দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে আর কেউ অডজব করবেন না। যুক্তরাষ্ট্র কেন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার জব মার্কেটের জন্যও নিজেদের যোগ্য করে নিয়ে তবেই অভিবাসী হতে পারবেন বাংলাদেশিরা।
আবুবকর হানিপ কথাগুলো বলে বেশ দাবির নিয়ে বললেন, এটা কোনো স্বপ্ন ছড়ানো নয়, এটাই বাস্তবতা। আর পিপলএনটেক এখন সে কাজটিই করছে।
ঢাকায় পিপলএনটেকের সেন্টার তার দ্বি-বর্ষপূতি সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে ঢাকার গ্রাজুয়েট আমেরিকার মার্কেটে কাজ নিয়ে পাড়ি যেমন জমিয়েছেন, দেশে থেকেও অনেকেই আয় করছেন বড় অংকের অর্থ। তাদের কেউ কেউ ঘণ্টায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ ডলারের কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সেখানে থেকে সাধারণ বাংলাদেশিরা তাদের অড জব (ট্যাক্সি চালক, দোকানের কর্মী, হোটেল বয়, ক্যান্ডিশপ কিংবা নিউজস্ট্যান্ডের বিক্রেতার কাজ) থেকে যা মজুরি পান তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। আর এই কাজ অনেক বেশি সম্মানজনক। কাজের পরিবেশ অনেক বেশি উন্নত।
যুক্তরাষ্ট্রে এক যুগেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর বাংলাদেশে গ্রাজুয়েট তৈরি করে দক্ষকর্মী বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়েই ২০১৪ সালে ঢাকায় প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু করে পিপলএনটেক। এরই মধ্যে এই সেন্টার সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে, বলেন একজন গর্বিত আবুবকর হানিপ।
বাংলানিউজকে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমি হেল্প শব্দটিকে হানিপ দিয়ে পাল্টে দিতে চাই। মানুষ বলবে ‘মে আই হানিপ ইউ’। যতটা দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস আর সংকল্প থাকলে এমন একটি কথা বলা যায় তা বর্তমান রয়েছে আবুবকর হানিপের মধ্যে।
আর সে কারণেই বাংলাদেশে তিনি তার সেন্টারে যাদের পড়াচ্ছেন তাদের অধিকাংশই এখন পড়ছেন স্কলারশিপে। হানিপ বলেন, আমি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসিনি। এখানে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে এসেছি। সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে তা বাস্তব রূপ দিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে এসেছি।
হানিপ বলেন, ঢাকার গ্রাজুয়েটরা দেশের ভেতরেই ভালো ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের হাতে-কলমে শিখিয়ে এমনভাবে আইটি এক্সপার্ট করে গড়ে তুলছি যে তারা আর ফ্রেশার নয়, সরাসরি মিড বা হাই লেভেল জব পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আইটি রিলেটেড চাকরিতে ফ্রেশার শব্দটিকেই তুলে দিতে চায় পিপলএনটেক।
পিপলএনটেক-এ গ্রাজুয়েটরা মূলত কাজের পরিবেশের মধ্যে শেখেন। এখানে ক্লাসরুমটিকেই সাজানো হয় কোনো আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগের আদলে। ফলে কেউ যখন এখানে প্রশিক্ষণ নেন তখন তারা মূলত প্রশিক্ষকের কাছে নয়, শেখেন সহকর্মীর কাছ থেকে। ফলে তার প্রশিক্ষণ শেষ করেই দক্ষকর্মী হয়ে ওঠেন।
হানিপ বলেন, এটি একটি পরীক্ষিত ফর্মুলা। যুক্তরাষ্ট্রে একযুগেরও বেশি সময় ধরে পিপলএনটেক এ পদ্ধতি প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। সেখানে গ্রাজুয়েটরা প্রশিক্ষণ শেষ করেই সিক্স ডিজিটের কাজ পেয়ে যাচ্ছেন।
বছরে ১০০০০০ (এক লাখ) ডলারের কাজ যে কোনো আমেরিকানের জন্য ‘ড্রিম জব’। পিপলএনটেকের গ্রাজুয়েটরা সেই কাজই পাচ্ছেন। যা এখন বছরে ২০০০০০ (দুই লাখ) ডলারও ছাড়িয়েছে, জানালেন আবুবকর হানিফ।
তিনি জানান, ২০১৬’র মে মাসে ওয়াশিংটনের ভার্জিনিয়া সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশি কাশিফ আলী শাহ ওয়াশিংটনেই গভর্নমেন্ট সিআইওতে অটোমেশন টেস্টার এসএমই হিসেবে কাজ পেয়েছেন যার বাৎসরিক বেতন হবে ২ লাখ ৮ হাজার ডলার।
হানিপ বলেন, এটি পিপলএনটেকের সর্বোচ্চ সাফল্য। এর আগে আর কোনো গ্রাজুয়েটই এতো বেশি অংকের বেতনে চাকরি পায়নি। তবে গড়ে প্রায় প্রত্যেক গ্রাজুয়েটই এক লাখ ডলারের কাজ পাচ্ছেন।
পিপলএনটেক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিনিয়া ও নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত দু’টি সেন্টার থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ২১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৯ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ২২ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ২৫ জন, আগস্টে ২১ জন ও সেপ্টেম্বরে ২১ জনের জব প্লেসমেন্ট হয়েছে।
হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারগুলোতে এখন বাংলাদেশি ছাড়াও অন্য দেশের অভিবাসীরা কিংবা খোদ আমেরিকানরাও এ প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের স্বপ্নের চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন। তবে ঢাকার সেন্টার থেকে শতভাগ বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের সুবিধা দেওয়া সম্ভব।
তিনি জানান, যারা ইমিগ্র্যান্টদের স্পাউজ হিসেবে, কিংবা ভাইবোন হিসেবে, এমনকি মা-বাবা হিসেবেও যারা যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন তাদের এই সুযোগটি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাতে তারা যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে আর কোনো অডজব খুঁজতে যাবেন না। তারা সরাসরি আইটি এক্সপার্ট হয়ে সেখানে যাবেন। আর ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়েই ঢুকে পড়তে পারবেন কাজের জগতে।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার জন্য যাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থী, কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাচ্ছেন এমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও এ প্রশিক্ষণটি নিয়ে গেলে সেখানে সহজেই বড় অংকের বেতনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। যা তাদের শিক্ষাজীবনকেই আরও সহজ করে তুলবে, বলেন আবুবকর হানিপ।
ঢাকার সেন্টারে এমন সম্ভাব্য ইমিগ্র্যান্ট কিংবা পড়তে যাবেন এমন প্রার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। এবং এটিই হতে যাচ্ছে পিপলএনটেকের সবচেয়ে বড় সাফল্য, বলেন আবুবকর হানিপ।
এদিকে ঢাকায় যারা গ্রাজুয়েশন করছেন তারা যেমন স্থানীয় জব মার্কেটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন, তেমনি নিজেরাই হয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে পিপলএনটেক।
দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি –বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এরই মধ্যে এমওইউ সই করে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে পিপলএনটেক।
দেশের উন্নয়নে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমিকা রাখতে পেরেই আমি খুশি, বলেন আবুবকর হানিপ।
পিপলএনটেকের যোগাযোগ: www.piit.us, phone: +8801611446699, +8801799446655
www.facebook.com/peoplentech
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৬
এমএমকে/এএ
** বিশ্ববিদ্যালয়েও কোর্স চালাবে পিপলএনটেক
** ‘মে আই হানিপ ইউ!’