সেন্টারটি তথ্য প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের নানামুখী কর্মকাণ্ডে মুখর হয়ে উঠেছে। আধুনিক দ্বিতল ভবনের প্রায় সব ইনকিউবেশন সেল ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মওলা শাহীন বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল হাজিরা সফটওয়্যার,‘আমাদের নাটোর’সহ দুইটি শিক্ষা সংক্রান্ত অ্যাপস, উত্তরা গণভবনের ওয়েবসাইটসহ অসংখ্য লোগো তৈরি করা হয়েছে। চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৬টি চিনিকলের হিসাব সফটওয়্যার তৈরির কাজ উল্লেখযোগ্য।
জে বি টি আইটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিক্রম রাজ দেশের খ্যাতনামা ফ্রিল্যান্সারদের একজন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে ১০টি অ্যাপস ও দুইটি গেমস। জে বি টি আইটি’র উদ্ভাবিত অ্যাপস-‘রেসিপি রান্নাঘর’ গুগল রেসিপি’র দ্বিতীয় সেরা- যা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ডাউনলোড হয়েছে।
অ্যামাজন (এডব্লিউএস) পার্টনার ওয়েব সার্ভিস হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। পাশাপাশি ‘রেডিও মৌ’ নামে একটি রেডিও স্টেশন এবং দেশের একমাত্র কাস্টমাইজড ই-কমার্স সাইট ‘রং তুলি’ পরিচালনা করে আসছে।
অপর প্রতিষ্ঠান লার্জসেল ডট কম ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফটোশপের ওপর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার কাওছার আহমেদ ও মো. শহিদুল্লাহ।
সেন্টারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। জে বি টি আইটি’র সিইও বিক্রম রাজ বলেন, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সেন্টারের ক্যান্টিনটি সার্বক্ষণিক চালু থাকা, যানবাহন রাখার গ্যারেজ সুবিধা তৈরি করা এবং সেন্টারটির রক্ষণাবেক্ষণে আরও কিছু জনবল নিয়োজিত করা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নাটোর জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নাটোর সফট’র স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম মওলা শাহীন বলেন, ইনকিউবেশন সেন্টারের ছয়তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হলে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এসে তাদের নানামুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেন্টারটির কার্যক্রমে আরও গতি সঞ্চার করতে পারবেন।
উদ্যোক্তাদের রাতেও অবস্থান করতে হয় বলে রেস্ট রুম থাকা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ডেস্কটপ প্রদান এবং নাটোরের উদ্যোক্তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরির দাবিও জানান ফ্রিল্যান্সারদের এ সংগঠক।
সেন্টারের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইনকিউবেশন সেন্টারে প্রায় সমূদয় জায়গাই আট টাকা স্কয়ার ফিট মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া ফ্রিল্যান্সাররা নিয়মিত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ফ্রিল্যান্সারদের আরও ইনকিউবেশন সেলের চাহিদা রয়েছে।
নাটোরের পুরনো জেলখানা ভবন এলাকায় আড়াই একর জমির ওপরে ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন শেষে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। দুইটি অংশে বিভক্ত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পুরনো জেলখানা ভবন সংস্কার করে প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরি ও ছয়তলা ফাউন্ডেশনের ওপর নতুন দ্বিতল ভবনে ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ।
সেন্টারটিতে শুরুতেই গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশ্যুট এবং কন্ডাক্টিং ই- কমার্স ওয়েব সাইট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ২১টি ব্যাচে মোট ৪৮০ জন শিক্ষিত তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন এবং বর্তমানে কোডিগনেটর অ্যান্ড ওয়ার্ডপ্রেস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যান্ড ই-কমার্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, টু-ডি অ্যান্ড থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ভিডিওগ্রাফি অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিষয়ে ৫০০ প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেন্টারটিতে ইনকিউবেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
এসআরএস