গত বছরের শেষ দিকে মিশরে বন্ধ করে দেয়া হয় ফেসবুকের ফ্রি বেসিক ইন্টারনেট সার্ভিস। কিন্তু কি কারণে মিশর সরকার সেবাটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনে তা সুস্পষ্ট ছিলনা।
এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজন ব্যক্তি অবশ্য কারণটি বেশীদিন গোপন রাখতে দিলনা। কয়েক দিন আগে সংবদামাধ্যমের কাছে তারা ঘটনার অনেকটাই খোলাসা করেছে। তারা বলছে য়ে, ফেসবুক এবং মিশর সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনাকালে দুজনই সরাসরি যুক্ত ছিল।
এ মুহূর্তের প্রতিবেদনগুলোতে তাদের বিবৃতি তুলে ধরে বলা হচ্ছে, সোশ্যাল জায়ান্ট ফ্রি বেসিক ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহারকারীদের উপর মিশর সরকারকে নজরদারির ক্ষমতা দিতে রাজি না হওয়ায় দেশটিতে সেবাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
দেশটির স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে করে গত অক্টোবরে ফ্রি বেসিকস সার্ভিস চালু করে ফেসবুক। যেটি কমদামের কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোনে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরিতে সমর্থন করে। এছাড়া বিনাখরচে কিছু সংখ্যক ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করা যায়।
এরপর সরকার ৩০ ডিসেম্বর সাময়িকভাবে সেবাটি বন্ধ করে দেয় এবং মোবাইল ক্যারিয়ার ইথিসালাত‘কে দুইমাসের জন্য ফ্রি বেসিক সার্ভিস চালানোর অনুমতি প্রদান করে।
যদিও সুত্র সুস্পষ্টকরে বলেনি, মিশর সরকারের কি ধরনের প্রবেশাধিকারের চাওয়া ছিল বা ফেসবুককে কি নীতিমালার কথা বলেছিল।
এ বিষয়ে ফেসবুক মুখপাত্রও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এবং ইথিসালাতও অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।
সেইসাথে মিশরের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহামাদ হানিফও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তবে নজরদারির চাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তার অন্যান্য কারণ তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সেবাটি গ্রাহকদের বিনামূল্যে ব্যবহারের অফার দেয়া হয়েছিল। তবে জাতীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী পর্যবেক্ষণে দেখেছে সেবাটি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতিকারক এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীদের জন্যও।
ফেসবুকের এ সেবাটি বিশ্বের ৩৭টি দেশে রয়েছে, যেখানে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবা ব্যতীত বিপুল সংখ্যক মানুষ আছে।
বলা হচ্ছে, এটা ফেসবুকের গ্লোবাল স্ট্রেটিজি। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে ফ্রি বেসিকস ভার্সনে বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করেনা। কিন্তু তাদের লক্ষ্য বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীকে তাদের আওতায় আনা।
ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, সেবাটি বন্ধের আগে ৩ মিলিয়নের অধিক মিশরীয় এটা ব্যবহার করেছে। যার মধ্যে ১ মিলিয়ন ব্যবহারকারী কখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। বেসকিস ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ হলেও ফেসবুকের মূল সাইট এবং অ্যাপ এখনও মিশরে প্রাপ্য। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৯০ মিলিয়ন।
ইন্টারনেটের গোপনীয়তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বজনীন এই ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান কম-পরিচিত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে আলাদাভাবে উপস্থাপন করছে। অন্যদিকে নিজেদের নেটওয়ার্কে সরকারের প্রবেশাধিকার প্রত্যাখান করেছে। যার ফলে সেবাটি বন্ধে তারা বাধ্য।
আরো বলা হয়, বিশ্বের সর্বত্র ইন্টারনেটের সাথে যারা সক্রিয় সেখানে ফ্রি বেসিকস শুরু হয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভারত। কিন্তু এটা নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট এবং অনলাইন ব্যবসায় ফ্রি প্রবেশে সমর্থন দেয় যা নেট নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনীয় এবং অন্যদের জন্য অসুবিধাজনক।
এর আগে ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী নতুন নিয়ম জারি করায় কার্যকরভাবে বন্ধ হয় ফ্রি বেসিকস।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এসজেডএম