ঢাকা: পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের নেটওয়ার্ক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর সিটিসেল প্রধান কার্যালয়ে বিটিআরসি’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এয়াকুব আলী ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে সিটিসেলের শুধুমাত্র নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর বন্ধের কারণ হিসেবে সময়মতো পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণ উল্লেখ করেন এয়াকুব আলী ভূঁইয়া ।
পুরো ভবন সিলগালা করা হচ্ছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এয়াকুব আলী বলেন, সিটিসেলের শুধুমাত্র একটি টেকনিশিয়ান রুম সিলগালা করা হয়েছে। ওই রুমটি থেকে সিটিসেলের পুরো নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এছাড়া বাকি সব কিছু খোলা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগের মতো অফিস করবেন। সিটিসেল কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বে বহাল রেখেছে। কেননা, সিটিসেল আগেই বলেছে, তারা তাদের কর্মচারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেবে না। এছাড়া সিটিসেলের সম্পত্তি সিটিসেলেরই থাকবে।
এর আগে র্যাবকে সঙ্গে নিয়ে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অভিযান চালান বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা। এ অভিযানে ৠাব-১ এর মেজর ইশতিয়াক আহমেদ ও বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে বিটিআরসি’র প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আনুষ্ঠানিকভাবে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিটিসেলের পাওনা অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। আর এজন্য তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার প্রথম লাইসেন্স পায় সিটিসেল বা প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড। এজন্য বিটিআরসি থেকেও সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছে সিটিসেল। অন্যদিকে বর্তমানে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ১৩ লাখ। যার মধ্যে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা মাত্র দেড় লাখ।
গত জুলাই মাসে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)। পরের মাসে অর্থ পরিশোধে তাদের নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। ওই নোটিশের পর সিটিসেল আদালতে গেলে আপিল বিভাগ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে সিটিসেলকে দুই মাস সময় দিয়েছিলেন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। কিন্তু সে দুই মাস সময়ের মধ্যেও তারা অর্থ পরিশোধে সফল হয়নি।
এদিকে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, মোট বকেয়ার ৪৭৭ কোটি টাকার দুই-তৃতীয়াংশ ৩১৫ কোটি টাকা বুধবার (১৯ অক্টোবর) নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। এর মধ্যে টু-জি লাইসেন্সের তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ ২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বার্ষিক তরঙ্গ ফি বাবদ ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ১০ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ ৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও বিলম্ব ফি বাবদ ১৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এছাড়া সিটিসেলে বর্তমানে ৫৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক মোটরস ও ফার ইস্ট টেলিকম। এর মধ্যে প্যাসিফিক মোটরসের শেয়ারের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর ফার ইস্ট টেলিকমের ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিংটেল। প্যাসিফিক মোটরস ও ফার ইস্ট টেলিকমের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মোর্শেদ খান।
** সিটিসেলের কার্যালয় সিলগালা
** সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬, আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা
এসজে/এমইউএম/এএসআর