ঢাকা: জমজমাট আয়োজনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো তিনদিনের দেশের সবচেয়ে বড় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মেলা ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬’ মেলা। মেলার শেষদিন শুক্রবার হওয়ায় মানুষের তিলধারণের ঠাঁই ছিলো না।
ফলে মেলা শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় রাত আটটার পরিবর্তে দশটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) মেলা শুরু হয়েছিলো ১৯ অক্টোবর (বুধবার)। বাংলাদেশের প্রযুক্তিখাত সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও অংশ নিয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) আইসিসিবির গুলনকশা হলে আয়োজন করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠানের। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার প্রমুখ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সাংবাদিকতা, সফটওয়্যার ইনোভেশন, হার্ডওয়্যার ইনোভেশন এবং নাগরিক সেবা প্রদানে অবদান রাখায় সাতটি ক্যাটাগরিতে ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬ পুরস্কার দেওয়া হয়।
সমাপনী দিনে তিনটি হলে মোট ছয়টি সেশন ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠিত ডেভেলপার কনফারেন্সে অংশ নেয় দেশ বিদেশের আইসিটি কোম্পানির প্রধান নিবার্হীরা।
একই সময়ে ‘ইউ আর নট সেফ’ ডিজিটাল সিকিউরিটি ফর এভরি সিটিজেন’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ভেন্যুর ২ নম্বর হলে সকাল সাড়ে দশটায় ‘দ্য রোড টু ৫ বিলিয়ন আইসিটি এক্সপোর্ট বাই ২০২১’ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তা ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
দুপুর আড়াইটায় এক নম্বর হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্রো ইওর বিজনেস উইথ ফেসবুক’। এতে অংশ নেয় ফেসবুকের কর্মকর্তারা। ই-হেলথ নিয়ে দুপুর আড়াইটায় আরও একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রি জাহিদ মালিক স্বপন, স্বাস্থ্য অধিদফরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ।
পুরো মেলা আয়োজন করা হয় সাতটি ভাগে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত নানা উদ্ভাবন নিয়ে মেলায় প্রদর্শনী করা হয়। ই-গভর্নেন্স জোনে আয়োজন করা হয়েছিলো সরকারের নানা মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কর্মকণ্ডের প্রদর্শনী। দেশকে ডিজিটাল করে তুলতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাফল্য তুলে ধরার জন্য সাজানো হয়েছিলো স্টলগুলো।
ই-কমার্স জোনে বিভিন্ন ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের প্রদর্শনী করা হয়। একই সঙ্গে ক্রেতাদেও অর্ডার নেওয়া হয়। এছাড়া ওই জোনে অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন শপিংসহ অনলাইনে কাজ করার বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের।
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স টেনওয়ার্কের (বিডিওএসএন) প্রোগ্রামিং প্রযোগিতার আয়োজন করে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি) বাংলা ব্যবস্থাপনায় ড্রোন, রোবট প্রদর্শন করা হয়।
গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি) বাংলা কমিউনিটির উদ্যোগে উদ্ভাবনী জোনে তরুণদের উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো দেখানো হয়। এই তিনদিনে তরুণদের কাছে এটা ছিলো বিশেষ চমক। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মতো এমন বিশাল আয়োজন আইটি নিয়ে কাজ করা মানুষদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে।
নন স্টপ বাংলাদেশ’ থিমকে সামনে রেখে সরকারের আইসিটি বিভাগ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এ টু আই’ প্রকল্পের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে।
১৯ অক্টোবর দেশের প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই সাতটি দেশের মন্ত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে কী নোট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এসই/জিপি/টিআই