ইন্টারনেট বা সাইবার জগতে মূলত কোনো সীমানা নেই, পুরো বিশ্ব এক। সুতরাং বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো স্থানে আক্রমণ করা সম্ভব।
তাই দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বরং সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস-২০১৬’ উপলক্ষে গুলশানের একটি ক্লাবে শনিবার দিনব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ‘সাইবার নিরাপত্তা-পূর্বাভাস; প্রস্তুতি; সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (আই-সাকা) ঢাকা শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা শাখার প্রথম সভাপতি আলী আশফাক।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, আইসাকা ঢাকা শাখা সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ একেএম নজরুল হায়দার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলফিকার আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রধান ড. তৌহিদ ভূইয়া, আইসাকা’র ঢাকা শাখা সেক্রেটারি ওমর ফারুক খন্দকার, গ্রামীনফোনের ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান শাহাদাত হোসাইন, ইনফরমেশন সিস্টেমস সাইবার অ্যাওয়ারনেসের বাংলাদেশ শাখার (আইএসএসএ) সভাপতি এমআর মারুফ আহমেদ ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ ।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গত মাসের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৩২ লাখ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারেরই কাজ নয়, বরং নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, মূলত ইন্টারনেট জগতের কোনো বর্ডার (সীমানা) নেই এবং এখানে কারো একক মালিকানাও নেই। পুরো পৃথিবী এক। সুতরাং বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা ব্যাপক। তাই সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আইসাকা ঢাকা শাখার প্রথম সভাপতি আলী আশফাক বলেন, আইসাকা একটি অলাভজনক সংগঠন। সব ধরনের মানুষের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান বিতরণ করা আইসাকার মূল উদ্দেশ্য। সাইবার স্পেসে কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। সবাই সাইবার ঝুঁকির মধ্যে।
তিনি বলেনম নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অক্টোবর মাসকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকায় আজকের সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন হবার আহ্বান জানান তিনি।
আইসাকা ঢাকা শাখা সভাপতি একেএম নজরুল হায়দার বলেন, বিশ্বে প্রথম একটি মাত্র দেশ নিজেদের ডিজিটাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ২০০৮ সালে এবং সেটি হলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়েছে ২০১৫ সালে। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েও মূলত সে তুলনায় আমরা সাইবার নিরাপত্তায় বেশি দূর এগোতে পারিনি।
তার মতে, শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নয়। প্রত্যেক মানুষই সাইবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেমন: একজন কৃষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তার মোবাইলে একজন সাইবার অপরাধী কোনো ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর মাধ্যমে ফাঁদ পাতলো এবং ওই কৃষক অসচেতনতার কারণে সেই ফাঁদে পা দেয়ার মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্টের সব টাকা চলে যেতে পারে।
নজরুল হায়দার বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা খুব জরুরি। সাইবার নিরাপত্তা অনেক ব্যাপক বিষয়। পাশের দেশগুলোর তুলনায় এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে সবাই সম্মিলিতভাবে সামনে অনেক কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে আমেরিকা, ২০১১ থেকে নরওয়ে এবং ২০১২ থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ অক্টোবরকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এসজেডএম