ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সরকারি ওয়েবসাইটের চাপ নেওয়ার সক্ষমতা কম

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
সরকারি ওয়েবসাইটের চাপ নেওয়ার সক্ষমতা কম

ঢাকা: প্রশাসনে পদোন্নতির খবরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বার বার লগইন করার চেষ্টা করছিলেন একজন সিনিয়র সহকারী সচিব। অনেকবার চেষ্টা করেও ওয়েবসাইটের মূল পাতাটিই আসছিল না।

এদিক-ওদিক ফোন করে সহকর্মীদের কাছে পদোন্নতির খবর শুনছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়। আর এ তালিকা জানার জন্য উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকতারাও তাৎক্ষণিক লগইন করতে পারেননি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট।

গত ১৫ মে যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে ১৪৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের একই হাল হয়েছিল। সেইদিন অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পান ৮৫ যুগ্ম-সচিব। পদোন্নতির খবরে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা লগইন করতেই আর লোড নিতে পারছিল না জনপ্রশাসনের ওয়েবসাইট।

শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট নয়, বড় কোনো নিয়োগের ফল বা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলোতে তাৎক্ষণিক প্রবেশ করা দুরূহ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বাংলানিউজকে বলেন, একসঙ্গে অধিক সংখ্যক লগইনের চেষ্টার কারণে সেই ওয়েবসাইটের ক্যাপাসিটি না থাকায় লগইন করা যায় না।

সুবিধামতো সার্ভার ভাগাভাগি করলে এ সমস্যা লাঘব হবে জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এজন্য সবচেয়ে জরুরি সমন্বয়।

কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪০ এমবিপিএস (প্রতি সেকেন্ডে মেগাবাইট), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০ এমবিপিএস, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৮ এমবিপিএস, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ছাড়াও এসব মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি ওয়াইফাই দিয়েও ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোছলেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বড় পদোন্নতির মতো বিশেষ দিনগুলোতে ওয়েবসাইটে চাপ বাড়ে। ওই সময় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এর সমাধান নেই বলে দাবি করেন তিনি।

একসঙ্গে সবাই লগইন করায় তারা নিজেরাও কাজ করতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সময় লগইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষ দিনগুলোতে এমবিপিএস বাড়ানো হলে এর সমাধান হতে পারে, তবে সেটা করা হয় না।

তবে সার্ভার ভাগাভাগি বা এমবিপিএস বাড়ালে সেই সমস্যা হবে না বলে মনে করেন আইটি বিশেষজ্ঞরা।

উদাহরণ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল এখন ওয়েবসাইটে বিভাগভিত্তিক দেওয়ায় একটি সার্ভারে চাপ কমে।

অর্থাৎ একজন প্রার্থী আগের বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে লগইন করে সেখানে বিভাগ সিলেক্ট করে রোল নম্বর দিয়ে ক্লিক করলে ফল পেয়েছেন। আগে যেখানে বিভাগের অপশন ছিল না।

প্রাথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামার সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিভাগভিত্তিক অপশন দেওয়ার কারণে এবার ঝামেলাহীন ফল দেখতে পেয়েছেন প্রার্থীরা। ভবিষ্যতে হয়তো জেলাভিত্তিক অপশন দিলে আরও সহজ হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

তবে এমবিপিএস বা ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের উদাহরণ দিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কী রকম হিট হবে সেগুলো দেখে ওয়েবসাইটগুলো কনফিগার করা দরকার।

বোর্ডের ফলাফলের সময় মাত্রাতিরিক্ত হিট হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওই বিশেষ সময়গুলোতে সার্ভার পরিবর্তন করা দরকার।

এসবের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার।  

তিনি বলেন, বিশেষ সময়গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যান্ডউইথ রাখা প্রয়োজন। যে পরিমাণ হিট হয় সে তুলনায় ব্যান্ডউইথ না থাকায় সমস্যাটি তৈরি হয়। এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সরকারি দপ্তরগুলোতে বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে জানিয়ে ড. কায়কোবাদ বলেন, তরুণ বিশেষজ্ঞদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে আমাদের নিজস্ব মেধার ব্যবহার ও অভিজ্ঞতা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।