্ড প্রোডাক্ট বাই ২০২১’ বাস্তবায়নের জন্য আমরা সহযোগিতা করতে চাই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। সারা বিশ্বে সুনাম খ্যাতি ছড়িয়ে দেবে।
তরুণরা গড়বে নতুন দেশ, ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ, বলেন পলক।
আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত গেমটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ, এতে তরুণ প্রজন্মের মেধার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কেউ কেউ টাকা নিয়ে গেছে, কী করেছে, জানায়নি। আমরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। সরকারি অর্থ অপচয় করা যাবে না। সরকারি অর্থ কাজে লাগাতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত এ গেইমটি স্বাধীনতা দিবসের আগে গর্বের বিষয় উল্লেখ করে এসএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু শিক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে গেমটি ভূমিকা রাখবে।
সরকার এ ধরনের উদ্যোগে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাবে বলে জানান এসএম আশরাফুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস