গ্রামীণফোন মোবাইলফোন ইন্টারনেটে যে 4G চালুর ঘোষণা দিয়েছে তারই প্রেক্ষিতে পাঠকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো এই মোবাইলফোন অপারেটরের 3G নিয়েই গ্রাহক সাধারণের অভিজ্ঞতা কী। প্রচুর সংখ্যক গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া এসেছে।
এম. মিজানুর রহমান সোহেল একজন টেলিকম বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি লিখেছেন: বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে মাস খানেক আগে যখন গ্রামীণফোন ঘোষণা দিল দেশজুড়ে ১০ হাজারের বেশি বিটিএস (টাওয়ার) থ্রিজিতে রূপান্তরিত হয়েছে তখন অনেক আশা জেগেছিল। ঈদে গ্রামে যাওয়ার পর বুঝলাম এগুলো গালগল্প ছাড়া কিছুই নয়। পাবনা সদর উপজেলার শহরতলীতে ঈদে গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে আমার জীবন নাজেহাল হয়ে ওঠেছিল। কখনও প্রধান সড়কে কখনও বা উঁচু স্থানে গিয়ে আমার নেট ব্যবহার করতে হয়েছে। তারপরেও অনেক স্লো। আসলে ঢাকা-চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ইন্টারনেট সেবার উন্নয়ন ঘটালেই দেশ পরিবর্তন হবে না। সবার জন্য সমান গুরুত্ব দিয়ে থ্রিজি বা ফোরজির সম্প্রসারণ প্রয়োজন। অন্যথায় মানুষ এসব লোভনীয় কথা শুনেও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
এম সানাউল্লাহ নামে একজন লিখেছেন: আমার বাড়ি কিশোরগন্জ পৌরসভার নিকটবর্তী গ্রাম সগড়া। আমাদের এলাকা তথা অন্যান্য গ্রমেও ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনে আসলে বা বাড়ির ছাদে গেলে কিছুটা থ্রিজির দেখা পাওয়া যায়।
আমরা কি ঘর থেকে বের হয়ে ইন্টারনেট ব্যাবহার করব? গ্রামীণফোনের কাছে প্রশ্ন সানাউল্লাহর।
তপু জাভেদ মৌলভীবাজারে সদর থানার একটা গ্রাম থেকে লিখেছেন। তার মত শুধুমাত্র শহর ছাড়া আর কোথাও 3G’র অস্তিত্ব নাই। শুধু গ্রামীণফোন নয় সকল অপারেটরের একই অবস্থা।
মাহমুদ হাসান একজন আইটি এডমিন। তার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন এভাবে, আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদরে, এবার রমজনের অভিজ্ঞতা বলছি, আমি একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার সুতারাং বলাই বাহুল্য ইন্টারনেট আমার জন্য অনেক জরুরি। ঈদের দ্বিতীয় দিন অফিস এর জরুরি কাজে অফিস এর সারভার এ লগইন করা প্রয়োজন হয়ে পড়লো। তো কি আর করি গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট চালু করলাম, এখানেই শুরু হলো বিপত্তি। একবার GPRS তো একবার EDGE 3G’র তো দেখাই নাই। যে কাজ করতে সময় লাগে ১০ মিনিট তা করতে আমার লেগেছে ৪ ঘন্টা । এই হইলো গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট । অন্য অপারেটর তো বাদিই দিলাম ।
শাহীন হাসান লিখেছেন, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা মনে হয় আমার চাইতে বেশি কারো নেই। আমার বাড়ী বি- বাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। এখানে 3G তো দুরের কথা ফোনে কথা বলতে হলে ঘরের বাইরে বের হয়ে কথা বলতে হয়। গ্রামীণফোনে অভিযোগ দিলেও কোন কাজে আসেনি।
আর রাজধানীর মিরপুর থেকে জহিরুল ইসলাম লিখেছেন, খুবই বাজে অবস্থা, নেট কানেকশন প্রতি মুহুর্তে চলে যায়। অনলাইন গেম খেলার ও ইন্টারনেট বেইসড এ্যাপ গুলো চালানোর সময় মাঝে মাঝে প্রায়ই কানেকশন চলে যায়। ফাইল আপলোড ও ডাউনলোড করতে প্রচুর সময় নেয়। হাইওয়ের কথা তো বাদই দিলাম।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, যশদল, কিশোরগঞ্জ থেকে মীর শওকত নেওয়াজ নিরব লিখেছেন
আমার অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। আমাকে ১২ মাসের মধ্যে প্রায় ১০ মাসই ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। আমার ক্যাম্পাসে গ্রামীণফোন 3G তো দূরে থাক 2G/EDGE ও ঠিকমতো নাই। রুমে বসে বা ক্যাম্পাসে হেঁটেও নেটওয়ার্ক পাইনা আমরা। ফেসবুকে একটা কমেন্ট করার জন্য কমেন্ট লিখে সেলফি স্টিক দিয়ে ৩ হাত উপরে তুললে তবেই নেটওয়ার্ক পাই এবং অনেক কষ্টে তা আপলোড হয়। আমি এবং আমরা গ্রামীণফোন সেন্টার কিশোরগঞ্জ এ বারবার বিষয়টা জানিয়েছি। ওরা দেখছে এবং দেখছে বলার পরও ৩ বছর প্রায় হয়ে গেছে। খুব কষ্ট করে আমরা ফোন এ কথা বলি। বার বার জানিয়েও প্রতিকার নাই। এমন না যে আমাদের ক্যাম্পাস শহরের বাইরে।
২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া সরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোর একটা কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, আমার মনেহয় না আমি পাশ করার আগে পর্যন্ত নির্বিঘ্ন 3G Network দেখে যেতে পারবো, 4G তো অনেক পরের কথা !!
রেজাউল কবির জানিয়েছেন তার কর্মস্থল মৌলভীবাজার শহরে। কর্মস্থলে থাকলে গ্রামীণফোনের থ্রিজি সেবা পুরোপুরিভাবে পাচ্ছেন!! তবে কাজ শেষ করে যখন গ্রামের বাড়িতে গেলে থ্রিজি সেবা পুরোপুরি পাওয়া যায়না। কখনো থ্রিজি, কখনো টু-জি আবার কখনো কখনো নেটওয়ার্ক সিগনালই থাকেনা।
আর প্রদীপ বনিকের মতে, খোদ রাজধানীতেই কোথাও কোথাও কখনও-কখনও 3G’র দেখা মেলে না। যখন তখন মোবাইলফোন স্ক্রিনে দেখা যাবে EDGE কিংবা GPRS এর সংকেত। ফ্লাইওভারগুলোর উপর দিয়ে চলার সময় ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি এমনকি ফোন কানেকশন কেটে যায় অবধারিতভাবে। হাইওয়েতে চলতে গেলে গ্রামীণফোনের থ্রিজি হয়ে ওঠে সোনার হরিন! ভাই এটাতো শহরের কথা। আর আমাদের গ্রমের অবস্থা তো আরো খারাপ।
রোমান কবিরের ভাষ্যে, গ্রামীণফোনের থ্রিজি সার্ভিস এর ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা মোটামুটি, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থ্রিজি কাজ করেনা, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থ্রিজি সার্ভিসের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তিনি মনে করেন ফোরজির চিন্তা বাদ দিয়ে থ্রিজি সার্ভিসটাই আরো উন্নত করা উচিত।
২০০৮ সাল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন কিশোরগঞ্জের নভেল। তখন জাভা কিংবা সেম্বিয়ান সেটে যেমন ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যেতো এখন তার চেয়ে বাজে স্পিড পাচ্ছেন। ৩জি বলা হলেও অপারেটর স্পিড কমিয়ে দিচ্ছে।
আর বারবার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়, স্পিড আপ-ডাউন করে। আসলে আমরা ২জি নাকি ৩জি ইউজ করছি সেটাই এখনও প্রশ্ন।
**‘জিপি’র 4G, চমক নয়, সেবা চাই’
**জিপি’র 4G নিয়ে গ্রাহক প্রতিক্রিয়ার ৪২ পৃষ্ঠা
বাংলাদেশ সময় ০৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৬
এমএমকে