ঢাকা: ফেসবুকের নিউজফিডে ঘোরাঘুরি করছেন, চোখে পড়লো ‘অমুক. কম’র চমকপ্রদ খবর। শিরোনাম ভাসছে 'অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক আর নেই'! হায় হায়, বলে কী! ভেবেই সেই খবরের লিংকে ক্লিক করলেন, খবর পড়তেও শুরু করলেন।
অথবা লন্ডন শহরে মেয়র নির্বাচন হচ্ছে। শেষ খবর জানতে গুগলে সার্চ দিলেন, 'লাস্ট আপডেট অব লন্ডন ইলেকশন'। কয়েকটা ওয়েবসাইটের শিরোনাম দেখে আকৃষ্ট হলেন একটিতে, 'বরিস জনসন ক্লোজ টু উইন'। ঢুঁ মারলেন তাতে, ওমা, এ যে ঘানার কী এক অখ্যাত ওয়েবসাইট, তাতে আবার কেবল বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন ভাসছে।
কিংবা, একটি নিউজ পোর্টালে খবর পড়ছেন, সেই পোর্টালের স্ক্রিনে ভাসছে কয়েকটি ওয়েবসাইটের খবর সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। এর একটি, 'মালিয়া ওবামা কট অ্যাগেইন এট রেক্লেস পার্টি'। সেখানেও ক্লিক করলেন। পুরো খবর পড়লেন, কিন্তু খবরের ভিত কী? তা-ই খুঁজে পেলেন না।
পাঠককে এভাবে বিভ্রান্ত করে ওয়েবসাইটের হিট বাড়ানো বা বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের দিন শেষ হয়ে এসেছে। গুগল এবং ফেসবুক উভয় প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের ভুয়া খবর ও বিজ্ঞাপন বন্ধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুগল বলেছে, তারা ভুয়া খবর বা বিজ্ঞাপন প্রকাশ বন্ধে তাদের এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার অ্যাডসেন্স ব্যবহার করতে দেবে না। আর ফেসবুক বলেছে, তারাও ভুয়া খবর ছড়ানোর ওয়েবসাইটগুলো যেন কোনো দুর্বলতার সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য নীতিমালাই সংশোধন করে নিচ্ছে। অর্থাৎ ভুয়া বা মিথ্যা খবর যেন প্রদর্শিত না হতে পারে সেজন্য অভ্যন্তরীণ 'জাল' পেতে দেওয়া হবে।
আগে থেকেই ভুয়া খবর বা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধে অক্ষমতার জন্য সমালোচিত হচ্ছিলো গুগল-ফেসবুক। তবে সদ্যসমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভুয়া খবর বেশি ছড়ানোয় এবং তাতে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায়, তুমুল বিতর্ক হজম করতে হচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দু'টিকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মাতৃ প্রতিষ্ঠান আলফাবেটের পক্ষ থেকে গুগলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সার্চ ইঞ্জিনটি গত সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে ভুয়া বা মিথ্যা খবর বা বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভুয়া সাইটগুলোকে অ্যাডসেন্স ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এতে ওই সাইটগুলোর ভুয়া খবর পরিবেশন বন্ধ না হলেও থেমে যাবে তাদের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠার ভাঁওতাবাজি এবং তাদের মালিকদের অর্থ আয়।
আর ফেসবুকের তরফ থেকেও ১৪ নভেম্বর বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ভুল বা ভুয়া খবর-বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ম্য বন্ধে তারা শব্দের বানান বোঝার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফিল্টারিং আরো নিখুঁত হচ্ছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভুয়া খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে ফেসবুকের দায় অস্বীকার করেন এর প্রধান মার্ক জুকারবার্গ। এমনকি তিনি বলেন, ফেসবুক কন্টেন্টের ৯৯ ভাগই নির্ভুল (অথেনটিক)। তবে '১ ভাগ' যে ভেজাল আছে তা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
গুগল-ফেসবুকের সমালোচকেরা বলছেন, সদ্যসমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনে এ দুই সাইটের কারণে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। বিশেষত গুগলে যখন একটি রাজ্যের লাস্ট ইলেকশন রেজাল্ট বলে সার্চ দেওয়া হলো, তখন এলো ডোনাল্ড ট্রাম্প ওন। অথচ সেখানে তখনো ভোট গণনা হচ্ছিলো এবং খানিকটা এগিয়ে ছিলেন হিলারি ক্লিনটন।
এই বিভ্রান্তির দায় মাথায় আসছে বলেই তারা এখন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দু'টির এ পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষেশজ্ঞরা।
যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানো নিয়ে পড়াশোনা করা ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড কম্পিউটিং বিভাগের অধ্যাপক ফিল মাজহার বলেন, অ্যাডসেন্স নিয়ে গুগলের পদক্ষেপ ইতিবাচক। অনেক প্রতিষ্ঠান কেবল অর্থ কামানোর জন্য এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে, এখন এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ হলে সে সাইটগুলোর হিটও কমবে। তাদের মালিকদের ভেজাল উপায়ে অর্থ উপার্জনও বন্ধ হবে।
সারাবিশ্বের জন্য নেওয়া ফেসবুক-গুগলের এই পদক্ষেপে যে বাংলায় ভুয়া খবর ছড়িয়ে 'হিট ব্যবসা' করা ওয়েবসাইটগুলোকেও বেশ বেকায়দায় ফেলবে তা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
এইচএ/টিআই