দৈনন্দিন প্রায় প্রতিটি কাজকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িয়ে গেছে প্রযুক্তি। আধুনিক জীবনযাপনের তাগিদেও প্রযুক্তির প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে সবার।
কারণ বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মাঝেও প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বাড়ছে ক্রমশই। এমনকি বাচ্চাদেরও এতে আশক্তি বাড়ছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব, গেমিং ডিভাইস, ইন্টারনেট কোনটাই তাদের অজানা নয়।
কিন্তু এসব পণ্য যেখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নানা ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে, সেখানে শিশু-কিশোরদের বেলায় এগুলো কতোটা কল্যাণকর?
এ সম্পর্কে বাংলানিউজের প্রশ্নে তথ্য প্রযুক্তিবিদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি ছাড়া চলা সম্ভব নয় তা আমরা ভালোভাবেই জানি। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথেসাথে শিশু-কিশোররাও এর সাথে চলছে।
শুধু প্রযুক্তি নয়, ভালো-মন্দ দিক সব কিছুতে থাকে, তাই বলে ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে এটা নয়।
শিশুরা প্রযুক্তির সাথে যে গতিতে চলছে, তা রোধ করা ঠিক হবে না। তবে প্রযুক্তির মন্দ দিকগুলো থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে।
এজন্য পরিবারকে হতে হবে সচেতন। সন্তাদের কাছে প্রযুক্তির ভালো-মন্দ তুলে ধরা, কতটুকু ব্যবহার উচিত তার ধারণা দিতে হবে অভিভাবকদের।
তিনি বলেন, ৩ বছর বয়সে আমি আমার সন্তানকে হাইস্পিড ইন্টারনেট থেকে শুরু করে গেইম খেলার সব উপকরণ দিই। আর অভিভাবক হিসেবে কতটুকু পর্যন্ত ব্যবহার উচিত, কতটুকু উচিত নয় তা জানিয়েছি। তাই সে কখনই অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার করে নাই।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান ড. তৌহিদ ভুইয়ান বাংলানিউজকে বলেন, চাইলেই প্রযুক্তিপণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ সম্ভব নয়। আমাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তির খারাপ দিকগুলো জেনে একটু সচেতন হলেই এটা রোধ সম্ভব ।
শিশুরা অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এজন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া, পর্যবেক্ষণ করা যে আসলে সন্তানরা কিভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা সময় বাচ্চারা খেলাধুলা,বই পড়াসহ নানা বিনোদনের মধ্যে থাকতো। এখন ইন্টারনেট, গেইম খেলায় ব্যস্ত থাকে। যুগের সাথে তাল মেলাতে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে সাথে সংস্কৃতিকেও ধরে রাখতে হবে ।
আভিবাকদের উদ্দেশে বলবো, প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ নয়, ফেসবুক কি এটা কি কাজে ব্যবহার করা উচিত, পর্ণ সাইট কি, কেনো ব্যবহার করা ঠিক না বিষয়গুলো নিয়ে সন্তানের পাশে বন্ধু হয়ে আলোচনা করেন। তাহলে তারা প্রযুক্তিতে আসক্ত হবে না এবং ক্ষতিকর দিক থেকে দূরে থাকবে।
এ বিষয়ে গৃহিনী রুমানা পারভিন বলেন, আমার ৯ বছরের মেয়েটা যখনি সুযোগ পায় মোবাইলে গেইম, টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খেলাধুলার জায়গা নেই বলে এসব দিয়েই তাকে শান্ত রাখতে হয়। প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক আছে তারপরও কিছু করার থাকেনা। বেশিক্ষণ গেইম খেললে কখনও তার মাথা ব্যথাও হয়। তাই পড়াশুনা করতে চায়না।
গৃহিনী শারমিন আক্তার বলেন, মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার এসব এখন ঘরে ঘরে। ছেলেকে আমিও একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছি। তবে এটা কিভাবে ব্যবহার করছে সবসময় দেখতে পারিনা। ছেলের বন্ধুর বাবা-মা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে তাই আমাকেও দিতে হয়েছে।
আমি যতটুকু জানি যে, ইন্টারনেটে বাচ্চারা পড়াশুনা নিয়ে কথা বলে। তবে আসলে তারা কি করছে এইটা অবশ্যয় দেখা উচিত।
ওএসবি চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তার এবং চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তির ব্যবহার একদমই ঠিক নয়। বড়দের তুলনায় ছোটদের চোখ অনেক নমনীয়। চোখে এক ধরনের পানি থাকে, বেশিক্ষণ তাকিয়ে বাচ্চারা টিভি দেখলে, মোবাইলে গেম খেললে পানি শুকিয়ে যায়। ফলে মাথা ব্যথা হয়, একসময় চোখে কম দেখাও শুরু হয়।
মানসিকভাবে তারা সবসময় এসব প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে থাকে। তাতে অন্যান্য খেলাধুলা, পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারেনা। এমন সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আমাদের কাছে আসছে।
আভিভাবকদের প্রতি তার পরামর্শ, প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বন্ধ করে নয়। ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখা গেলে, প্রযুক্তি ও অনলাইনের প্রতি আসক্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। এতে কলে খেলাধুলা করে আনন্দও পাবে শরীরও শুস্থ থাকবে।
এছাড়া শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয়। তাই অভিভাবকদের নিজেদের কার্যকলাপ নিয়েও বাচ্চাদের সামনে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
মোটকথা, প্রযুক্তির সাথেই এগোতে হবে কিন্ত প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের বাঁচিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬
এমআইটি/এসজেডএম