‘ত্রুটিপূর্ণ’ অডিটের দাবি করা অর্থ আদায়ে বিভিন্ন প্রকার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া স্থগিতকরণের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য বিটিআরসি’র এ জবরদস্তিমূলক কৌশলের প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রামীণফোন।
গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসি’র রাজস্ব পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবি’র কাছে পাওনা ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এনওসি প্রদান বন্ধ হলে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা ছাড়াও নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত কোনো যন্ত্রাংশ কিনতে পারবে না অপারেটর দু’টি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরটি জানায়, বিটিআরসির এ চরম সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে নেওয়া হয়নি। বরং এ সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের স্বাধীনভাবে সেবাগ্রহণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানসম্পন্ন ফোন-কল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ডিজিটাল মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অধিকারকে খর্ব করছে।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলি বলেন, ব্যবসায়িক কোন্দল নিরসনের উপায় হিসেবে কখনই গ্রাহকদের স্বার্থ, জাতীয় অর্থনীতি কিংবা দেশের ভাবমূর্তিকে জিম্মি করা উচিত নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এহেন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অন্যান্য পক্ষের ওপর যে প্রভাব পরেছে তা সত্যিই দুঃখজনক।
‘নীতিগতভাবে, পদ্ধতিগতভাবে এবং বস্তুনিষ্ঠতার আলোকে এ অডিটের প্রতিবাদ করা আমাদের আইনত অধিকার রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের বলপূর্বক টাকা আদায়ের কৌশল নজিরবিহীন এবং এইরূপ আচরণ এ বিরোধপূর্ণ অডিটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ’
তিনি আরও জানান, সেবাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুমোদন স্থগিতকরণের ফলে বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে। এইরূপ সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী নেটওয়ার্ককের বিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে এবং দেশের ডিজিটালাইজেশনের অগ্রযাত্রায় তা বাধাস্বরূপ। একটি সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্তে টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত সহযোগী, ডিজিটালসেবার উদ্যোক্তা এবং আইসিটি ফ্রিল্যান্সাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত অডিটের নীতিগত ও পদ্ধতিগত অসংখ্য ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যে অল্পকিছু ত্রুটি তুলে ধরে বলেন, যেগুলো অডিটের ফলাফলকে পরিষ্কারভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যে স্পেকট্রাম ব্যবহারের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে তা বিটিআরসির ডিমান্ড নোটের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। তবে অডিটের ফলাফলে এটি উল্লেখ করা হয় যে এ ডিমান্ড নোটের নিরূপণ পদ্ধতিতে বিটিআরসি নিজেই ভুল করেছে। এক্ষেত্রে এ ভুলের জন্য বিটিআরসিকে দায়ী করার বদলে বিটিআরসি’র নিযুক্ত অডিট প্রতিষ্ঠান দাবি করে যে গ্রামীণফোন শুধুমাত্র এ ভুলের মাশুলই দেবে না, এর ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদও দেবে।
‘এছাড়া ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়গুলো, যা আদালতে বিচারাধীন, অস্বাভাবিকভাবে সেগুলোও এই বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ অডিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ’
গ্রামীণফোনের সিইও গত ২ এপ্রিলের অডিট দাবির চিঠির তথ্য তুলে ধরে বলেন, চিঠিতে গ্রামীণফোনের আপত্তিগুলো গতবছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জানানো হয়েছে সেগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির মধ্যে এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা বা ২০১৮ সালের ৯ ও ১৮ সেপ্টম্বরে দু’টি চিঠির মাধ্যমে জানানো বিস্তারিত যুক্তিতর্কের কোনো কিছুই দাবিনামা পাঠানোর সময় আমলে নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এ কারণে যে অডিটে গ্রামীণফোনের উত্থাপিত সব যুক্তিই উপেক্ষিত হয়েছে এবং বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়েছে। এটি কোনোভাবেই একটি নিরপেক্ষ অডিটরের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না, বরং এইরূপ আচরণ পুরো অডিট প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এইরূপ অযৌক্তিক কার্যকলাপ আমাদের আইনানুগ অধিকার রক্ষার্থে গঠনমূলক সালিশি প্রক্রিয়া অবলম্বনের দাবিকেই সমর্থন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
এমআইএইচ/ওএইচ/