মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর অ্যাটকো নেতারা এ তথ্য জানান।
অ্যাটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সবকটি চ্যানেলই টেস্ট ট্রান্সমিশনে আছি।
স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ বিকল্প যোগাযাগ ব্যবস্থা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই তিনটা বিকল্প লাইন থাকলে একটা এক্সিডেন্টালি কাটা পড়লেও কোনো অসুবিধা না হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সর্বশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি স্যাটেলাইট। আমরা যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে এর চেয়ে বেশি ভাল ছবি এবং ব্রডকাস্ট কোয়ালিটি পাচ্ছি। শুধুমাত্র কমিউনিকেশন ফাইবার কানেক্টিভিটি সমস্যা দূর হলে আমাদের বর্তমান স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ ডিসকানেক্ট করে দেবো, এতে ৩০ থেকে ৬০ দিনের বেশি সময় লাগবে না বলে মনে হয়।
ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কে আমাদের কমিটমেন্ট আছে, আমরা অ্যাটকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কমিট করেছি যে, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে যাচ্ছি এবং যাবো। এরইমধ্যে অনেকেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
‘আগামী বৃহস্পতিবার আমাদের টেকিনিক্যাল প্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবেন এবং টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশা করি ২-৩ মাসের মধ্যে আমরা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের সব চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে পারবো- এটি আমাদের প্রত্যয়। ’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের গর্বের একটি স্যাটেলাইট, শুধুমাত্র বিটিভি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারে গেছে। এরইমধ্যে ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, বাকি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সহসা যাতে করে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে অ্যাটকোর পক্ষ থেকে কিছু কনসার্নের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আলোচনা করা হয়েছে। সহসায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে সভায় আলোচনা হয়েছে।
খুব সহসা চুক্তি স্বাক্ষর করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
টিভি চ্যানেলগুলোর বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনেক সমস্যা সমাধান হতে শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ পেন্ডিং ছিল- জন্মের ক্রম অনুযায়ী টেলিভিশনের ডিস্ট্রিবিউশন সিরিয়ালের বিষয়টি। এটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলাম, এটা হয়নি। সেটা কার্যকর হয়েছে। এছাড়া বিদেশি চ্যানেলের ক্লিন ফিড (বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে শুধু অনুষ্ঠান) যাতে সম্প্রচার করে এই ব্যাপারে সরকার কড়াকড়ি নির্দেশ জারি করেছে। তাদের চাপ দেওয়া ও আলোচনা অব্যাহত আছে। সবকটি বিদেশি চ্যানেল শিগগিরই ক্লিন ফিড প্রচার করবে যেখানে বাংলাদেশের কোনো বিজ্ঞাপন ও বিদেশি কোনো বিজ্ঞাপন ওভারফ্লো করবে না।
মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে পাচার হয় এবং বিদেশি বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে ওভারফ্লো করে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে পাচার হওয়াটা শতভাগ বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, আমরা চেক করবো। বিদেশি বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে ওভারফ্লোর ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত ফাইন টিউনিংয়ের ব্যাপার আছে। ওই চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সরকার কথা বলছে। সরকার আশাবাদী ক্লিন ফিডের বাইরে পর্যায়ক্রমে কোনো চ্যানেল থাকবে না।
ইকবাল সোবহান বলেন, নীতি নির্ধারণ করার অভাবে আমাদের কিছু কিছু চ্যানেলে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে সেখানে আমাদের সাংবাদিক, কলা-কুশলী অনেকের কষ্ট হচ্ছে। সে ব্যাপারে আমরা মন্ত্রীকে বলেছি যে এই শিল্পের আর্থিক সংকট সমাধানের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে সেগুলো যেন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল হওয়ার পরে আমাদের চ্যানেলগুলো পে-চ্যানেল হিসাবে কিছু সুযোগ পাওয়ার সুবিধা আমাদের সৃষ্টি হবে। তার ফলে আমাদের কিছু সংকট সমাধান হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন চ্যানেলে বিদেশি সিনেমা দেখানো হচ্ছে, এতে আমাদের কলা-কুশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডাবিংকৃত সিরিয়াল দেখানো হচ্ছে- সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে নানা ধরনের সুপারিশ এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস