সোমবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এক বছর পূর্তি হবে।
‘১২ মে নাগাদ তারা ফাইবার অপটিকসের মাধ্যমে গাজীপুরের সজীব ওয়াজেদ গ্রাউন্ড স্টেশনে নিয়ে যাবে, সেখান থেকে আপলিঙ্ক করবে এবং আবার ডাউনলিঙ্ক করবে সেজন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ সবার সঙ্গে আলোচনা করে দর নির্ধারণ করবে। ’
গত বছরের ১২ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এরপর ৩১ জুলাই এই স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সার্বক্ষণিক মহাকাশে থাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথম কয়েক মাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া দেখভাল করলেও গত বছরের ৯ নভেম্বর মালিকানা হস্তান্তর করে বাংলাদেশের কাছে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে, যার মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়নশিপের সম্প্রচারের মাধ্যমে।
অ্যাটকো’র সঙ্গে বৈঠক দেশের চ্যানেলগুলো সিরিয়ালের শুরুতে রাখার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্ত আগেও ছিল এবং এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে এই সিদ্ধান্ত মানা হয় না। ক্যাবল অপারেটররা বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে প্রথমে সিরিয়ালে রাখার কথা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী। প্রথমে সরকারি পরে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো। এ ব্যাপারে আগেও একটা সিদ্ধান্ত ছিল এখানে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।
তিনি বলেন, আমরা আজকে পুনরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমস্ত ক্যাবল অপারেটরকে নোটিফাই করব যে, বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তারা সিরিয়ালে প্রথম থেকে রাখবে, প্রথমে সরকারি টেলিভিশন এবং এরপর সম্প্রচারের তারিখ অনুযায়ী, অর্থাৎ যে টেলিভিশন চ্যালেন সবার আগে সম্প্রচারে গেছে তারা সিরিয়ালের আগের দিকে থাকবে। পরে বিদেশি চ্যানেলগুলো থাকবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি অন্যান্য দেশেও দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা এই ব্যাপারে ইতোপূর্বে ক্যাবল অপারেটরদের নোটিফাই করেছি এবং দ্বিতীয়বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর। আমরা আবার পুনরায় নোটিশ জারি করব। ১ এপ্রিলের পর থেকে কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে, সরকারের এই নির্দেশনা পালন না করে তাহলে আমরা এনফোর্সমেন্টে যাব।
বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৪৪টি টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩০টির বা তার বেশি সম্প্রচারে আছে। এই ৪৪টির বা অন্য টেলিভিশন চ্যানেল নামে যেগুলো করা সেগুলো অননুমেদিত। সেগুলোর কোনো অনুমোদন নাই বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
অ্যাটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলাপ হয়েছে। অত্যন্ত মিডিয়া বান্ধব হাছান মাহমুদ, আগে থেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগে ছিলেন, আজ তিনি তথ্যমন্ত্রী। আমরা তার সাথে খোলামেলা আলাপ করেছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অত্যন্ত সিক হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞাপন মার্কেট ছোট এবং বিজ্ঞাপন যতটুকুই ছিল ততটুকুর একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হচ্ছে। আর একটা বড় অংশ ডিজিটাল মিডিয়ামে অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করার ব্যাপারে আমরা তার সাথে কথা বলেছি এবং তার কাছ থেকে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি।
মোজাম্মেল হক বলেন, ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের এক বছর, কিন্তু হ্যান্ডওভার হয়েছে নভেম্বরে। যেহেতু অত্যন্ত উন্নত একটি প্রযুক্তিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, আমাদের প্রযুক্তির চেয়ে উন্নত। আমাদের টিউন করতে একটু সময় লেগেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সকল ডেটা ফাইবার অপটিক করে সজীব ওয়াজেদ গ্রাউন্ড স্টেশনে নিয়ে যাব সেখান থেকে আপলিঙ্ক করব এবং সকল ক্যাবল অপারেটরে ডাউনলিঙ্ক হবে। সেজন্য এলএনবি এবং ডিশ একটু ঘোরাতে হবে। স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ সি ব্যান্ডের এলএনবি সরবরাহ করবে। তবে আমাদের রিসিভার আগেরগুলি কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমরা অ্যাটকো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যে কয়টা চ্যানেল আছি আমরা সম্মিলিতভাবে একটি বান্ডেলে অথবা দুটি বান্ডেলে নিউজ এবং জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথবা একই বান্ডেলে আমরা পে-চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই।
ক্যাবল অপারেটররা দর্শকদের কাছ থেকে যে সাবস্ক্রিপশনটা নেয় তার অত্যন্ত যৌক্তিক একটা অংশ আমাদের দেওয়ার জন্য আবেদন করব এবং সেভাবেই আমরা লঞ্চ করব।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, বিদেশি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেছেন, অবৈধ কাজ দীর্ঘদিন চলে আসছে। আমরা অতীতে আন্দোলন করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, তিনি আশ্বস্ত করেছেন, মন্ত্রীও আশ্বস্ত করছেন।
ক্যাবলের সিরিয়ালগুলো সরকারি চ্যানেলের পরে জন্মের ক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য সচিব আবদুল মালেক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, অ্যাটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং অ্যাটকো প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯/আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমজেএফ