ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেট অব থিংস এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
ইন্টারনেট অব থিংস এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন।

যুক্তরাষ্ট্রে মূলত কোন কোন উদ্দেশ্যে স্মার্ট সিটি প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়? ব্ল্যাক অ্যান্ড ভেচের এক জরিপে দেখা গেছে, এমন ৩০% প্রজেক্টের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা অথবা খরচ কমানো।

পরিবেশকে বসবাসযোগ্য করার লক্ষে থাকে ২০% প্রজেক্ট। শুধু ব্যবসা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে করা হয় মাত্র ৮% প্রজেক্ট।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৭.১১% যা আমাদের একটি রেকর্ড। দেশের এই ধারাবাহিক উন্নয়ন বজায় রাখতে প্রয়োজন আধুনিক এবং টেকসই প্রযুক্তি।

জনগণের জীবনমান আধুনিকায়নের লক্ষে প্রয়োজন স্মার্ট সিটি ব্যবস্থা।

ইন্টারনেট অব থিংসের মাধ্যমে আধুনিক উপায়ে বিভিন্ন সমস্যার সহজ সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ইন্টারনেট অব থিংসের রূপকল্প শুরু হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে গড়ে উঠেছে ইন্টারনেট অব থিংসের ল্যাব। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই ল্যাবের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে যৌথভাবে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ(ইউল্যাব) এবং ডাটাসফট। ট্রেনিং প্রোগ্রামে দেখাশোনা করছে আইএটি, বুয়েট। আর্থিক সহায়তায় রয়েছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা একঝাঁক মেধাবী তরুণ নিয়ে বাস্তবমুখী বিভিন্ন প্রজেক্ট এর কাজ করছে ডাটাসফট। বর্তমানে তাদের প্রথম ব্যাচে ৬০০ জনের মাঝ থেকে বাছাই করে ৩০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এই ৩০ জন শিক্ষার্থী ক্ষুদ্র গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে ইন্টারনেট অব থিংসের সহায়তায়। গোটা প্রকল্পে তত্ত্বাবধানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলাম্বিয়া এর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর ড. মাইকেল ওয়াং। ডক্টর ওয়াং সরাসরি ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

চিত্র: ইউল্যাব, বুয়েট, আইএটি, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক এবং ডাটাসফটের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ইন্টারনেট অব থিংস ল্যাবমিরপুরে ডাটাসফটের ইন্টারনেট অব থিংস ল্যাব ডাটাসফটের ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ল্যাবের মোট ৩০ জন শিক্ষার্থী গ্রুপে ভাগ হয়ে যে প্রজেক্টগুলো নিয়ে কাজ করছে তা বাস্তবমুখী এবং আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে। বর্তমানে চলমান বেশ কিছু প্রজেক্ট সংক্ষেপে নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

এক. জলযান সুরক্ষা ব্যবস্থা: প্রতিবার ঈদে লঞ্চে করে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। আমরা কিভাবে বুঝবো যে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে কিনা? অসচেতনতার জন্য যাত্রীবাহী লঞ্চের মত জলযান প্রায়ই দুর্ঘটনার মখে পড়ে। একটু সচেতনতা আর সতর্কতা বাচিয়ে দিতে পারে শতশত মানুষের প্রাণ। যাত্রীবোঝাই জলযান মালিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে এই স্মার্ট ডিভাইস। জলযানের ভিতরে লাগানো থাকবে ওভারওয়েট ডিটেকশন টেকনোলজি যার ফলে লঞ্চের যাত্রী ও মালের পরিমান ধারণক্ষমতার বেশি হয়ে গেছে কিনাতা জানিয়ে দিতে পারবে মালিক পক্ষকে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী উঠলে তা সাথেসাথেই সকলে জেনে যেতে পারবেন।

দুই. ইন্টারনেট অব থিংসমেডিসিন সিস্টেম: চিকিৎসার জন্য গ্রামের রোগীরা শহরে ভিড় করে – এই চিরচারিত দৃশ্য বদলে দেওয়ার লক্ষে বিশেষ ধরনের স্মার্ট সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। রোগীরা তাদের এলাকার হাসপাতাল থেকেই শহরের ডাক্তারদের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন। ডাক্তাররা স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর ব্লাড প্রেশার, হার্টবিটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। ফলে ডাক্তার দূরে থেকেও রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবেন।

তিন. গাড়ি ও মোটর বাইকের অ্যান্টি-থেফট সিস্টেম: ঢাকা শহরে মোটরবাইক চুরি যাওয়ার বিড়ম্বনায় প্রায় সকল বাইক মালিককে পড়তে হয়েছে। চুরি যাওয়া বাইক বা গাড়ি ফেরত পাওয়ার আশাও প্রায় কেউ করেন না। এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি স্মার্ট ডিভাইস যার ফলে গাড়ি বা মোটর বাইক চুরি যাওয়ার দুশ্চিন্তা আর করতে হবে না। পার্ক করে রাখা মোটর গাড়ি বা বাইক যদি অন্য কেউ বিনা অনুমতিতে চালানোর চেষ্টা করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মালিকের মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে সেই তথ্য চলে যাবে। তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গাড়ি বর্তমানে ঠিক কোথায় আছে তা দেখানো হবে। ফলে গাড়িকে সহজেই ট্র্যাকিং করে খুজে বের করা যাবে। সেই সাথে গাড়ির মালিক তার মোবাইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোনো সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারবেন। তখন চোর শত চেষ্টা করলেও গাড়ি স্টার্ট করতে পারবে না।

চার. স্মার্ট সিটি ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম: পরবর্তী বাস কখন আসছে এই তথ্য অপেক্ষমান যাত্রীরা আগে থেকে জানতে পারলে তাদের বেশ সুবিধা হয়। পরবর্তী বাস কি খালি নাকি যাত্রীতে ভরা – এই প্রশ্নও যাত্রীদের মনে থেকে যায়। ঢাকা শহরের মত যানজটের শহরে অপেক্ষমান যাত্রীদের সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে এই সাধারন কিছু প্রশ্নের উত্তর। এই লক্ষেই একটি স্মার্ট ডিভাইস তৈরি করা হচ্ছে যা বাসের ভেতরে লাগানো থাকবে এবং সেটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বাসে থাকা যাত্রীদের সংখ্যা ও পরবর্তী বাস স্টপে পৌঁছুতে বাসের আরো কত সময় লাগবে তা জানাতে পারবে।

পাঁচ. কমবয়সিদের জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম: শিশুরা স্কুলে বা মাঠে খেলার নাম করে দূরে কথাও চলে গেল কিনা এই দুশ্চিন্তা সকল অভিভাবকদের মাঝেই থাকে। হাতে ব্যান্ডের মত করে পড়ার উপযোগী এই ট্র্যাকিং ডিভাইস সারাক্ষণ শিশুদের অবস্থান ট্র্যাক করবে এবং তারা নির্দিষ্ট এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গেলেই সেই তথ্য জানিয়ে দেবে অভিভাবকদের। শিশু হারিয়ে গেলেও তাকে এই ডিভাইসের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে।

ছয়. যানবাহন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা: অধিক গুরুত্বপূর্ণ (যেমন: সামরিক স্থাপনা, এমব্যাসি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি) এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সেখানকার যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন একটি ব্যবস্থা করা হচ্ছে যার ফলে নিরাপত্তাকর্মীরা সহজে বৃহৎ এলাকা মনিটর করতে পারবেন।

সাত. নদী দূষণ নির্ণয়: আমাদের শহরের চারপাশের নদীগুলো দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। এই ডিভাইসের মাধ্যমে জানা যাবে যে কোন কোন কেমিক্যালের আধিক্যের জন্য নদী দূষণ হচ্ছে। এই তথ্য নদীর পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আট. গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগা রোধ করা: গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার মত একটি ঘটনা শত শত মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এমন দুর্ঘটনা হলে দেশের ভাবমূর্তিও বিপন্ন হয়। এই ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে কিনা তা তত্ক্ষণাৎ নির্ণয় করার জন্য। যার ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে এটি সবাইকে দ্রুত সতর্ক করতে পারবে। সেই স্থানের আগুন নেভানোর চেষ্টাও করবে ডিভাইসটি। শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগলে যে রুমে আগুন লেগেছে সেই রুমের ইলেকট্রিক সার্কিট কাট করে দিবে ডিভাইসটি, যার ফলে অন্য ফ্লোরে আগুন না ছড়াতে পারে।

নয়. স্মার্ট গ্যাস ডিটেকশন সিস্টেম: সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে দেশের বেশ কিছু পরিবারকে। এই গ্যাস ডিটেকশন সিস্টেম চুলার গ্যাস লিকেজ হতে থাকলে সবাইকে সতর্ক করে দিবে। যার ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ হওয়ার সাথে সাথে মানুষের জীবনও বেঁচে যাবে।

দশ. স্মার্ট পদ্ধতিতে ঘুম থেকে ওঠা: ঘুম ভাঙ্গার জন্য অনেক সময় অ্যালার্ম যথেষ্ট হয় না। এই ডিভাইসটি সকাল বেলা মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সময়ে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিবে যার ফলে স্কুলে বা অফিসে যাওয়ার জন্য দেরি হওয়ার দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না।

এগারো. অন্ধদের জন্য রিস্টব্যান্ড: আমাদের দেশে অন্ধদের জন্য স্বল্প খরচে কোন স্মার্ট ডিভাইস নেই বললেই চলে। অন্ধ ব্যক্তিরা চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়েন। তাদের সুবিধার্থে তৈরি করা হচ্ছে এমন এক ধরনের স্মার্ট ডিভাইস যা অন্ধরা হাতে পড়লে তার সামনে কয়েক মিটার পর্যন্ত কোন বাধা বা বস্তু আছে কিনা তা জানতে পারবে। ফলে তার চলাফেরা সহজ হবে।

বারো. দরজার জন্য আধুনিক তালা: মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরের দরজার তালার ব্যবস্থা করা হবে। অ্যাপের মাধ্যমে ঘরের মালিক তার ঘরের তালা খুলতে বা লাগাতে পারবেন। কেউ জোর করে তালা খোলার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে মালিকের মোবাইলে সেই তথ্য চলে যাবে ফলে মালিক সতর্ক হতে পারবেন।

তের. স্মার্ট ল্যাম্পপোস্ট সিস্টেম: শহরের বিদ্যুৎ খরচ কমাতে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলোকে স্মার্ট করা ছাড়া উপায় নেই। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এই গৎবাঁধা সময় আলোর প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক আমাদের ল্যাম্পপোস্ট জ্বলতে থাকে। স্মার্ট ল্যাম্পপোস্ট পরিবেশের আলো পরিমাপ করে যখন অন্ধকার হবে শুধু তখনই আলো দেবে। সেই সাথে রাস্তায় গাড়ি বা মানুষ না থাকলে এই বাতি বন্ধ থাকবে। চলমান গাড়ি বা মানুষ রাস্তায় থাকলে এটি মোশন ডিটেক্টরের মাধ্যমে তা বুঝতে পারবে এবং শুধু সেখানকার বাতি জালাবে।

চিত্র: স্মার্ট ল্যাম্পপোস্ট সিস্টেম এর প্রোটোটাইপ
চৌদ্দ. স্মার্ট গার্বেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: শহরের কোন ডাস্টবিন ভরে গেছে আর কোনটি খালি আছে তা এই ডিভাইসের মাধ্যমে নির্ণয় করা যাবে। ফলে ময়লা সংগ্রহকারীদের সুবিধা হবে। সেই সাথে কোন এলাকায় বেশি ডাস্টবিন প্রয়োজন সেই তথ্য পাওয়া যাবে এই ডিভাইসের মাধ্যমে।

চিত্র:স্মার্ট গারবেজ সিস্টেম এর হার্ডওয়্যার এবং প্রোটোটাইপ
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা তরুণ প্রকৌশলীরা তাদের প্রজেক্টের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাকলাইন শাহরিয়ার এবং ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সাগর চক্রবর্তী মিলে ইনডোর লোকেশন ম্যাপিং তৈরি করছেন। এই ডিভাইস পড়ে থাকা কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন এলাকা থেকে বাইরে গেল কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। নির্দিষ্ট এলাকার মাঝে বাচ্চাদের ট্র্যাক করার জন্য এটি ব্যবহৃত হতে পারে। বিকন ব্যবহার করে এই ট্র্যাকিং ডিভাইসটি তৈরি করা হচ্ছে যার ফলে একটি ব্যাটারি দিয়েই ৪-৫ বছর চালানো যাবে। সব মিলিয়ে এই ডিভাইসের খরচ পড়তে পারে প্রায় বারশো টাকার মত। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ শরিফ হোসেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল আলিম শাকিব কাজ করছেন স্মার্ট গারবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে। ঢাকা শহরের ময়লার বিন অতিক্রম করার সময় দুর্গন্ধে সবাইকে নাকে হাতচাপা দিতে হয়। বিনগুলো ভরে গেলেও ময়লা সংগ্রহ করে তা আবার ব্যবহার উপযোগী করার মত কেউ আসে না। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিটি গারবেজ কন্টেইনার বা বিনে বিশেষ ধরনের সেন্সর লাগানো হবে যা বিনের ফিল্ড লেভেল পরিমাপ করে তা ভরা না খালি সেটা নির্ণয় করতে পারবে। বিন ভরে গেলে সেই তথ্য পাঠানো হবে মিউনিসিপালের ডাটাবেজে যেখান থেকে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে যে কোন গারবেজ কন্টেইনার ভরে গেছে। তারা সেই তথ্য মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পাঠাতে পারবে ময়লা সংগ্রহকারী কর্মীদের কাছে। এর ফলে শহর দ্রুত পরিষ্কার করা যাবে এবং ডাটা এনালাইসিস করে বোঝা যাবে যে কোন এলাকায় ময়লার বিন বেশি দরকার আর কোন এলাকায় কম হলেও চলবে। গারবেজ বিনে লাগানো একটি ডিভাইস দিয়েই আশেপাশের বেশ কয়েকটি বিন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি ডিভাইস দুই হাজার টাকায় বানানো সম্ভব। স্মার্ট ল্যাম্পপোস্ট প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ব্যাচেলর করা তাইমুর এবং কাঙ্খিতা।

রাস্তায় যেসকল ল্যাম্পপোস্ট জ্বলে তা কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় আমাদের নেই। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে দেখতে হয় যে কোনটা ঠিক আছে। ইন্টারনেট অব থিংস ব্যবহার করে তারা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করছেন যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার সকল ল্যাম্পপোস্ট একটি কেন্দ্র থেকেই নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ করা যাবে। সেই সাথে সেন্সরের মাধ্যমে ল্যাম্পপোস্টগুলো বুঝতে পারবে যে কখন আলোর প্রয়োজনীয়তা আছে আর কখন নেই। যখন প্রয়োজন থাকবে না তখন তা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারবে। পরিবেশে যথেষ্ট আলো থাকলে ল্যাম্পপোস্টে আলোর উজ্জলতাও কমে যাবে বিদ্যুৎ বাঁচানোর লক্ষে। বুয়েটের রেদোয়ান হোসেন এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কিবরিয়া কাজ করছেন মোটর বাইকের অ্যান্টি-থেফট সিস্টেম নিয়ে। বর্তমানে বাজারে যেসব অ্যান্টি থেফট সিস্টেম পাওয়া যায় তা মূলত হর্ন বাজিয়ে সতর্ক করে। রেদোয়ান এবং কিবরিয়া এমন সিস্টেম তৈরি করছেন যেখানে বাইক মালিককে মোবাইলের এসএমএস এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। ফলে বাইক মালিক দূরে থাকলেও সাথে সাথেই জেনে যাবেন যে তার বাইক অন্য কেউ চুরি করার চেষ্টা করছে। মালিক তখন এসএমএসের মাধ্যমে বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার বাইক থামিয়ে দিতে পারবেন। ফলে চোর বাইক নিয়ে পালাতে পারবে না। ওয়েবসাইট ও ডাটাবেজ এনক্রিপশনের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে ফলে ডাটা চুরি হওয়ার ভয় নেই। ইঞ্জিনচালিত যে কোনো বাহনে এই অ্যান্টি থেফট সিস্টেম কাজ করবে। ডাটাসফটের তরুণ প্রকৌশলীরা তাদের প্রজেক্টের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এখন তারা প্রজেক্টের ফলাফল এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়ে তাদের ইন্টার্নশিপ শেষ করবেন। প্রজেক্ট শেষে তারা চাইলে ডাটাসফটে যোগদান করতে পারবেন।

চিত্র: IoTল্যাবে প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটরা
ইউল্যাব এবং ডাটাসফটের ইন্টারনেট অব থিংস ল্যাবের প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশে নতুন এক যুগের সুচনা হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে মাথা উঁচু করে এক কাতারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। এই ল্যাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা জাপানের মত প্রযুক্তিতে উন্নত দেশে যেন কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জাপানের টোকিয়োতে ডাটাসফটের অফিস খোলা হয়েছে এবং NEC, Sony এর মত কোম্পানিদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে কমপক্ষে ৫% জাপানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এই প্রজেক্টগুলো বাংলাদেশের তরুন প্রতিভাবানদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিবে। বিশেষ করে ডাটাসফটের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত এবং অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে। ইন্টারনেট অব থিংস হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের বলিষ্ঠ স্তম্ভ, এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প।

প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন: বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। সহযোগিতায়: মোঃ শাকিফ ফেরদৌস এবং খায়রুন নাহার

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
আরআইএস/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।