ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিস্তার ও সহজলভ্য শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সব ধরনের তথ্যাদি আদান-প্রদানে অভাবনীয় গতি এসেছে। তবে প্রযুক্তিগত এ উৎকর্ষতা বিস্তারের ফলে ইন্টারনেট মানুষকে একদিকে যেমন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, অন্যদিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রমসহ প্রতারণামূলক অপরাধ পরিচালনার ক্ষেত্রেও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এসব অপরাধ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সরকার ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন(বিটিআরসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক রফিকুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো অপরাধী ইন্টারনেট ব্যবহার করে যাতে করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা না করতে পারে, সে লক্ষ্যে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন’ স্থাপন করা হবে। মোবাইল হ্যাকিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। কারণ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জরুরি। এ পরিবেশ আনতে হলে ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করছে। এটি নির্মূলে সব ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশের জন্য অনুপযোগী কনটেন্টগুলো অপসারণ করা হবে। সরকার নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশে প্রতিরোধক ব্যবস্থাও করা হবে। চিহ্নিত অপরাধীদের ইন্টারনেটে গতিবিধি মনিটরিং করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অপরাধীরা। এসব নিয়ন্ত্রণেও ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন ও রেসপন্স’ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধিদফতর ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই সারা দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বিটিসিএল সূত্র জানায়, ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহার করে পর্ণোগ্রাফি ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রদর্শন করে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এসব কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছে। নানা কারণে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানায় বিটিআরসি।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীলতার জন্য ইন্টারনেট ও অন্যান্য টেলিযোগাযোগ অপব্যবহার রোধ জরুরি।
এ লক্ষ্যে সোমবার (১৬ মে) পরিকল্পনা কমিশনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির(পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতিবাচক আলাপ আলোচনা হয়েছে। এমন একটি প্রকল্প যথাযতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে নিরাপদ ইন্টারনেটের প্লাটফর্ম পাবো। দেশের সমস্ত মানুষ কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হবেন’।
‘বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হলে সাইবার অপরাধ রোধ করতে হবে’।
তিনি জানান, দেশের সাইবার খাতের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে সব ধরনের সাইবার ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর (ইউআরএল) ওয়েবপেইজ, আইপি আইড্রেস ব্লক করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। মোবাইল অপারেটরদের পরিচিতি যথাযথভাবে ট্র্যাকিংয়ের জন্য নানা যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর