ঢাকা: সরকার আলোচিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের চারটি ধারা বিলুপ্ত করে নতুন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৬’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত ৫৭ ধারাও বিলুপ্ত হচ্ছে এ আইনে।
খসড়া আইনটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য সোমবার (২২ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৬ সালে প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তি আইন বিভিন্ন সময়েই আলোচিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে এ আইনে আটক করা হয় সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে। সর্বশেষ আইনটি প্রয়োগ করা হয় নিউজপোর্টাল বাংলামেইলটোয়েন্টিফোরডটকমের ক্ষেত্রে।
শুরু থেকেই আলোচিত হলেও প্রবীর শিকদারকে আটকের পর থেকে আইনটির ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ধারাগুলির বিলুপ্তি-সংযোজন ঘটিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রস্তুত করে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো পর্নোগ্রাফি আইনের কয়েকটি ধারাও এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪ ধারায় ‘কম্পিউটার দূষণ, কম্পিউটারের তথ্য-উপাত্ত ভাণ্ডার নষ্ট করা’র শাস্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ছিল। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে ‘কম্পিউটার, মোবাইল, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি’র সর্বনিম্ন সাজা এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো কম্পিউটার বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা মিথ্যা এবং অশ্লীল, যা কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে; এ ছাড়া এসব বিষয় দিয়ে যদি কারও মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ অপরাধের শাস্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড।
নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন দুই মাস বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। মানহানির বিচার করা হবে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ আইন অনুযায়ী।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনো প্রকৃত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত কল্পমূর্তির ক্ষেত্রেও শাস্তি আরোপ করার সুযোগ ছিল, যা প্রস্তাবিত আইনে শিথিল করা হয়েছে।
এছাড়া, কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকের ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৬ ধারায় যে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল তা প্রস্তাবিত খসড়া আইনে করা হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এতে হ্যাকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ‘পরিচয় প্রতারণা এবং ছদ্মবেশ ধারণ’, আর এটি স্থান পেয়েছে ১২ ধারা হিসেবে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৫ ধারায় কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তনসংক্রান্ত অপরাধের জন্য যে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল তা নতুন আইনে (১১ ধারা) করা হয়েছে সর্বোচ্চ এক বছর এবং সর্বনিম্ন একবছর বা উভয় দণ্ড।
আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সাইবার আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে। মতামত নেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজ্ঞ, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির ব্যক্তিবর্গ, আইসিটি স্টেকহোল্ডারদের। আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ, টিআইবি, গ্রামীণফোন, বেসিস, বিনিয়োগ বোর্ড এবং সাংবাদিকদের সঙ্গেও। খসড়া আইনটি উপস্থাপনের আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তার কার্যালয় যেসব পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে তা খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এইচএ/