ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬ ভেন্যু থেকে: আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসি,বি) গুগল’র স্টলটি দূর থেকেই দৃষ্টি কাড়বে। মূল চারটি হলের কোনোটিতে নয়, বড় একটি স্থান জুড়ে আলাদা স্টল এটি।
কেউ একজন বলে উঠলেন, এটি গুগলের হেড কোয়ার্টার। সে যাই হোক গুগলের স্টল তখনও পুরোপুরি সাজেনি। আয়োজকদের একজন এগিয়ে এসে জানালেন, একদিকে দেশের বড় বড় প্রোগ্রামাররা বসবেন। আর অন্যদিকে স্থান দেওয়া হয়েছে ক্ষুদে প্রোগ্রামারদের। আর এখানে সারাক্ষণ চলবে প্রোগ্রামিং আড্ডা।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকালে উদ্বোধনের পর মেলা জমে ওঠেনি তখনও। তাই বড় প্রোগ্রামারদের দেখা না মিললেও ক্ষুদে প্রোগ্রামারদের অনেকে তাদের প্রজেক্ট নিয়ে হাজির। তাদেরই একটি দল তিনটি রোবোট বানিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনটিই মূলত গাড়ি। এর একটি গাড়ি নিজে নিজেই চলতে পারবে আঁকা-বাঁকা পথে, একটি যে কোনও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে চালানো সম্ভব। আরেকটি রোবট বানানো হয়েছে যেটি চলার পথে বাধা থাকলে তা আগে ভাগেই বুঝে ফেলবে আর দিক ও গতি পরিবর্তন করে নিতে পারবে।
ঢাকার একাডেমিয়া স্কুলের তিন ছাত্র সিয়াম, মাসুক ও আহাদ মিলে বানিয়েছে রোবোটগুলো। তবে মূল কোডিং সিয়ামের। তার মতে, কোডিংটাই গুরুত্বপূর্ণ। একেকটি প্রোগ্রামিং ও কোডিং শেষ করতে তার গোটা দিন লেগে গেছে। এই রোবটের যা কিছু যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার তা কেনা হয়েছে টেকশপবিডি.কম থেকে। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই পাওয়া গেছে, জানালো সিয়াম।
সিয়াম-মাসুক-আহাদরা এই যে রোবোট বানিয়েছে- তা শুধু তাদের আগ্রহ থেকে।
একই আগ্রহের কথা ঝড়লো অপর ক্ষুদে প্রোগ্রামার দলের কণ্ঠের। এদের প্রকল্পের নাম শব্দনীড়। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত সমৃদ্ধ আঞ্চলিক শব্দভাণ্ডার যাতে হারিয়ে না যায় সেটাই তাদের এই প্রজেক্টের লক্ষ্য। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যে ভাষা, একই শব্দের যে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার আর তার মধ্য দিয়ে ভাষার যে সমৃদ্ধি তা ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ। তাদের তৈরি সফটওয়্যারে পুরো দেশকে নয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। একটি শব্দের নয়টি আঞ্চলিক রূপান্তর এতে পাওয়া যাবে।
ব্যবহারিক বাংলা অভিধান থেকে ৪৯২৩টি শব্দ নির্বাচন করা হয়েছে, এগুলোর ওপরই কাজ করছে এই দল। দলটি ভাবছে প্রাথমিকভাবে শব্দ নিয়ে কাজ হলেও তারা এমন একটি সফটওয়্যার বানাবে যাতে পুরো একটি বাক্যকেই আঞ্চলিক ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব হয়। ভাষাকে ডিজিটাইজড করার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখাই এর লক্ষ্য। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২৪ জনের একটি দল এই কাজ করছে। সবার পক্ষে ইমামুল হুদা ও ইকবাল হোসেন গালিব প্রকল্প উপস্থাপনের কাজ করছেন।
আরেকটি সফটওয়্যার অনলাইনে রক্তদানে সহযোগিতা করার জন্য। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলভিত্তিক এই অ্যাপ ডাউনলোড করে নিয়ে যে কেউ তার মোবাইল ফোনেই খুঁজে পাবেন রক্তদাতার তালিকা। কেউ যদি ডোনেট করতে চান- এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। নাইম মুসাদ্দিক ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনিই বানিয়েছেন এই রক্তদানের বিশেষ অ্যাপ। যা সমাজের জন্য একটি বড় সহযোগিতা।
আয়োজকরা জানালেন, আগামী তিন দিনে আরও শত শত ক্ষুদে প্রোগ্রামার এখানে সমবেত হয়ে তাদের নিজেদের আবিষ্কারগুলো তুলে ধরবে। যারা প্রোগ্রামিংয়ে নাম করেছেন তারাও আসবেন আর এসব প্রজেক্ট দেখে তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেবেন।
** ডিজিটাল বিশ্বের অনন্য ডিসপ্লে আইসিসিবি-তে
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এমএমকে/এটি