সম্প্রতি ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ বা আইসিএক্সগুলোকে নতুন এক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে আন্তঃক্যারিয়ার ভয়েস কলের পাশাপাশি আন্তঃঅপারেটর এবং গ্লোবাল (আইজিডব্লিউর মাধ্যমে আগত) এসএমএস আদান প্রদানের ব্যাপারটিও তাদের নজরদারির আওতায় আনতে হবে।
আন্তঃঅপারেটর এসএমএস রাউটিংয়ের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস'র পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়েও খতির সম্ভাবনা রয়েছে, আর নিরাপত্তা ঝুঁকি তো আছেই।
যে কারণে বিটিআরসি সর্বশেষ এই নির্দেশনা দিয়েছে। এর ফলে এসএমএস আদান প্রদানে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস'র প্রবণতা কমবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, দেশের ২৬টি আইসিএক্স অপারেটর ভয়েস গেটওয়ের পাশাপাশি স্বতন্ত্র এসএমএস গেটওয়ে হিসেবেও কাজ করবে।
এতে করে শুধু এসএমএস লেনদেন নিরাপদ হবে তা নয়, ব্যবসায়িক প্রচারণার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
অভার দ্য টপ (ওটিটি) ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপসের যুগে এসএমএস কতটা নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে এ নিয়েও অনেকের মনে অনেক প্রশ্নই উঠতে পারে।
তাই সংস্থাটি এও বলছে যে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য ওটিএম ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপগুলো দারুণ কার্যকর। তবে এসএমএস যতটা নির্ভরযোগ্য, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ততটা নয়।
“হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার” এর মতো অ্যাপ বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির বাইরে থেকে কাজ করে। তাছাড়া দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, সেখানে ওটিটি আইএম সাধারণ ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য তেমন কার্যকরী মাধ্যম নয়।
সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর হলো ট্রেডিশনাল এসএমএস।
নির্দেশনা দেয়ার অন্য উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮১ শতাংশই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। তাই খুব কম খরচে কোনো প্রচারণা চালানোর জন্য কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এসএমএস-ই আদর্শ মাধ্যম। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও যেকোনো সময় নিরাপত্তার খাতিরে এখানে নজরদারি করতে পারে।
এসব সুবিধার কারণে আন্তঃঅপারেটর এসএমএস বিভিন্ন কাজে যেমন “পেমেন্ট কনফার্মেশন, ট্রানজেকশন নোটিফিকেশন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট রিমাইন্ডার, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপডেট, মোবাইল টিকেট, ফ্লাইট বুকিং” এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দের শীর্ষে।
এ ছাড়া টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনে ভয়েস কলের তুলনায় এসএমএস খুব সহজেই কাজ করে। বাংলাদেশের যেসব ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে, তাদের জন্য এটি একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়।
বিভিন্ন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপও টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের জন্য এসএমএস ব্যবহার করে থাকে।
এশিয়ার আন্তঃঅপারেটর এবং ওটিটি মেসেজিং মার্কেট নিয়ে কাজ করেন মাহবুব মতিন। এ বিষয়ে বলেন, 'যদিও অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোতে ওটিটি মেসেজিংয়ের ব্যবহার বাড়ছে, তবুও প্রচলিত এসএমএস বিশেষকরে এটুপি মেসেজিং ব্যবসা খাতে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
তিনি আরো মনে করেন, এর উপযোগী হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের গুচ্ছ তৈরি করে তারপর কাজ করা সবচেয়ে ভাল।
ক্রসওয়ার্ল্ড টেলিকম, দেশের শীর্ষস্থানীয় আইসিএক্স ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানটি এ খাতে সেরা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এসএমএসকে অনেকেই পুরনো ধাঁচের যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের জন্য এসএমএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ইউজার এনগেজমেন্ট বেশি এবং টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনে ব্যবহারের সুবিধা থাকায় খুব শীঘ্রই এসএমএস বাজার থেকে হারিয়ে যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
এসজেডএম