ঢাকা: দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) রাজস্ব আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নতুন গ্রাহক ও প্রদত্ত সেবা থেকে এ প্রবৃদ্ধিতে ডাটা থেকে আয় রাজস্বে বড় অবদান রয়েছে।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে অপারেটরটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রামীণফোনের সিইও রাজীব শেঠি, সিএফও দিলীপ পাল এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম ছয় মাসে অপারেটরটি রাজস্ব আয় করেছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নতুন গ্রাহক ও প্রদত্ত সেবা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব বেড়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, যাতে ডাটা থেকে আয়কৃত রাজস্বের বড় অবদান আছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ডাটা রাজস্ব বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ডাটার ব্যবহারও বেড়েছে ১৮৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় ভয়েস থেকে অর্জিত রাজস্ব বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে রাজস্ব হয়েছে দুই হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
২০১৬ সালের প্রথমার্ধে গ্রামীণফোনের দুই লাখ নতুন গ্রাহক যোগ হয়ে মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ। গত বছরের তুলনায় এটি ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং এতে সিম মার্কেট শেয়ার হয়েছে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ (মে ২০১৬)।
আর ইন্টারনেট গ্রাহক যোগ হয়েছে ৬১ লাখ। ফলে মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১৮ লাখ।
গ্রামীণফোন অত্যন্ত সফলভাবে ২০১৬ সালের প্রথমার্ধ পার করেছে উল্লেখ করে অপারেটরটির সিইও রাজীব শেঠি বলেন, ‘এ সময় ডাটা গ্রাহক এবং এর ব্যবহার দু’টিই বেড়েছে। আমরা ১০ হাজার থ্রি-জি বিটিএস (নেটওয়ার্ক টাওয়ার) স্থাপন শেষ করেছি এবং এর ফলে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ থ্রি-জির আওতায় এসেছেন’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভয়েস থেকে অর্জিত রাজস্ব এবং মিনিটের ব্যবহার বাড়ছে, যা আগামীতে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে।
গ্রামীণফোনের পাঁচ কোটি ২৬ লাখ গ্রাহক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করেছেন বলেও জানান সিইও রাজীব শেঠি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আয়কর প্রদানের পর ২০১৫ সালের প্রথমার্ধের ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মার্জিনসহ এক হাজার ৫০ কোটি টাকা মুনাফার তুলনায় ২০১৬ সালের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ মার্জিনসহ এক হাজার ৭০ কোটি টাকা। অধিকতর রাজস্ব এবং দক্ষ পরিচালনা ব্যয়ের ফলে ইবিআইটিডিএ (অন্যান্য আইটেমের আগে) ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ মার্জিনসহ তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা। এ সময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭ দশমিক ৯২ টাকা।
গ্রামীণফোনের সিএফও দিলীপ পাল বলেন, ‘২০১৬ সালের প্রথমার্ধে আমরা দুই অংকের গ্রাহক ও ট্রাফিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমাদের সহজ গ্রাহককেন্দ্রিক পণ্য এবং থ্রি-জি সম্প্রসারণে অব্যাহত বিনিয়োগই এ প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। দৃঢ় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষ ব্যয় ইবিআইটিডিএ মার্জিনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। উচ্চতর অবচয় এবং অ্যামোর্টাইজেশন সত্ত্বেও শেয়ারপ্রতি আয় স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, গ্রামীণফোনের বোর্ড অফ ডিরেক্টর পরিশোধিত মূলধনের ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অন্তবর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে’।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে থ্রি-জি বিস্তার, টু-জি বিস্তার ও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গ্রামীণফোন এক হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
দেশের বৃহত্তম করদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন একই সময়ে কর, ভ্যাট, শুল্ক এবং লাইসেন্স ফি আকারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তিন হাজার ৩১০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
গ্রামীণফোনের বোর্ড অব ডিরেক্টরস ২০১৬ সালের ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্ধবছরের অন্তবর্তী নিট মুনাফা এবং ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংরক্ষিত আয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিশোধিত মূলধনের ৮৫ শতাংশ (প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ার এর বিপরীতে ৮ দশমিক ৫০ টাকা) অন্তবর্তী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এই লভ্যাংশ ২০১৬ সালের ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্ধবছরের কর পরবর্তী নিট মুনাফার ১০৭ শতাংশ। এই লভ্যাংশের রেকর্ড ডেট আগামী ৮ আগস্ট। যারা শেয়ারহোল্ডার থাকবেন তাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বেধে দেওয়া সময়ানুযায়ী বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস/এএসআর