ঢাকা: সাড়ে চার মাসে নয় কোটি সিম ও রিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃনিবন্ধন হলেও প্রায় চার কোটি সংযোগ নিবন্ধন বাকি থাকায় এই কার্যক্রমের জন্য একমাস সময় বাড়ালো সরকার।
আগামী ৩১ মে পর্যন্ত গ্রাহকরা সিম পুনঃনিবন্ধনের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
পূর্ব নির্ধারিত সময়ের শেষ দিন শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
‘আমরা গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সিম পুনঃনিবন্ধনের জন্য আগামী ৩১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। ’
অনিবিন্ধিত সিমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারানা বলেন, রাত ১২টার (৩০ এপ্রিল) পর যে সিমগুলো রি-ভেরিফিকেশন হয়নি বা যারা রি-ভেরিফিকেশনের জন্য চেষ্টাও করেনি, এ ধরনের সিমগুলো সরাসরি ডি-অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে এবং আমরা পুনরায় কোনো রকম বার্তা দেবো না বা কিছু সময়ের জন্য ডি-অ্যাক্টিভ থাকবে না। ৩১ মে রাত ১২টার পরে সিমগুলো সাময়িক নয়, সম্পূর্ণভাবে ডি-অ্যাক্টিভ করে দেবো।
‘আর যেসব সিম অনিবন্ধিত সেগুলো ১ মে থেকে র্যানডমলি প্রতীকী হিসেবে কিছু সিম তিন ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেবো। ’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ৩০ মে রাত ১২টা পর্যন্ত সময়সীমা বর্ধিত করার কথা বললেও ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি পরিস্কার করে দিয়ে ৩১ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল সিমের মালিকানা নিশ্চিত এবং সিমের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপিসহ হয়রানি রোধে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন শুরু করে সরকার।
ওই দিন থেকে পুরনো সিমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পুনঃনিবন্ধনের পাশাপাশি নতুন সিমের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
শেষ দিন সকাল পর্যন্ত মোট ৮ কোটি ৯০ লাখ সিম পুনঃনিবন্ধিত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিকেল পর্যন্ত এ সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি।
তারানা হালিম বলেন, কোনো প্রবাসী বাংলাদেশির ব্যবহৃত সিম ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে গেলে তা রি-অ্যাকটিভ করতে ১৫ মাস পাবেন।
প্রবাসী বিশেষ করে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরতদের সুবিধার জন্য ১ জুন থেকে পরবর্তী ১৫ মাসের জন্য ডি-অ্যাক্টিভ সিমগুলোর বিক্রি স্থগিত থাকবে।
প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য তারানা হালিম ঘোষণা দেন, যাদের হাত নেই, যারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না, আমরা বলেছিলাম কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
অন্য সিমগুলো কিছু সময়ের জন্য ১ জুন থেকে বন্ধ হলেও ১৫ লাখ প্রতিবন্ধীর এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করে তাদের সিমগুলো বন্ধ করা হবে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
৩১ মে পর্যন্ত প্রতি শনিবার এনআইডি কার্যালয়, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার খোলা থাকবে এবং সকালে নির্ধারিত সময়ে কয়েক ঘণ্টা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
‘তারা রিপোর্ট করেছেন, তাদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হয়নি, এজন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত বোধ করেছি। দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের সমান অধিকার আছে। প্রতিটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে দুজন ব্যক্তি তাদের অভ্যর্থনা জানাবে এবং নিবন্ধনের কাজ শেষ করবেন। ’
‘যারা ঘর থেকে বের হতে পারেনি বা যারা বয়স্ক তাদের আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি তারা এনআইডি অফিসে ফোন করে ডিভাইস নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন করিয়ে আনবেন। ’
‘যাদের মিস ম্যাচ হয়েছে তাদের সিম বন্ধ হবে না’ জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, তারা এনআইডি’র প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ ঠিক করে সেখানে নিবন্ধন করবেন।
এনআইডির বিকল্প হিসেবে অন্যান্য পরিচয়পত্র দিয়ে প্রায় দেড় লাখ সিম পুনঃনিবন্ধন করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৫ মের পর তাদের এনআইডিও জমা দিতে হবে।
বিশাল এই কর্মযজ্ঞ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বিটিআরসি রাত দিন চেষ্টা করেছে। ১ লাখ ২০ হাজার রিটেইলারদের কাজ ঠিকমত করার জন্য ১১৫ জনের টিম প্রতিদিন বায়োমেট্রিক পয়েন্ট ভিজিট করেছেন।
শেষ দিন সকাল থেকে সারা দেশে বায়োমেট্রিক পয়েন্টগুলোতে রোদের মধ্যেও গ্রাহকদের প্রচণ্ড ভিড় ছিলো।
বাংলাদেশই প্রথম দেশ যেখানে সাড়ে চার মাসে ৯ কোটি সিম পুনঃনিবন্ধিত হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, যারা কষ্ট করে দাবদাহের মধ্যে রি-ভেরিফিকেশন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অপারেটরদেরও ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসির সর্বশেষ মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী, দেশে ৬টি অপারেটরের ১৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ জন মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছেন। ৩১ মের পর সিম পুনঃনিবন্ধনের সংখ্যা জানিয়ে দেওয়া হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শওকত মোস্তফা, বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলমসহ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
**সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় বাড়ছে!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬, আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমএ