ঢাকা: ডিজিটাল যাত্রার ঘোষণা দিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে ৩ কোটি ১৬ লাখ গ্রাহক নিয়ে অপারেটরটির রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
সোমবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অপারেটরটি এ তথ্য জানায়।
বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এরিক অস্ আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল যাত্রায় নতুন আঙ্গিকে ব্যবসা পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিলেন এরিক অস্।
সে ঘোষণার তিন মাস পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে এরিক অস্ বলেন, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ডাটা রাজস্বে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ভয়েস রাজস্বে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রাজস্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে। ডাটা ব্যবহার এবং ডাটা ব্যবহারকারী বৃদ্ধির ফলে ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলালিংকের ডাটা রাজস্ব আয় বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিজিটাল কমিউনিকেশন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক তার গ্রাহকদের ভবিষ্যতের ডিজিটাল দুনিয়ায় সংযুক্ত এবং গ্রাহকদের জন্য অসীম সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে চায়। এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলালিংক ডিজিটাল যুগের গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে নিজেকে প্রস্তুত করছে।
এরিক অস্ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ডিজিটাল সেবাদানই ভবিষ্যতের পথ।
বাংলালিংক আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও প্রযুক্তি কোম্পানি ভিম্পেলকম’র একটি অংশ, যা বিশ্বের ১৪টি দেশের গ্রাহকদের ডিজিটাল বিশ্বে নিয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলালিংকের দেশব্যাপী থ্রিজি কাভারেজ বৃদ্ধি এবং একইসঙ্গে দেশের টেলিকম শিল্পে স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে অপরেটরটির ডাটা ব্যবসায় একটি বড় অগ্রগতি দেখা গেছে। গ্রাহকদের বর্ধিত ব্যবহারের ফলে বাংলালিংকের ভয়েস রাজস্ব আয় বেড়েছে।
আগ্রাসী মূল্য প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও এ প্রান্তিকে বাংলালিংকের এআরপিইউ (এভারেজ রেভিনিউ পার ইউজার) ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডাটা ব্যবহারের অব্যাহত বৃদ্ধির মাধ্যমেই এসেছে।
বয়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন পদ্ধতির কারণে গোটা টেলিকম শিল্পেই গ্রাহক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে এবং ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যার প্রবৃদ্ধি সামান্য হ্রাস পেয়েছে।
এরিক অস্ বলেন, মোবাইল নিরাপত্তার এ উদ্যোগে বাংলালিংক ১৫ মে পর্যন্ত আড়াই কোটি গ্রাহকের বয়োমেট্রিক রি-ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
‘বাংলালিংক বিশ্বাস করে যে, মোবাইল রি-ভেরিফিকেশন উদ্যোগের ফলে নিরাপদ গ্রাহকের যে ভিত্তি পাওয়া যাবে যেখান থেকে আমাদের ডিজিটাল নেতৃত্ব অর্জনের কৌশল অনুসরণ করে ই-কমার্স, কনটেন্ট ও পেমেন্ট সলিউশন থেকে নতুন রাজস্ব আয়ের উৎস সৃষ্টি করা যাবে। ’
এককালীন কিছু পারফরম্যান্স ট্রান্সফরমেশন ব্যয় ছাড়া বাংলালিংক প্রথম প্রান্তিকে ৫৯০ কোটি টাকার ইবিআইটিডিএ (অপারেটিং প্রফিট ও অন্যান্য আইটেমের আগে) অর্জন করেছে, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি নির্র্দেশ করে। এ বৃদ্ধি রাজস্ব বৃদ্ধির এবং একইসঙ্গে ওপেক্সে নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ মূলত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। ফলস্বরূপ এ প্রান্তিকে বাংলালিংকের ইবিআইটিডিএ মার্জিন ৪৮ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রথম প্রান্তিকে বাংলালিংকের মূলধনী ব্যয় ছিল ১৩০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। প্রথম প্রান্তিকের শেষ পর্যন্ত বাংলালিংকের থ্রিজি নেটওয়ার্ক দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে।
বাংলালিংক সম্প্রতি স্বল্পমূল্যে গ্রাহকদের জন্য স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসেছে।
এরিক অস্ বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার দারুণ বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রাহকরা সত্যিকারভাবেই তাদের আঙুলের ডগায় ডিজিটাল জীবনকে পাবেন, যাতে থাকবে বিনোদন থেকে ই-কমার্স, আর্থিক সেবা থেকে ব্যক্তিগত সেবা। আমাদের গ্রাহকদের জন্য এটি বাস্তব করতে বাংলালিংকে আমরা আমাদের সেবা ও পণ্যের পাশাপাশি থ্রিজি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছি।
আগামী জুনের মধ্যে ৬০ শতাংশ টু-জি সাইট থ্রিজিতে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথাও জানান এরিক।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় বাংলালিংক ‘কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ডিজিটাল ইনকিউবেশন কেন্দ্র শুরু করেছে যা, দেশব্যাপী উদ্ভাবনী ব্যবসাগুলোকে সফল হতে সব রকম সহযোগিতা করবে।
২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বাংলালিংক’র গ্র্যান্ডমাস্টার আইডিয়া প্রতিযোগিতায় তাদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের আইডিয়া জমা দেন, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেকটি উদ্যোগে, বাংলালিংক ইন্টারনেট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইনে ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
এরিক অস্ বলেন, বাংলালিংকের এ ডিজিটাল অগ্রযাত্রার মধ্যে কোম্পানির অগ্রগতি জানাতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, আমরা গ্রাহকদের ডিজিটাল সেবাদানকারী হিসেবে শেয়াহোল্ডারদের কাছে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে বাংলালিংককে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।
বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমেদ এবং কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬/আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা
এমআইএইচ/জেডএস