ঢাকা: সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের অনলাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সময় দেওয়ার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন সেক্টরের ব্যক্তিরা।
পাশাপাশি সন্তানদের নৈতিক মূল্যবোধ ও পাঠ্যধারায় অনলাইন ব্যবহারের সুফল-কুফল বিষয়গুলো তুলে ধরারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের ‘মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম ও সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংসের সম্মুখীন: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব পরামর্শ দেন বক্তারা।
মানবসম্পদকে যেকোনো দেশের প্রধান সম্পদ উল্লেখ করে র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরোয়ার আলম বলেন, এখন তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি, ২০৩৫ সালের পর ওয়ার্ক ফোস চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তাদেরকে কাজে লাগানোর জন্য পরিবারের প্রতি আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
অনলাইনের বিভিন্ন নেতিবাচক ব্যবহারের ফলে রামুর ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, ঢাকায় প্রতিদিন ৩০টির বেশি ডিভোর্সের আবেদন পড়ছে। জঙ্গি বিষয়গুলো আসছে। চোখের সমস্যা, ব্যাকপেইন হচ্ছে। এগুলো কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে ছেলেগুলো গুলশানের ঘটনা ঘটালো, দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের কী কোন আত্মীয়-স্বজন ছিলেন না। ব্যবস্থা নিয়েছেন, কোথায় পড়লো? কতোদূর এগোলো? কতোগুলো মানুষকে জবাই করে হত্যা করা হলো, এর কোন যৌক্তিকতা? কোথায় পেল এই ইসলাম? এই শিক্ষা কে দিল?- এগুলো নজরদারি করা উচিত। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা উচিত’।
ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক নিয়ে আপনার সন্তানকে অ্যালার্ট করতে পারবেন না। এখন যে অবস্থায় চলে গেছে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পারিবারিক কনফ্লিক্ট সৃষ্টি হবে, সে আপনার কথা শুনবে না। ছেলে-মেয়েকে সময় দিন। যেন কার সঙ্গে কী করছে বুঝতে পারেন। যেন বুঝতে পারে, সব চেয়ে বেটার ফ্রেন্ড হচ্ছে বাচ্চারা’।
মোবাইল-ইন্টারনেটের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেন অপপ্রয়োগ না হয়, সেদিকে জোর দিয়ে এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু বলেন, সন্তানদের মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা জরুরি।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হাসান ইমাম ফিরোজ বলেন, ছেলে-মেয়েদের নৈতিকতা শিক্ষাটা জরুরি। ভার্চুয়াল জগতে বন্ধুত্বের কারণে পরিবারের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন বাড়ানো জরুরি।
শিক্ষার্থীদের হতাশা রোধে বৃত্তি ও চাকরির ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিয়ে মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার আহ্বান জানান।
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে পর্ণোগ্রাফির দিকে চলে যাচ্ছে যুবসমাজ। ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় কাটাচ্ছে। যেটা সম্পদ হওয়ার কথা সেটা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এগুলো দেখা উচিত। এজন্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার একটা বড় বিষয় রেলে কাটা পড়া উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে রেললাইন ধরে হাঁটার কারণে প্রতি বছর তিনশ’ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পুলিশ-র্যাব-সেনাবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। ফুটপাত ধরে হাঁটার সময়ও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। চালক গাড়ি চালানোর সময় কথা বলছেন। এতেও দুর্ঘটনার শিকার হন।
মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের কারণে মেধা হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাতের অফারগুলো বিষ্ময়ের সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগ চাই’।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন ন্যাপ-ভাসানীর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশিদ, ছাত্র পরিষদের নেতা কাজী তৌফিক ইমাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর