ঢাকা: সুলভ মূল্যে সবার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে বিদ্যমান কর কাঠামোর সংস্কারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
সেমিনারের আয়োজন করে টেলিকম বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ’(টিআরএনবি)।
তারানা হালিম বলেন, চিঠিতে দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে হ্যান্ডসেট তৈরির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি এবং তা অনেকটা বাস্তায়নের পথে। তার প্রদান উপকরণ হচ্ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং নেটওয়ার্ক। এ দু’টির সুন্দর সমন্বয় ঘটিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ই-কমার্স, ই-গর্ভনেন্স, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কৃষি সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন করছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের মার্কেট বড়, ক্রমান্বয়ে হ্যান্ডসেটের প্যানিট্রেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। ৯৫ ভাগ মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এই প্যানিট্রেশন আরও বাড়াতে চাই, প্রত্যেকের হাতে স্বপ্লমূল্যে হ্যান্ডসেট পৌঁছে দিতে চাই। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন দেখলাম হ্যান্ডসেট সুলভ মূল্যে পৌঁছে দিতে চাই তখন আমার কাছে প্রথমেই মনে হয়েছে, কেন আমাদের দেশে উৎপাদন করতে পারবো না? যখন আমরা উৎপাদন করতে পারবো তখন অবশ্যই হ্যান্ডসেটের দাম কম হবে এবং গ্রামের মানুষের হাতে সুলভে পৌঁছে দেবো। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমদানি করলে দাম কমে, আর দেশিয় কারখানায় নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে সমস্ত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার তৈরি করে উৎপাদনে গেলে দাম বেশি পড়ছে। ’
এই বাস্তবতার পর দু’দিন আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুগ্রহ করে বাজেট অধিবেশনের আগে এই বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। ভ্যাট আরোপোর মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটগুলো প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। সেই ব্যারিয়ারগুলো তুলে দিতে হবে।
ভ্যাট-ট্যাক্স মিলে হ্যান্ডসেট আমদানিতে ২৫ শতাংশ এবং যন্ত্রাংশে ৩৭ শতাংশ খরচ পড়ে জানিয়ে বাধা তুলে দেওয়ার দাবি জানান আমদানিকারকরা।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, স্মার্টফোন যতো তাড়াতাড়ি মানুষের হাতে পৌঁছাবে, ততো তাড়াতাড়ি ডাটা ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। ট্যাক্স ও ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। হ্যান্ডসেট তৈরি করে মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলেই রাজস্ব অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে দেশের বাজারে ১০৮ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৯০ ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট আমদানির অনুমতি রয়েছে বলে জানান বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
আর অবৈধভাবে প্রায় ৫০ শতাংশ হ্যান্ডসেট দেশে প্রবেশ করে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে কাস্টম এবং অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-র প্রতিনিধি মাহমুদ হোসেন জানান, ফোরজি’র কথা চিন্তা করা হলেও দেশে বর্তমানে দুই দশমিক ৬ শতাংশ হ্যান্ডসেটে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা আছে।
বিদেশের মতো অপারেটরদের মাধ্যমে গ্রাহকদের হাতে কিস্তিতে হ্যান্ডসেট তুলে দিতে পারলে সেগুলোর দাম ২০/২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান মাহমুদ হোসেন।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান, বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) নাসিম পারভেজ, ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার লুৎফর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারক সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব মানিক, সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ানুল হক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/বিএস