ঢাকা: মোবাইল ফোন অপারেটরদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। অনুমোদন পেলে পোস্টাল ব্যাংকও এই সেবার আওতায় নিয়ে আসতে আগ্রহী প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে একথা জানান তারানা হালিম।
‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: সুযোগ, বিপত্তি ও ডিএফএসে ভবিষৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে টেলিযোগাযোগ বিটের সংবাদকর্মীদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
শুরুতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এমএফএসে তাদের অন্তর্ভুক্তি এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যানের এমন সেমিনারে থাকা উচিৎ ছিল, আমার না। আমার অবস্থাটা হচ্ছে অনেকটা হাত-পা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে আপনি সাঁতার কাটেন। হাত-পা বাঁধা থাকলে আমার পক্ষে সাঁতার কাটা সম্ভব না। আমি দায়িত্ব নিয়ে সোজা কথা বলি, সোজা কথা বলা সর্বদা উচিৎ না সেটাও বুঝি। সেটাও হাত-পা বেঁধে দেওয়ার মতো অবস্থা।
বিকাশ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে তারানা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে কোনো ব্লেইম গেম খেলবো না। এটা সত্য বিকাশ একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে। সেটাকে কৃতিত্ব দিতে হবে এবং দিতে চাই।
তারানা হালিম বলেন, আমার আত্মীয়-পরিজন কেউ বিকাশে চাকরি করেনি, ভবিষতেও করবে না। নিরপেক্ষ জায়গা থেকে বলি বিকাশ এমএফএসকে একটা জায়গায় নিয়ে গেছে। এটা মেনে নিতে হবে, ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় করা হবে। যে কারণে ধন্যবাদটা অবশ্যই দিতে চাই।
এই সেবার জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকা প্রয়োজন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, সবাই সর্ব শক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক। তাহলে বিকাশের মতো খাতগুলো আরও বিকশিত হবে, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে খেলাটা খেলতে হবে। সেই খেলা খেলার জন্য আমরা আরও অনেককে পাব।
সেমিনারে এমএফএসের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েও (ওটিসি) আলোচনা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওটিসি সম্পর্কে বিতর্ক এড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেহেতু এই বিষয়টা বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেট করে সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিটিআরসি একটা সমঝোতা স্মারক সই করতে পারে।
এমএফএসের জন্য পার্টনারশিপের প্রয়োজন জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, পার্টনারশিপকে খুব সুদৃঢ়ভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন। মার্কেট কম্পিটিটিভ করতে হলে আমাদের পার্টনারশিপের ইকো সিস্টেমকে জোরদার করতে হবে।
বায়োমেট্রিকে সিম নিবন্ধনের পর মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটাবেজ এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর উপকারে আসবে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপারেটরদের সার্ভিস ব্যবহার করছি, তাদের কাছ থেকে সব রকম সুবিধা নিচ্ছি কিন্তু তাদের একটা সুবিধা দিতে রাজি না। এটা আমার কাছে একটা বিমাতাসুলভ মনে হবে।
‘কাজেই আমাদের উচিত হবে এই সেক্টরকেও আমরা এখানে ইনভল্ভ করে তাদের জন্য এই সুযোগ উন্মুক্ত করে আমরা মার্কেট কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক করতে পারি। সেটাই একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে, তার মাধ্যমেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। ’
ব্যাংকিং সেবার পাবার জন্য আবেদনে থাকা ডাক বিভাগের পোস্টাল ব্যাংককেও এমএফএস সফলভাবে ব্যবহার সম্ভব বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
‘ডাক বিভাগের স্বার্থটাও দেখতে চাই, উপবৃত্তি ছাড়াও, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা আছে। পোস্টাল ব্যাংক এগুলো মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবে। কাজেই এই জায়গাটায় আমি একটু বায়াস। কারণ পোস্ট অফিসের দায়িত্বটাও আমার। ’
বিটিআরসি’র মহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার, গ্রামীণফোনের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মাহমুদ হোসেন, রবি’র হেড অব এমএফএস মনজুর রহমান, বাংলালিংকের এমএফএস ডিরেক্টর আসিফ আহমেদ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের হেড অব এমএফএস আবুল কাশেম খান, বিকাশ উপদেষ্টা অসীম দাশ গুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এমএফএস নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহদীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
এমআইএইচ/আইএ/এমজেএফ/