ঢাকা: ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে রোবট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। টেলিনর গ্রুপের অনলাইন জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) টেলিনর গ্রুপ পরীক্ষামূলক অনলাইন জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় গ্রামীণফোন।
এ সহস্রাব্দের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা, প্রযুক্তির প্রভাব এবং ভবিষ্যতে চাকরির জন্য নিজেদের সর্বোত্তম উপায়ে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিষয়ে জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এ দেশের তরুণরা তাদের কর্মক্ষেত্র প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছেন। যদিও তারা বিশ্বাস করেন, সফল ক্যারিয়ার গঠনে কারিগরি ও মানবীয় দক্ষতা দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে। জরিপের ফলাফলে আরও উঠে এসেছে, উত্তরদাতাদের শতভাগ মনে করেন, ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে রোবট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৪ হাজার ২০০ তরুণ ‘জবস ফর ফিউচার’শীর্ষক এ অনলাইন জরিপে অংশ নেয়। জরিপটি টেলিনর গ্রুপের ফেসবুক পেইজের ব্যবহারকারীদের টার্গেট ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
প্রতিটি দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নমুনার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
টেলিনর গ্রুপের সোশ্যাল মিডিয়া ডিরেক্টর শীনা লিম বলেন, ‘আমাদের ফেসবুক চ্যানেল এশিয়ার তরুণদের একটি বড় অংশের কাছে পৌঁছে গেছে। তাই এরকম একটি জায়গাকেই আমরা পরীক্ষামূলক এ জরিপ চালানোর জন্য উপযুক্ত মনে করেছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভেবে দেখেছি সামাজিক মাধ্যমে প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে এশিয়ার তরুণদের ভাবনা ও সম্ভাব্য মনোভাব সম্পর্কে জানার জন্য ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে’।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম: ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনের চাবিকাঠি ডিজিটাল প্রযুক্তি
বাংলাদেশে তরুণদের ৬০ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ইন্টারনেট ও ডিজিটাল খাতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে ‘রোমাঞ্চিত’। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ জানিয়েছে তারা এ ব্যাপারে ‘অত্যন্ত রোমাঞ্চিত’। এছাড়াও, ২০২০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট বা মোবাইল প্রযুক্তি তাদের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে ৫৯ শতাংশ। ছয়টি দেশের ৬৩ শতাংশ তরুণরা সমষ্টিগতভাবে এ ব্যাপারে একমত হয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র ১.৪ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে তাদের ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ‘খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়’।
মানবীয় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন
জরিপকৃত তরুণদের মধ্যে একটি দেশ ছাড়া বাকি সবাই একমত যে ভবিষ্যতে চাকরির জন্য অ-কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ বাংলাদেশি (৩৪ শতাংশ), পাকিস্তানি (৩৭ শতাংশ) এবং ভারতীয় (৩৬ শতাংশ) তরুণ মনে করে ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগের জন্য ‘অন্যদের অনুপ্রেরণাদানের ক্ষমতা’ এবং ‘নেতৃত্বদানের দক্ষতা’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সিঙ্গাপুরে জরিপকৃত প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বেশি তরুণ মনে করে‘মানব ব্যবস্থাপনা ও আবেগজনিত বুদ্ধিবৃত্তি’ (২৯ শতাংশ) গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারে তিনজনের একজন তরুণের ‘ক্রিয়েটিভ, কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটির’ দক্ষতাকে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার তরুণরা একটু ভিন্ন। তাদের ২৪ শতাংশ জানিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক ‘মোবাইল ও ওয়েব ডেভলপমেন্ট এবং সুপার কোডিং দক্ষতা’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের তরুণরা (৯ শতাংশ) জরিপে জানিয়েছে, ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে ডাটা অ্যানালাইসিস এবং রিসার্চ ও ইন্টারপ্রিটেশন।
ভবিষ্যতে অনেক পেশায় মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে রোবট
অন্যান্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের শতভাগ তরুণরাই একমত হয়েছে যে, সামনের দিনগুলোতে অনেকে পেশার ক্ষেত্রেই মানুষের জায়গা দখল করে নিবে রোবট। কোনো পেশার ক্ষেত্রে এটা বেশি ঘটবে এমন প্রশ্নের ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ বাংলাদেশি উত্তরদাতা অনুমানের ভিত্তিতে জানিয়েছে যে, উৎপাদন ও প্রকৌশল শিল্পখাতে যন্ত্র মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আরও ২১ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে, রোবটের মানুষের জায়গা নেয়াটা তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। জরিপকৃত অন্যান্য দেশের তরুণেরাও জানিয়েছে, উৎপাদন ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে রোবট মানুষের জায়গা করে নেবে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার ৪৪ শতাংশ, মিয়ানমারের ৪১ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ও ভারতের যথাক্রমে ৩৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৩৪ শতাংশ তরুণ এ ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
এমআইএইচ/বিএস