ঢাকা: প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখ হিসেবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সব মোবাইল সিম নিবন্ধন শেষ করতে চায় সরকার। চার মাসে সাড়ে ছয় কোটি সিম নিবন্ধিত হলেও বাকি ১০ দিনে সমপরিমাণ সিম নিবন্ধন করতে চায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে অবৈধকাজে ব্যবহৃত সিমগুলো ঝরে পড়ে যাবে বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
মোবাইল সিমের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আঙুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
গত বছরের ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃনিবন্ধনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন। ওইদিন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এ কার্যক্রম শুরু করে।
এরপর প্রতিমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর বিটিআরসি’তে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এ পদ্ধতিতে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ ও পরে তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হবে- এমন অভিযোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট এবং সরকারকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত আঙুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন-পুনঃনিবন্ধন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
তারানা হালিম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৩৫ লাখ সিম নিবন্ধিত হলেও এ সপ্তাহে তা ৫৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। এটা আরও বাড়বে।
সরকারের সময়সীমা অনুযায়ী, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিম নিবন্ধন শেষ করার কথা। অন্যথায় সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, যারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম ভেরিফিকেশন করেননি ১ মে থেকে তাদের সিম স্বল্প সময়ের জন্য ডিঅ্যাক্টিভ করে ইঙ্গিত দেবো। পর্যায়ক্রমে এ সময় (ডিঅ্যাক্টিভ) বৃদ্ধি পাবে এবং এক পর্যায়ে সিমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পুনঃনিবন্ধন করার জন্য প্রথমে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখার বার্তাই যথেষ্ট। তারপরও যদি না বুঝতে পারেন বা ভেরিফিকেশন না করেন কিছুদিন পর আবারও বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হবে। এভাবে ইঙ্গিত দিয়ে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে তখন সিম পুনরায় চালু করা যাবে না।
বায়োমেট্রিক চালুর পর গত তিন মাসে গ্রাহক কমেছে ২৮ লাখ।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু সিম আছে, যেগুলো অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো এ প্রক্রিয়ায় ঝরে পড়ে যাবে।
সাড়ে চার মাস সময় দেওয়ার পরও সিম নিবন্ধনের জন্য অনির্ধারিত সময় দিয়ে রাখতে পারি না বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসি’র সর্বশেষ মার্চের হিসেবে ছয়টি অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার।
গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৬ কোটি ৩৫ লাখ সিম নিবন্ধিত হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসি’র হিসাবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এয়ারটেলের সিম পুনঃনিবন্ধিত হয়েছে ৩৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৬, বাংলালিংকের ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৬, সিটিসেলের ৪৫ হাজার ২১, গ্রামীণফোনের ৩ কোটি ২৩ লাখ চার হাজার ১০৯, রবি’র ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৬, টেলিটক ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৩টি।
তারানা হালিম জানান, বিভিন্ন অপারেটরের কাছে এক লাখ বায়োমেট্রিক ডিভাইস আছে। বাকি দিনগুলোতে ন্যূনতম প্রতি ডিভাইসে ৫০টি সিমও করা যায় তাহলে প্রতিদিন ৫০ লাখ নিবন্ধন করা সম্ভব।
টার্গেট ফুলফিল করতে সক্ষম হবো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।
তবে এ সময়ের মধ্যে সবগুলো সিম নিবন্ধিত হবে কি না- সে বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাহকদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে সময়মত তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস