ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পাঠাওয়ের চাকরিচ্যুত ৩০০ কর্মী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পাঠাওয়ের চাকরিচ্যুত ৩০০ কর্মী

ঢাকা: প্রতিদিনকার মতো চলছিল কর্মব্যস্ত অফিস। ঠিকঠাক ছিল সবকিছুই। সপ্তাহখানেক আগেও চলছিল নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিনের নোটিশে চাকরি হারিয়ে দিশাহীন অবস্থা পাঠাওয়ের চাকরিচ্যুত প্রায় ৩০০ কর্মীর। সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই কর্মীদের পরিবারের জীবনযাত্রাও। হুমকির মুখে পড়েছে তাদের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ জীবন।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) একযোগে প্রায় ৩০০ কর্মীকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করে দেশে অল্পদিনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাইড শেয়ারিং এবং পণ্য ডেলিভারির প্রতিষ্ঠান পাঠাও।  কোনো ধরনের পূর্বাভাস বা নোটিশ না দিয়েই একসঙ্গে এই কর্মীদের ছাঁটাই করে পাঠাও।

আর এতেই বিপাকে পড়েছেন মুহূর্তেই ‘বেকার’ হয়ে যাওয়া প্রায় ৩০০ তরুণ-তরুণী।
 
চাকরি হারানো কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। হারানো চাকরির চেয়ে নতুন চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তার আতঙ্ক এখন তাদের মাঝে বেশি। উপরন্তু পাঠাওয়ের কাছ থেকে পাওনা এবং এক মাসের বেতন (জুলাই) না পাওয়ার ভয়ে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ বা গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের পরিচয় প্রকাশেও অপারগ তারা।
 
পরিচয় প্রকাশ করা হবে না এমন আশ্বাসের পর চাকরি হারানো এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিজেরাতো জানতামই না এবং প্রতিষ্ঠানও আমাদের জানতে বা বুঝতে দেয়নি যে আমরা এমন একটি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবো।   আমরা নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করারও সময় পাইনি। সকালে বাসা থেকে চাকরির দায়িত্ব পালনে অফিসে গিয়েছি। ফিরেছি বেকার হয়ে; নিজেদের গাফিলতির কোনো কারণ ছাড়া।
 
পাঠাওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চাকরি হারানো প্রায় সবাই বিপাকে পড়েছেন বলে জানান এই ব্যক্তি। তিনি বলেন, চাকরিচ্যুতদের মাঝে এমন ব্যক্তিও আছেন যার ওপর হয়তো আছে ঋণ পরিশোধের বোঝা; সবার মাঝেই আছে পরিবার চালানোর দায়িত্ব।  

পাঠাওয়ের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মাঝে এমন সদস্যও আছেন যারা হয়তো মাত্রই বিয়ে করেছেন এবং নতুন একটি জীবন শুরুর একদম দ্বারপ্রান্তে আছেন। প্রায় অনেকের পাঠাওতে চাকরির বয়স এক বছর পেরিয়েছে যেখানে পাঠাওয়ের বয়সই প্রায় চার বছর। স্থায়ী চাকরির সুবাদে কেউ বিয়ে করেছেন বা ঋণ নিয়েছেন। তারা রীতিমত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

প্রতিষ্ঠান এমন অর্থাভাবে পড়বে, এর ইঙ্গিত কর্মীদের অন্তত আরও ছয় মাসে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন এই ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমাদের যদি একটু সময় নিয়ে বলতো, আমরা হয়তো বিকল্প কিছু চিন্তা করতাম। নিজেদের অন্তত মানসিকভাবে প্রস্তুত করতাম। গত সপ্তাহের শনিবারও (১৫ জুন) কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগের জন্য অর্ধশতাধিক কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রায় ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। যে প্রতিষ্ঠানে এক সপ্তাহ আগেও নতুন করে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলে, সেই প্রতিষ্ঠান কিভাবে এক সপ্তাহ পরেই এতোগুলো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে?
 
‘চাকরিচ্যুত’ ট্যাগ যুক্ত হওয়ার কারণে আগামী দিনে ভালো চাকরি পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত এই ৩০০ তরুণ-তরুণী। এদের মধ্যে একজন বলেন, সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার আশা থাকে আমাদের। কিন্তু বিনা কারণে এবং নিজেদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ক্যারিয়ারে ‘চাকরিচ্যুত’ ট্যাগ লেগে গেছে। কোথাও আবেদন করলে আমাদের বিবেচনা করা হবে ‘পাঠাও থেকে চাকরিচ্যুত কর্মী’ হিসেবে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই আমাদের আর চাকরি দিতে চাইবে না। আর যারাও দেবে, তারা এতো কম বেতন অফার করবে, যা হবে একরকম প্রহসন। দেখা যাবে, সেই বেতনেই মানবেতর জীবনযাপন করে চাকরি করে যেতে হবে। এতোগুলো তরুণের চাকরি, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত এক নিমিষে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
 
এভাবে হঠাৎ করেই চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি পাঠাও কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন ইমেইল বার্তায় পাঠানো হলেও এর উত্তর এড়িয়ে পুরনো বিবৃতিই দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।