স্যামসাং পণ্য বিস্ফোরণ ঘটনা দুনিয়া জুড়ে যেমন তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, তেমনি করেছে ব্যবহারকারীদের আতঙ্কিত।
প্রথমে গ্যালাক্সি নোট ৭ দিয়ে ঘটনা শুরু হলেও কয়েকদিন পর একই সিরিজের নোট ২’তে একই নজির দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত রোববারও দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ‘পাও’ শহরে জে৫ বিস্ফোরণ হয়। ওয়াশিং মেশিনেও এমন ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন।
এ কারণে বিভিন্ন দেশে নোট৭ বিক্রি বন্ধ,ব্যবহারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অনেক দেশের বিমানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এটি।
এ ঘটনা বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ক্রেতা, ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন মহলে কতোটা প্রভাব ফেলেছে, তা জানতে বাংলানিউজ কথা বলেছে তাদের সঙ্গে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মেম্বার (অপারেশন) মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের বিমান যাত্রীদের নিরাপত্তা সম্পর্কে বলেন, বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও বিমানে ‘নোট ৭’ বহন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো যাত্রী যাতে পণ্যটি বহন করতে না পারেন সে বিষয়ে সকল এয়ারলাইন্স, নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার কোন সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এমন উত্তেজনাকর ঘটনার প্রেক্ষিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন সহ অনেক সাইট ‘নোট ৭’ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, স্যামসাং কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছে আমেরিকাতে, ফোনও বদলে দিচ্ছে। আমার মতে, এখানেও একই কাজ করা উচিত। আর এখানে যেসব সাইটে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে, তাদের উচিত আপাতত বিক্রি বন্ধ করা।
‘নাম না বলা শর্তে’ ই-কমার্স সাইটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘নোট ৭’ সরবরাহ বন্ধ করেছে। তাই যেসব সাইটে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে তাদেরও এটা করা উচিত।
এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলে ইস্টার্ন প্লাজার স্যামসাং শোরুম ম্যানেজার রুহুল আমীন রাজু বাংলানিউজকে বলেন, খারাপ ধারণা হওয়াটা স্বাভাবিক। আগের তুলনায় বিক্রিও কমে গেছে। তার প্রত্যাশা এ সমস্যার সমাধান হবে এবং ভাল ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে মান অক্ষুণ্ণ রাখবে স্যামসাং।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে স্যামসাং এর বিরুদ্ধে ভোক্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এটাই করা উচিত।
ঢাকার খামার বাড়ির বিবিএ সম্পন্ন করা স্যামসাং হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী সালেহ আহমেদ বলেন, আগামীতে স্যামসাং ফোন ব্যবহার করতে চাইলে অনেক ভাবনার বিষয় রয়েছে। কারণ আমারই যে এমন ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
উত্তরার মিম নামের আইইউবিএটি’র শিক্ষার্থী বলেন, আমি জানি যে স্যামসাং এর বিস্ফোরণের ঘটনায় সারাবিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। ফলে ব্র্যান্ডটির প্রতি আমার নিজেরও খারাপ ধারণা হয়েছে।
ফারহান নামের একজন ক্রেতা বলেন, এ ঘটনায় অনেক দেশে অনেকে দ্বগ্ধ হয়েছে। এটি সবার মাঝে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করেছে। ব্র্যান্ডটির প্রতি আগ্রহ একদম কমে গেছে অনেকের। মনে হয়, এই ব্র্যান্ডের ফোন ব্যাবহার না করায় ভাল।
এদিকে স্যামসাং‘র জায়গার তুলনায় নোট ৭’র ব্যাটারি বড় হওয়ার জন্য উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ার দাবিটি দেশের মোবাইল সরবরাহকারী ,আমদানিকারি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা মানতে একেবারে নারাজ।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী সায়েম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় স্যামসাং নিজেই দায়ী। কারণ বোঝা যাচ্ছে ফোনটি বাজারে ছাড়ার আগে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি।
তার মতে, আমদানিকৃত মোবাইল ফোনগুলোর গুণগত মান পরীক্ষার পর বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দেয়া উচিত। বিটিআরসি’কেও ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দ্বগ্ধ, আর্থিক ক্ষতির মতো ঘটনা ঘটার পরও কয়েক দিন যেতে না যেতেই নতুন ফোন এবং অর্থ ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্যামসাং।
এদিকে স্যামসাং বাংলাদেশও কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে পর্যায়ক্রমে পণ্য ছাড়ছে ও বিভিন্ন পণ্যে লোভনীয় অফার দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এমআইটি/এসজেডএম