মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রয়াসের প্রতিবন্ধকতা’ উল্লেখ করে এ আহ্বান জানানো হয়।
এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাদাত হোসেন, টেলিটকের উপ মহাব্যবস্থাপক সাইফুল আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এমটব মহাসচিব বলেন, মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি সরকারের জন্য রাজহাঁস। এটি সোনার ডিম দেয়। বাজেট বক্তৃতায় রাজহাঁস থেকে পালক তোলার কথা বলা হয়েছে, রাজহাঁস যেন ব্যথা না পায়। এ খাত ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপিতে অবদান রাখছে। সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে পালক তুলে শুধু ব্যথা দেওয়া নয়, মরণদশা হয়েছে। এই রাজহাঁসকে সরকার যেন কোলে করে রাখে, যেন বেশি রেভিনিউ দিতে পারে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের মোবাইল ফোনে সিম ও রিম কার্ডের উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্কহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীতকরণ, সিম কার্ডের উপর আরোপিত শুল্ক ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর রিটেইনড আর্নিং বা আয়ের সঞ্চিতির উপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ, মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা, স্মার্টফোন আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতিমালা বর্তমান ও নতুন গ্রাহকদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত খরচের বোঝা বাড়াবে। বাজেট ঘোষণার আগে এই খাত থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল সিম ট্যাক্সও মোবাইল সেবার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাতিল করা। এছাড়াও অমুনাফাভোগী অপারেটরদের বেলায় ন্যূনতম করপোরেট শুল্কহার কমিয়ে আনা এবং পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কর হার ৫ শতাংশ হারে কমিয়ে আনা। আর্থিক বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়েও এনবিআরের কাছে প্রস্তাব রাখে এমটব।
বর্তমান পটভূমিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীকে মুনাফা না করলেও মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম কর ০.৭৫ শতাংশ হারে বাধ্যতামূলকভাবে কর দিতে হতো। এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এখন মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম কর ২ শতাংশ করার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাত ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়নের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় অবিবেচনাপ্রসূত হারে কর হার বৃদ্ধি ও নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপ ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলবে।
আয়ের সঞ্চিতির উপর করারোপ মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্বৈত করারোপ করবে। ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো ৪২.৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিয়ে আসছে, নতুন করে আরোপিত করের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার দেশের অর্থনীতি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামোর মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত টেলিযোগাযোগ খাতকে সহায়তা করার স্থলে বরং প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক কাঠামো আরোপের মাধ্যমে এই খাতকে পঙ্গু করে দেবে বলে মনে করে এমটব।
এমটব মহাসচিব বলেন, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) টেলিযোগাযোগ খাতের অবদান ৬.২ শতাংশের অধিক হলেও এ বিষয়টি সম্পূর্ণ রূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে টেলিযোগাযোগ খাতের যা অবদান তা প্রস্তাবিত বাজেটে পুরোপুরিভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় আমরা আশাহত।
নতুন সিম কার্ড প্রতিস্থাপনের উপর আরোপিত শুল্ক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাড়ানোয় নতুন গ্রাহকদের খরচ দ্বিগুণ হারে বাড়াবে।
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা করে এমটব।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএডি/এএ