ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কেরানীগঞ্জের আইটি উদ্যোক্তা রুবেলের কথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৬
কেরানীগঞ্জের আইটি উদ্যোক্তা রুবেলের কথা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা: রুবেল হামজা পেশায় একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক।

কিন্তু এইচএসসি পাসের পর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মেলেনি। ফলে, বন্ধুদের পরামর্শে ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটিতে (ডিআইআইটি)।

পড়ালেখার খরচ যোগাতে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। হয়েছেন দেশসেরা আইটি উদ্যোক্তা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের হাত থেকে পেয়েছেন সেরা আইটি উদ্যোক্তা পুরষ্কার।

কেরানীগঞ্জের আগানগরে আবদুল কুদ্দুস ও হেনা বেগমের প্রথম সন্তান রুবেল হামজা। তথ্য প্রযুক্তিতে বিশ্ব দরবারে দেশের মাথা উঁচু করেছেন তরুণ এই আইটি উদ্যোক্তা। গড়েছেন নিজের গেমিং প্রতিষ্ঠান ‘হামজা গেমস’।

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রুবেল হামজা বলেন, আমার তৈরি গেম ‘পিক অল স্টিক’ অ্যাপলের আইওএস অ্যাপ স্টোরের টপচার্টে রয়েছে। ‘অ্যামেজিং অ্যান্ট স্মেশার’ গেমটি স্মার্টফোনে নামানো হয়েছে ২০ লাখ বারেরও বেশি। এই গেমটি আইওএস স্টোরে পাজল ক্যাটাগরিতে শীর্ষে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং কাজ শুরু করি। কিছুদিনের মধ্যেই ঘরে বসে আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার আয় করি। সে সময় ইল্যান্সের মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার প্রোগ্রামারের মধ্যে আমার অবস্থান ছিলো ৫০৮ নম্বরে। পরে দেশে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্স করার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাই। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনিচে ভর্তি হই। প্রোগ্রামিংয়ে আমার পারদর্শিতা দেখে বিশ্বসেরা গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ওডিসি’ যুক্তরাজ্য শাখায় আমাকে অফিস-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়।

যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে এলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেখানে পড়ালেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে গেলে ২০১২ সালে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য গেম তৈরি করে দিয়েছি। পরে বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেমের চাহিদা এবং এর লাভজনক দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে চারজন ডেভেলপারকে সঙ্গে নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘হামজা গেমস’ চালু করি।

হামজা গেমসের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোনের জন্য এখন পর্যন্ত ১২০টির বেশি গেম তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘অ্যামেজিং অ্যান্ট স্ম্যাশার’। এ ছাড়া হাংরি ফিস, ব্রেক মি নট, পিক অল স্টিক বিভিন্ন দেশের অ্যাপ স্টোরে শীর্ষ জনপ্রিয় গেমগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশে অ্যাপ তৈরির সম্ভাবনা ও সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মূলত অ্যাপলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বেশি গেম তৈরি করি। বাংলাদেশ থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের চাহিদা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গুগল প্লেস্টোরে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি নেই। তাই এখন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এ ধরনের বেশ কিছু গেম তৈরি করেও প্লেস্টোরে আপলোড করতে পারছি না। বাংলাদেশ থেকে গুগল মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি।

এ দেশের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী রুবেল হামজা। তিনি মনে করেন, দেশে প্রোগ্রামিং বা প্রযুক্তি শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, তরুণদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। ‘কী আছে আর কী নেই, তা নিয়ে অজুহাত দেখিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। ’ এ পথে আমাকে অনেক বাধা পাড়ি দিতে হয়েছে। সাহায্য করার মতো কেউ ছিলো না। মনে রাখতে হবে, ‘কোনো কিছু করার জন্য ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। ’

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, রুবেল শুধু কেরানীগঞ্জ নয়, সারাদেশের গর্ব। তিনি বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আইডল। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা তার সঙ্গে আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।