ঢাকা: ‘তোমরা কতোজন জীবনে কম্পিউটার বা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেছো’- ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হলভর্তি প্রায় সব শিক্ষার্থী এ প্রশ্নের উত্তরে হাত তুলে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
‘১৯৯১ সালে যখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন কম্পিউটার হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি।
‘কম্পিউটারে কী কী করা যায়, জীবনে কেন প্রয়োজন?’- প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্নে একজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়, ‘ডাটা প্রক্রিয়াকরণ, স্মৃতি রেখে দিতে পারি’।
‘আরও অনেক কাজ- কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে জীবনের জন্য অনেক কাজ সহজে করতে পারি। একটা বিমানকে মাটিতে বসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এখন এ রকমও সম্ভব হয়েছে যে, বিমানে পাইলট নাই। কিন্তু প্রোগ্রামিং করে মাটিতে বসে নিয়ন্ত্রণ করছি। কম্পিউটার তো শুধু ডেস্কটপ না, অনেক ধরনের আছে। নাসা থেকে কিউরিসিটির ওপর যে ছবিগুলো পাঠায়, এতোদূর থেকে ছবি দেখতে পাই কম্পিউটারের জন্য। মঙ্গল ও চাঁদের ছবি দেখতে পারছি। গুগল আর্থে পৃথিবীকে দেখতে পারিছি...’- বলেই যাচ্ছিল ওই শিক্ষার্থী পাবনা জিলা স্কুলের ছাত্র আব্দুল আহাদ।
আব্দুল আহাদকে থামিয়ে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘তুমি থামবে না বুঝতে পারছি’।
এ সময় হাসি আর করতালিতে ভরে যায় রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তন।
তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা তরুণ প্রজন্মের ওপর নির্ভরতার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘আমার যখন যে বিষয়ে কনফিউশন থাকে, জ্ঞানের ঘাটতি থাকলে আর গুগল সার্চ দিতে হয় না। তরুণ প্রজন্মকে সার্চ দেই, সব ইনফরেমেশন পেয়ে যাই। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এতোখানি জ্ঞানসমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠছে’।
দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের উপযোগিতা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে কম্পিউটার। ডাটা এন্ট্রি, এনালাইসিস, তথ্য আদান-প্রদান, ই-মেইল, স্কাইপিতে ভিডিও কনফারেন্স- এতো সব কীভাবে কাজ করছে কম্পিউটার?’
এ সময় পেছনের সারির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘জিরো ওয়ান’। একই সময় সামনেও হাত তোলে একজন।
প্রতিমন্ত্রী সামনের সারির ওই শিক্ষার্থীর কাছে শোনেন- ‘কম্পিউটারে সাধারণত চারটি অংশ থাকে- ইনপুট, প্রসেসিং, আউটপুট...। যখন কোনো কাজ করবো, তা প্রসেসিং হয়ে বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ফলাফল পাই’।
এরপর প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জিরো ওয়ান’ কোথায় গেল?’ পেছনের সারির ওই শিক্ষার্থীকে পলক বলেন, ‘ওখান থেকে খালি গলায় বলবে’। ওই শিক্ষার্থী জানায়, ‘কম্পিউটার বাইনারি কোডে কাজ করে’।
এই বাইনারি কোড নিজেরও অজানা ছিল জানিয়ে পলক বলেন, ‘বাইনারি কোড ০১০১০১-এটা আমিও জানতাম না। কোডার্স উইকে আওয়ার অব কোডের দাওয়াতে গিয়ে দেখলাম, সবাই কোডিং করছেন। ইউটিউবে দেখলাম, বারাক ওবামাও কোডিং করছেন। আমি খুব লজ্জা পেলাম, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এতো ব্যস্ত মানুষ, তিনিও কোডিং করার সময় পান। আর আমি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী- কোডিং পারবো না! খুব কষ্ট করে কোডিং শিখলাম। কোডিং করে ০১০১ দিয়ে লিখলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ’।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কম্পিউটারের নিজস্ব একটা ভাষা আছে এবং ওই ভাষা ছাড়া বোঝে না। কম্পিউটার যেভাবে কাজ করে, সেই প্রোগ্রামিং শেখা খুবই দরকার, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রোগামারদের দরকার আছে। এখন শুধু কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যারা পড়ে, শুধু তাদের জন্য নয়, সব পেশার জন্য কম্পিউটার দরকার। সেজন্য এই প্রোগ্রামিংয়ের আয়োজন’।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সহায়তায় সারা দেশ থেকে দু্ই লাখ শিক্ষার্থী এ আয়োজনে সংযুক্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আমাদের মেধাবী নতুন প্রজন্ম ভবিষ্যত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে’।
রবির সিইও সুপুন বীরাসিংহে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
খামারবাড়িতে আঞ্চলিক পর্যায়ের কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ী ৯৬৮ জন এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ী ৩১৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে বলে জানান আয়োজকরা।
কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, প্রশ্নোত্তর পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং দুপুরে সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী পলক ছাড়াও আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহম্মদ কায়কোবাদ, রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ, আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিচারক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর