ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

এনটিটিএনকে গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাতে সহায়তা পুরোপুরি মিলছে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
এনটিটিএনকে গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাতে সহায়তা পুরোপুরি মিলছে না

ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। তারই লক্ষ্যে সে বছরই ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরদের জন্য লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া শুরু করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। লাইসেন্স দিতে শুরু করার এক দশক পরে এসে এই খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম অপারেটর হিসেবে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম এর জনসংযোগ, সরকারি সম্পর্ক ও রেগুলেটরি বিভাগের প্রধান আব্বাস ফারুক। সঙ্গে ছিলেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাওন সোলায়মান।  

বাংলানিউজ: সরকার আপনাদের এনটিটিএন লাইসেন্স দেওয়ার ১০ বছর পেরিয়েছে। যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার এনটিটিএন অপারেটরদের লাইসেন্স দেয়, সেই উদ্দেশ্য পূরণে আপনারা কতোটুকু সফল হয়েছেন?

আব্বাস ফারুক: সরকার ২০০৯ সালে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছিল।

লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে পাঁচটি; দুইটি বেসরকারি এবং তিনটি সরকারি। সরকারের লাইসেন্স প্রদানের প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে এনটিটিএন লাইসেন্স ছাড়া অন্য কোনো অপারেটর ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারবে না। দ্বিতীয়, এক্সেস নেটওয়ার্ক থেকে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে পৃথকীকরণ। তৃতীয়, নগরের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক খুঁটির অবৈধ ঝুলন্ত তারগুলো এনটিটিএন অপারেটদের ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কে স্থানান্তরিত করা। এনটিটিএন অপারেটররা এই তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে আসছে। আমি যদি আমার ফাইবার অ্যাট হোমের কথাই বলি, আজ আমরা ৮টি বিভাগীয় শহর, ৬৪টি জেলা, ৪৮৫টি উপজেলা এবং তিন হাজার ৫০টি ইউনিয়ন পর্যায়ে রোবাস্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। বর্তমানে সারাদেশে আমাদের নেটওয়ার্ক ৪৬ হাজার কিলোমিটার এরও অধিক এলাকাজুড়ে বিস্তৃত আছে। তাছাড়া ঢাকা সিটির বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলে থাকা অবৈধ তার সমূহ অপসারণের জন্য একটি বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি আমরা। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে আমরা এফটিটিএইচ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। যা প্রতিটি বিল্ডিংয়ে দেওয়া হয়েছে।  আমাদের দিক বিবেচনায় আমরা শতভাগ সফল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এখনো আমরা আমাদের লাইসেন্সের তিনটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি।  
 
বাংলানিউজ: এনটিটিএন অপারেটর হিসেবে আপনারা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন?

আব্বাস ফারুক: আমাদের এনটিটিএনকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য অর্থাৎ উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে সহায়তা দরকার তা আমরা এখনো পুরোপুরি পাইনি। এখনো বিভিন্ন অপারেটর রক্ষণাবেক্ষণের নামে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। ডার্ক কোর বা শূন্য ক্যাবল নিয়ে ট্রান্সমিশন যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে সেগুলোর উন্নয়ন সাধন করছে। বিভিন্ন ভেন্ডর বা ঠিকাদার এর মাধ্যমে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করছে এবং তা পরিচালনা করছে। আপনি ঢাকা শহরে প্রধান প্রধান সড়কের দিকে তাকালে দেখবেন এখনো প্রতিটি জায়গায় হাজার হাজার কিলোমিটার তার বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলে আছে। কিন্তু দেখবেন প্রতিটি প্রধান প্রধান সড়কেই এনটিটিএন অপারেটরদের ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক রয়েছে। নীতিমালার এই উদ্দেশ্যগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এবং যেসব অপারেটর অবৈধভাবে এসব সেবা নিচ্ছে বা দিচ্ছে তাদের টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হলে এনটিটিএন অপারেটররা দ্রুততম সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে পারবে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
 
বাংলানিউজ: আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনাদের সেবা নিতে গেলে চড়ামূল্য দিতে হয়।

আব্বাস ফারুক: দেখুন, বর্তমানে ৫টি এনটিটিএন অপারেটর বাজারে রয়েছে। যা আমাদের মতো একটা ছোট দেশের জন্য অনেক বেশি। মূলত আমাদের ব্যবসা হলো টেলিকমিউনিকেশনের জন্য রাস্তা অর্থাৎ ফাইবার অবকাঠামো তৈরি করা। এই সড়ক বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী অপারেটররা (মোবাইল, আইএসপি, আইআইজি, আইজিডব্লিউ ইত্যাদি) ব্যবহার করে তাদের স্ব স্ব সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের নেটওয়ার্ক একটি ‘কমন’ নেটওয়ার্ক  অর্থাৎ সব অপারেটরদের ব্যবহারের জন্য তৈরি। আমাদের নেটওয়ার্কের ধারণক্ষমতা অপরিসীম; চাহিদা অনুযায়ী যার ক্ষমতা বাড়ানো যায়। আর আমাদের মূল্য আমরা যথার্থ নিচ্ছি কি-না তা দেখভাল করে বিটিআরসি। ২০০৯ সালে একটি এসটিএমের দাম প্রায় ১৪ লাখ টাকা ছিল। যা বর্তমানে ৬০ হাজার টাকারও নিচে। এই যে মূল্য কমে গেছে এটা অবশ্যই এনটিটিএন অপারেটরদের কল্যাণে। সবাই যতোবেশি এনটিটিএনে আসবে, ততোবেশি এই মূল্য কমে যাবে।  
 
বাংলানিউজ: অপারেটরদের আরও অভিযোগ, সব জায়গায় আপনাদের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।

আব্বাস ফারুক: আমরা আমাদের নেটওয়ার্কের উপস্থিতির হিসেব আমাদের কাস্টমারদের দিয়ে থাকি। এছাড়া বিটিআরসিকে আমরা আমাদের নেটওয়ার্কের সব তথ্যাদি দিয়ে থাকি, যা বাধ্যতামূলক। সরকার আমাদের লাইসেন্স দিয়েছে কিছু বাধ্যবাধকতা দিয়ে এবং এর জন্য ব্যাংক গ্যারান্টিও নিয়েছে। সরকারের সমস্ত বাধ্যবাধকতা আমরা সময়মত পূরণ করেছি এবং এই বিষয়ে কমিশন আমাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের ছাড়পত্রও দিয়েছে। এতো সব প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত আমাদের নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। কাজেই অপারেটরদের যে অভিযোগটি তা সঠিক নয়।  
 
বাংলানিউজ: এনটিটিএনের ব্যবসাকে উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা আশা করেন?

আব্বাস ফারুক: এনটিটিএন অপারেটররা প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। যা ওই সমস্ত এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করছে। অন্যান্য দেশে, সরকার নিজেই এই সমস্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে। কারণ এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এর রিটার্ন অনেক দেরিতে আসে। কিন্তু সরকারের দেওয়া এই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। সরকার যদি আমাদের কিছু সহায়তা দেয়, তাহলে আমরা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে আরও উন্নততর সেবা প্রদানে সক্ষম হবো। এসব সহযোগিতার মধ্যে আছে- এনটিটিএন গাইডলাইনের মূল উদ্দেশ্যগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যেসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন সেবা দিচ্ছে অথবা নিচ্ছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা; অন্তত তাদের এসব কাজ বন্ধ করা, ট্রান্সমিশন যন্ত্রাংশ কর রেয়াতের আওতায় নিয়ে আসা এবং ট্রান্সমিশন সেবাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সেবা হিসাবে ঘোষণা করা, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরির ক্ষেত্রে ‘রোড কাটিং জরিমানা’ মওকুফ করা, এনটিটিএন লাইসেন্স ছাড়া অন্য অপারেটর কর্তৃক যে কোনো ট্রান্সমিশন যন্ত্র আমদানি বন্ধ করা এবং সর্বোপরি এখনই এক্সেস নেটওয়ার্ক থেকে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে পৃথক করে ঘোষণা দেওয়া।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।