ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

এক নম্বরে অন্য অপারেটরের সেবার নিলাম প্রক্রিয়‍া শুরু ১৬ জুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
এক নম্বরে অন্য অপারেটরের সেবার নিলাম প্রক্রিয়‍া শুরু ১৬ জুন

ঢাকা: প্রাথমিকভাবে ১৫ বছর লাইসেন্সের মেয়াদ রেখে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অন্য অপারেটরের সেবা উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
 
বহুল প্রতিক্ষিত এ সেবার নিলামের জন্য আবেদন গ্রহণ আগামী ১৬ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ জুন।

আর নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর।
 
চলতি বছরের শেষে গ্রাহকরা এমএনপি সেবা পাওয়া শুরু করবেন বলে আশা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। গ্রাহকরা ৩০ টাকা চার্জ দিয়ে অপারেটর বদল করতে পারবেন, তবে ৯০ দিনের আগে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন না।
 
এমএনপি সেবার রোডম্যাপ ঘোষণা উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ জুন) রমনায় বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থার চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
 
নিলামে বাংলাদেশ কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমএনপি সেবার জন্য সরকার একটি অপারেটরকে লাইসেন্স প্রদান করবে।  
 
গত ২ ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর স্বচ্ছতা আনতে নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন শেষে নিলাম প্রক্রিয়ায় এলো বিটিআরসি।
 
গত বছরের মাঝামাঝি নীতিমালা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গত সপ্তাহে অনুমোদন পেয়েছি।
 
বিটিআরসি চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে লাইসেন্সের ফি, লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা এবং নেটওয়ার্ক রোল আউট তুলে ধরেন।
 
ফি ও চার্জ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিড আর্নেস্ট মানির পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। লাইসেন্স ফি নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হলেও ভিত্তি মূল্য হবে ১ কোটি টাকা।
 
লাইসেন্সধারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বাৎসরিক ফি প্রদান করতে হবে ২০ লাখ টাকা। রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ প্রথম বছর কোনো ফি না দিলেও দ্বিতীয় বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ প্রদান করতে হবে। ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ দিতে হবে ১ কোটি টাকা।
 
আর গ্রাহককে প্রতিবার পোর্টিং চার্জ দিতে হবে ৩০ টাকা, যা রিসিপেন্ট অপারেটর এমএনপি অপারেটরকে প্রদান করবে। পোর্টিং সময় হবে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা। অর্থাৎ গ্রাহক এই সময়ের মধ্যে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন।

লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোনো সেলুলার মোবাইল ফোন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান অথবা তাদের মালিকানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমএনপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
 
আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাজে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং এমএনপি সেবায় নূন্যতম ১ কোটি গ্রাহককে সেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।    
 
বাংলাদেশে বসবাসকারী যেকোনো ব্যক্তি বা প্রোপাইটরশিপ বা পার্টনারশিপ কোম্পানি এবং আরজেএসসি’র অন্তর্ভূক্ত যেকোনো কোম্পানি আবেদন করতে পারবে।
 
বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যৌথভাবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এককভাবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
 
বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যৌথ আবেদনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধনের অনুপাত ৫১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
 
প্রবাসী বাংলাদেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারী তাদের মালিকানার অংশ অনুযায়ী সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে হবে, এক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে না।
 
কমিশনের লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে কমিশনের প্রাপ্য বকেয়া রয়েছে, তারা লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবে না।
 
লাইসেন্সের সংখ্যা ও মেয়াদ
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এমএনপি’র জন্য প্রথমত একটি লাইসেন্স প্রদান করা হবে। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও লাইসেন্স ইস্যু করা হতে পারে।
 
প্রাথমিকভাবে লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ১৫ বছর, পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ৫ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।  
 
লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া
কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর ৫ হাজার টাকা পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটসহ নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে। আবেদনগুলো মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই (টেলিকম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা, সংশ্লিষ্ট কাজে কারিগরি জ্ঞান, প্রোজেক্ট বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সঙ্গতি) করবে।
 
নির্বাচিত আবেদনকারীদের নিলামে অংশগ্রহণের জন্য কমিশনের অনুকূলে বিড আর্নেস্ট মানি বাবদ ১০ লাখ টাকার ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার জমা দিতে হবে। কমিশনের বিড আর্নেস্ট মানিগুলোর সঠিকতা যাচাই করে নির্বাচিত আবেদনকারীদের অবগত করা হবে। এরপর কমিশনে নির্ধারিত সময়ে ব্রিটিশ পদ্ধতিতে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং নিলামের দিনেই সর্বোচ্চ নিলামকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের জন্য মনোনীত করা হবে।    
 
নেটওর্য়াক রোল-আউট টার্গেট
দেশের সর্বমোট মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্য থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির পর ১৮০ দিনের মধ্যে ১ শতাংশ, ১ বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ এবং ৫ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ এমএনপি সেবা প্রদান করতে হবে।
 
লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ১৮০ দিনের মধ্যে ১ শতাংশ সেবা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে তাদের জমাকৃত ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে ৫০ শতাংশ কমিশনের অনুকূলে নগদায়ন করা হবে। এছাড়াও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোল-আউট টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে অবশিষ্ট ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নসহ লাইসেন্স বাতিল করা হবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী বিডারকে লাইসেন্স প্রদান করা হবে।  
 
নিলাম রোডম্যাপ
আগামী ১৬ জুন শুরু হয়ে নিলামের জন্য আবেদন করা যাবে ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রাক-দরপত্র সভা অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুলাই। ২১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রশ্ন নিয়ে ১ আগস্টের মধ্যে নিস্পত্তি করবে বিটিআরসি।
 
১১ আগস্ট কমিশনে আবেদন পাঠানোর পর মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৪ আগস্ট। ৩১ আগস্ট বিড আর্নেস্ট মানি জমাদানের পর ৪ সেপ্টেম্বর আবেদন গ্রহণ ও বাতিল ৭ সেপ্টেম্বর নিলাম-বিষয়ক পরামর্শ সভা শেষে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর।    
 
বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬/আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা
এমআইএইচএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।