রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক এলাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক।
এ বিষয়ে ভবন মালিকদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) মনে করছে, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সিদ্ধান্তের আওতায় রাখলে তা দেশের সম্ভাবনাময় খাতটির জন্য বড় হুমকি হবে।
তাই আবাসিক এলাকা থেকে এসব প্রতিষ্ঠান না সরানোর আহ্বান জানিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে বেসিস।
বেসিসের এসব চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে নতুন শিল্প হিসেবে এগিয়ে চলা এ খাতকে সহায়তা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্যও রাজউক যদি একই সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব এলাকা ছাড়তে হয় তাহলে এই খাতের ব্যাপক সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের চারটি মৌলিক বিষয়ের একটি হলো- তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ/সর্বত্র ব্যবহার। আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে সফটওয়্যার ও ই-কমার্স ব্যবসায়ের মাধ্যমে। এ খাতের অনেক ছোট ছোট উদ্যোগ একসময় অনেক বড় আকার ধারণ করছে। কিন্তু সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক এলাকাতে হলে এসব উদ্যোগ অংকুরে বিনষ্ট হবে। যা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে বড় ধরণের অন্তরায়।
বেসিসের ঐ চিঠিতে ১৫টি যৌক্তিক কারণও তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাজউকের এই সিদ্ধান্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যও প্রযোজ্য হলে এই খাত বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বড় কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাবে। আইটি কোম্পানি বড় ধরণের মেশিন বা ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার করে না। ফলে আবাসিক এলাকার কোনো ক্ষতি বা পরিবেশ দূষণ হয় না। কম্পিউটার বা সার্ভার চালু রাখতে খুব বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাণিজ্যিক এলাকায় ঐ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ বহন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দুঃসাধ্য। আইটি বা ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য বেশি আয়তনের অফিসের প্রয়োজন হয় না, আলাদা ও ছোট ভবনের প্রয়োজন হয়, যা বাণিজ্যিক এলাকাতে নেই বললেই চলে। যেহেতু বেশিরভাগ আইটি কোম্পানি শুরুতেই মাত্র ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ও ধীরে ধীরে বড় কোম্পানিতে পরিণত হতে থাকে। তাই বাণিজ্যিক এলাকায় অধিক ভাড়া ও অগ্রিম জামানত দিয়ে চলা সম্ভব না। একইসাথে ব্যাংকসহ দেশের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স বা আইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ দিতে চায় না। ফলে নতুন বাণিজ্যিক স্পেস কিনে/ভাড়া নিয়ে নিজেদের অর্থ খরচ করে প্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে পারবে না।
এসব যৌক্তিকতার প্রেক্ষিতে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রধান চালিকাশক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবাসিক এলাকায় অফিস পরিচালনা করে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের জোর দাবি জানানো হয় বেসিসের পাঠানো চিঠিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬
এসজেডএম