ঢাকা: মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য স্যাটেলাইট নির্মাণ, স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয় ও গ্রাউন্ড নির্মাণে হংকং সাংহাই ব্যাংকের (এইচএসবিসি) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
শুক্রবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিটিআরসি কার্যালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এতে বিটিআরসির পক্ষে চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ ও এইচএসবিসির পক্ষে ব্যাংকটির বাংলাদেশের ডেপুটি সিইও মাহবুব-উর রহমান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ আশা ব্যক্ত করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন নির্মাণ আমাদের একটি গৌরবের প্রকল্প, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে আমাদের যা যা করার দরকার তা করে যাচ্ছি।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে এগুলোর মধ্যে এইচএসবিসির সুদের হার সবচেয়ে কম, যা ১.৫১ শতাংশ বলে জানিয়েছেন তিনি।
এইচএসবিসির এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকা বা ১৬৭.৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণ ১২ বছরে ২০টি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস এর সঙ্গে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রধান কার্যক্রম স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের জন্য এক হাজার ৯শ’ ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিটিআরসি।
গত বছরের ২০ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থ্যালাস স্পেসকে কাজ দেওয়ার অনুমোদন দেয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯শ’ ৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ৬শ’ ৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্স্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সংকুলান করা হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য গত ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লীজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে।
দেশের প্রথম এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ২০১২ সালের ২৯ মার্চ বিটিআরসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশীপ ইন্টানন্যাশনালের সঙ্গে পরামর্শক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওয়েব ও বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ই-সেবা নিশ্চিত করাসহ স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনেও অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয়সহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৬
টিএইচ/জিপি/বিএস