গত বছরের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল হতে ‘স্পেস এক্স’ এর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী যান ফ্যালকন-৯ এর মাধ্যমে স্থানীয় সময় ৪টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয়।
মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান হয় স্যাটেলাইটটির।
মূলত দেশের দূর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ স্থাপন, নিরবিচ্ছিন্ন সম্প্রচার সেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সমিশন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগ্য ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখাসহ বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
উৎক্ষেপণের সময় থেকে স্যাটেলাইটটির মেয়াদকাল ১৫ বছর। তবে বর্তমানে এক হিসেব অনুযায়ী, এটির মেয়াদকাল ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্যাটেলাইটটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান বিসিএসসিএল এর সূত্রমতে, স্যাটেলাইটটির বিভিন্ন কারিগরি দিক থেকে যে আয় হবে তা দিয়ে মেয়াদকালের অর্ধেক সময়েই উঠে আসবে এর নির্মাণ ও উৎক্ষেপণ ব্যয়। আর বাকি সময়গুলোতে যে অর্থ আয় হবে সেটি হবে মুনাফা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকে সফলভাবে কাজ করছে জানিয়ে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, উৎক্ষেপণের পর থেকে এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও স্যাটেলাইটটি কাঙ্ক্ষিত সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। থ্যালেস এলেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়েও আমরা সফলভাবে সাফ ফুটবল গেমসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। এছাড়া বিটিভি এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানার কয়েকটি চ্যানেল পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। খুব দ্রুতই দেশের অধিকাংশ টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে স্বাভাবিক সম্প্রচারে আসবে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নির্মাণের পেছনের উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের একটি নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকতে পারে এই ভাবনার সূচনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কালের। তিনি ১৯৭৫ সালের জুন মাসের ১৪ তারিখে বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় মহাকাশে দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সূযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেটিকে বাস্তবায়ন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উন্নত টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক ডিজিটাল সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। টেলি-মেডিসিন, ই-লার্নিং বা ই-এডুকেশনের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে দুর্গম অঞ্চলে শহরের মতো সুবিধা দেওয়া যাবে। ডিটিএইচসহ (ডিরেক্ট টু হোম) স্যাটেলাইটভিত্তিক নতুন সেবার মাধ্যমে নতুন আয়ের সুযোগ হবে এবং এসব বিভিন্ন সেবায় লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
‘‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে বিদেশি স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীলতা আর নেই এবং বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রদেয় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ শুধু আমাদের প্রত্যাশাই পূরণ করবে না বরং আমাদের যে, মহাকাশে আরও স্যাটেলাইট প্রেরণ করা প্রয়োজন সেই চাহিদাও সামনে নিয়ে আসবে। আর তাই আমরা এখন বঙ্গবন্ধু ‘স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের জন্য কাজ করছি। ’’
স্যাটেলাইটের কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবার প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে যা দেশের বেকারত্ব কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এছাড়া স্যাটেলাইটটি এখন আমাদের সন্তানেরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি মনে করি, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ভূমিকা হবে সুদূর প্রসারী।
‘‘হেনরী কিসিঞ্জারের তলাবিহীন দেশটি আজ পৃথিবীর মধ্যে মাত্র ৫৭তম দেশ হিসেবে তার স্যাটেলাইটটির গায়ে ‘জয় বাংলা’ লিখে মহকাশে উড্ডীন করতে পেরেছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণকে তাই আমি বলছি, ‘মহাকাশে জয় বাংলার এক বছর’, ’’ বলেন তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১৯ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর প্রথম বর্ষপূর্তি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
এসএইচএস/এমএ