ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ই-কমার্সে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় বাজার

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৯
ই-কমার্সে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় বাজার দারাজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হক। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

২০১২ সালে জার্মান ভিত্তিক রকেট ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাত্রা আরম্ভ করে ই-কমার্স সাইট দারাজ। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারে প্রায় ৪৬ কোটি গ্রাহক থাকা দারাজ বাংলাদেশের বাজারে আসে ২০১৫ সালে। আসছে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য বৈশাখী মেলা চলছে দেশের সর্ববৃহত এ ই-শপে। এমনি সময় বাংলানিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে মুখোমুখি হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হক। খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন বেশকিছু চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাওন সোলায়মান।

বাংলানিউজ: প্রথমেই দারাজ অনলাইন বৈশাখ মেলা নিয়ে জানতে চাচ্ছি।
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: বাংলাদেশে চতুর্থ বারের মতো এ ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছি আমরা।

২৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে; প্রায় ১৭ দিনের ক্যাম্পেইন। প্রায় ১৯ লাখ পণ্য আমাদের ওয়েবসাইটে থাকছে এবার। তার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ পণ্যে বিশেষ মূল্যছাড় পাবেন গ্রাহকরা। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নতুন বছরকে উদ্দেশ্য করেই এক্সক্লুসিভ কিছু পণ্যের সমাহার থাকছে এবার।

পাশাপাশি ক্রেতাদের কেনাকাটার সুবিধার কথা মাথায় রেখে দারাজ অফার করছে পেমেন্ট পার্টনারদের মাধ্যমে ব্যাংক ডিসকাউন্ট এবং বিকাশ ক্যাশব্যাক অফার। লঙ্কা বাংলার ভিসা ও মাস্টার কার্ডে লেনদেনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় (সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা), সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় (সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা), ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনেদেনে পাওয়া যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় (সর্বোচ্চ ১,০০০ টাকা) এবং সিটি ব্যাংক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্যছাড় (সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা) রয়েছে। এছাড়াও দারাজে ২৭শে মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে থাকছে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ (প্রতি কাস্টমার সর্বোচ্চ ১,০০০ টাকা পর্যন্ত, প্রতি লেনদেন ৫০০ টাকা পর্যন্ত) ক্যাশব্যাক সুবিধা।
 
এছাড়াও এ ক্যাম্পেইনের অন্যান্য পার্টনারদের পক্ষ থেকে নতুন নতুন উপহার থাকবে। গেমিং জোন, কুইজ কনটেস্টের মাধ্যমে ডিসকাউন্ট ভাউচার পাবেন গ্রাহকেরা।
 
বাংলানিউজ: পণ্যের ডেলিভারি নিয়ে একটা অভিযোগ আসে আপনাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই...
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: আসলে অনেক বড় পরিমাণে যেখানে আমরা অর্ডার হ্যান্ডেল করি সেখানে কিছুটা বিলম্ব আমাদের দিক থেকে হয়ে যায়। তবে এর পরিমাণ হয়তো ০.০৫ শতাংশের কিছু বেশি। আমাদের ই-শপে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ১৫টি অর্ডার পড়ে। প্রতিদিন ৪০ হাজারেরও বেশি পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেই। পণ্য পৌঁছে দেওয়া বা ডেলিভারি আরও সহজ করতে ঢাকার মধ্যে নতুন ৪টি এবং ঢাকার বাইরে ১৩টি হাব চালু করেছি। এছাড়াও বাংলাদেশের সবথেকে বড় ‘সর্টিং সেন্টার’ (পণ্য ডেলিভার হওয়ার আগে যেখানে রাখা হয়) তৈরি করেছি আমরা। আর এ সবকিছুই করছি যেন গ্রাহকদের দ্রুততম সময়ে পণ্য সরবরাহ করা যায়।   
 
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের ই-কমার্সকে বাজারকে দারাজ কীভাবে বিশ্লেষণ করে?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: আমাদের কাছে বাংলাদেশ খুবই সম্ভাবনাময় একটি বাজার। কিছুদিন সময় লাগবে; ২-৩ বছর; এটাকে পরিণত একটা জায়গায় যেতে। প্রচুর প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী এবং গ্রাহক আছেন যাদের মধ্যে ইকমার্স নিয়ে খুব আগ্রহ আছে। সেলাররা ভিন্নধর্মী পণ্য এবং প্যাকেজ নিয়ে বাজারে আসছে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক যা ইঙ্গিত দেয় যে, সামনের দিনগুলোতে এই খাত আরও বড় হবে।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দারাজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মস্তাহিদল হক।  ছবি: শাকিল আহমেদবাংলানিউজ: দেশীয় মার্কেটে দারাজের দখলদারিত্ব বা অবস্থান কেমন?
সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: যদি এফ-কমার্স (শুধু ফেসবুক ভিত্তিক ই-শপ) বাদ দেই তাহলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ইকমার্স খাতের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ লেনদেন দারাজেই হয়। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের ইকমার্স বাজারে দারাজ শীর্ষস্থানে রয়েছে।  
 
বাংলানিউজ: বাংলাদেশে আমাজন আসতে যাচ্ছে। বিষয়টি দারাজের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ কী না? হলে কীভাবে মোকাবেলা করবেন?

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: আমরা আসলেই মুখিয়ে আছি যে, বাজারে বড় এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীরা আসুক। কারণ এখন আমাদের বাজেটের ৮০ ভাগই খরচ হয় ই-কমার্সে নতুন গ্রাহক আনতে, তাদের আগ্রহী করে তুলতে। এখন যদি অন্যান্য কোম্পানি আসে তাহলে এই কাজটি আমাদের আর একার করতে হবে না। সবাই মিলে এ ইন্ডাস্ট্রিকে বড় করা যাবে। তাই আমাজন বা আরও কোনো বড় প্রতিষ্ঠান এ মার্কেটে আসতে চাইলে তা সবার জন্যই একটি বড় সুযোগ। বাংলাদেশের বাজারের যে আকার তাতে চার থেকে পাঁচটা বড় বড় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান সহজেই ব্যবসা করতে পারবে।
  
বাংলানিউজ: দেশের ই-কমার্স খাতের গ্রাহকদের দারাজ নিয়ে অনেক অভিযোগ। এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? গ্রাহকদের অভিযোগগুলো কি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়?

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: আমরা এক একটি অভিযোগ খুব গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখি। আমাদের বড় একটি দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বদা গ্রাহকদের অভিযোগ শুনছেন এবং সমাধান দিচ্ছেন। গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রায় ৩০০ জন এজেন্টই আছেন। প্রতিটি বিভাগে গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অন্তত একজন করে সদস্য আছেন যারা সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ জন। গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ আমাদের চিফ কমার্সিয়াল অফিসার এবং চিফ অপারেশনাল অফিসার পর্যন্ত পৌঁছায়। যদি সেখানেও সমাধান না হয় তাহলে আমি নিজেও অভিযোগ নিষ্পত্তিতে কাজ করি। সত্যি কথা বলতে কি, দারাজের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের গুরুতর অভিযোগ সপ্তাহে মাত্র ১২ থেকে ১৫টি। আমরা যত অর্ডার হ্যান্ডেল করি তার তুলনায় এ সংখ্যা ০.০১ শতাংশের মতো। তবুও এটাই সত্য যে, আমরা প্রতিটি অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তির চেষ্টা করি।
  
বাংলানিউজ: গ্রাহকদের ক্যাশ অন ডেলিভারির (সিওডি) থেকে প্রি-পেমেন্টের জন্য উৎসাহিত করে থাকে দারাজ। অথচ প্রি-পেমেন্টের পর অর্ডারে কোনো সমস্যা হলে রিফান্ড পেতে গ্রাহকদের অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: আমরা প্রি-পেমেন্টের জন্য গ্রাহকদের উৎসাহিত করি কারণ আমাদের যারা ব্যাংকিং পার্টনার থাকেন তাদের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে গ্রাহকেরা একটা ডিসকাউন্ট পান। এছাড়াও দারাজকে বাদ দিলে ই-কমার্সে বাংলাদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্ডার সিওডি’তে হয়। যেখানে দারাজে ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সিওডি হয়। তবে প্রি-পেমেন্টের পরেও আমাদের অর্ডার নিয়ে গ্রাহকদের খুব একটা অভিযোগ থাকে তা কিন্তু না। পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে, তা হয়তো ০.৫ শতাংশ। আর এ অভিযোগ প্রি-পেমেন্টের জন্য না বরং অন্য কোনো কারণে। পক্ষান্তরে পণ্যের প্রি-পেমেন্ট করা থাকলে আমাদের দিক থেকে একটি দায়বদ্ধতা থাকে যে, পণ্যটি গ্রাহকের কাছে যেন দ্রুততম সময়ে যায়। তাদের কোনো সমস্যা হলে যেন দ্রুত তার সমাধান হয়। তাই বলা যায়, প্রি-পেমেন্টে গ্রাহকদেরই বরং সুবিধা হয়।  
 
বাংলানিউজ: গত বছর দারাজকে কিনে নিয়েছে চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা। এতে আমরা কী পেলাম? এতে দারাজেই বা কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে প্রযুক্তিতে। এখন আমাদের যত প্রযুক্তি আছে সবকিছুই নতুন; বিশেষ করে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আমাদের অ্যাপস। এছাড়াও আলিবাবা আসার কারণে আমাদের বিনিয়োগ বেড়েছে। যে কারণে আমাদের ব্যবসায়িক উন্নতি যেটা আরও দুই বা তিন বছর পর হতো সেটা এবছরই পাচ্ছি আমরা। মোটকথা, বড় আকারের বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত বৈপ্লবিক পরিবর্তন পেয়েছি আমরা।
 
বাংলানিউজ: দারাজ কী কখনও নাম পরিবর্তন করবে বা আলিবাবা নামে ব্যবসা পরিচালনা করবে?

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক: মনে হয় না; এটা হয়তো দারাজ নামেই থাকবে। কারণ আমরা বিগত প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে বাজারে আছি। দারাজের ব্র্যান্ড নামটা সবার মধ্যে পরিচিত। এখন নাম পরিবর্তন করলে গ্রাহকেরাও বিভ্রান্ত হতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এসএইচএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।