বুধবার (২৬ জুন) বাংলানিউজের কাছে চাকরিচ্যুত হওয়ার মুহূর্তের বর্ণনা দেন পাঠাওয়ের সদ্য সাবেক এক কর্মকর্তা।
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমরা সবাই প্রতিদিনের মতো অফিস করছিলাম।
তারা এসেই আমাদের সোজাসাপ্টাভাবে জানালেন, আমাদের পদত্যাগ করতে হবে। যে যে অবস্থায় আছে, পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তাকে সেই অবস্থায়ই অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন তারা। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যোগাযোগের সব মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। উপরে থাকা আমাদের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে অথবা বাইরের কারও সঙ্গেও আমরা কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি- বলছিলেন চাকরি হারানো ওই কর্মকর্তা।
প্রত্যেকের পদত্যাগপত্র পাঠাও কর্তৃপক্ষই ‘টাইপ’ করে এনেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি। বাংলানিউজকে বলেন, পদত্যাগপত্র টাইপ করাই ছিল। আমাদের শুধু স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। আমরা স্বাক্ষর করে আমাদের ডেস্কে আর বসতেও পারিনি। অফিস থেকে একরকম বের করে দেওয়া হয়েছে।
কর্মীদের পদত্যাগ গ্রহণে বাধ্য করার সময় অফিসের ভেতরে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ নিরাপত্তাপ্রহরী মোতায়েন করা হয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ওদের (পাঠাও) ভয় হচ্ছিল যে, আমরা হয়তো ইউনিয়ন করবো বা প্রতিবাদ করবো, যেখানে আমাদের একে অপরের থেকে আলাদা করা হয়েছিল। আমরা যেন তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ করতে না পারি বা কেউ যেন মোবাইলে কিছু ধারণ করতে না পারে সেজন্য প্রচুর সংখ্যক নিরাপত্তা প্রহরী অফিসের ভেতরে মোতায়েন করা হয়েছিল। নিজেদের অফিসে নিজেরাই যেন চোর; এমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল। কর্মী ছাঁটাই করলেও তার ধরন ও প্রক্রিয়া এতো বাজে! তাই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, অদক্ষ অথবা অযোগ্য কর্মী হিসেবে যে আমাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে না সেটি সিইও স্যার পরিষ্কার করে বলেছেন। অনেকটা মুখস্ত স্ক্রিপ্ট পড়ার মতো করে তিনি বলেন, আমাদের কাজের জন্য আমাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে না বরং প্রতিষ্ঠানের অর্থাভাবে ছাঁটাই করা হচ্ছে। আর এর জন্য নিজেদের দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, পাঠাওয়ের জনসংযোগ (পিআর) পরামর্শক এজেন্সি ও ওই এজেন্সির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আরেকটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার পরামর্শেই কর্মী ছাঁটাইয়ের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণের সময়েও অফিসে উপস্থিত ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা। তবে প্রতিষ্ঠানটির ঠিক কোন পর্যায়ের প্রতিনিধি এসময় উপস্থিত ছিলেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে পাঠাওয়ের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে এখনো কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কর্মী ছাঁটাইয়ের এ ঘটনার সঙ্গে নিজেরা কোনোভাবেই দায়ী নয় বলে দাবি করেছেন পাঠাওয়ের জন্য বিজ্ঞাপন এবং জনসংযোগ বিষয়ে কাজ করা ওই প্রতিষ্ঠানটি। ইমেইলে পাঠানো এক লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পিআর এজেন্সি কোনো কনটেন্ট ক্যারি, ডেভেলপ বা নিউজ সরবরাহ করা ছাড়া আর অতিরিক্ত কোনো কাজ করার ক্ষমতা রাখে না এটা সবার বোঝা উচিত! আমরা সর্বোচ্চ মিডিয়া রিলেটেড পরামর্শ দিতে পারি, ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কিছু করতে পারি না।
এজেন্সি তার উত্তরে আরও জানায়, পাশাপাশি আমাদের কোনো কোম্পানি পাঠাওয়ের ব্র্যান্ডিং কিংবা মার্কেটিং কনসালটেন্সি করে না এটা জেনে তারপরে প্রশ্ন করা উচিত।
** বিক্রি হতে চলেছে পাঠাও!
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
এসএইচএস/এএ