মেয়ের জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে খুবই বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মাহমুদ খান নামে একজন ভুক্তভোগী।
মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রথমে তিনি হাতে পূরণ করা একটি আবেদনপত্র গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে জমা দেন।
এভাবে কয়েকদিন চলে যাওয়ার পর যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য একই কথা বলেন এবং সময় নেন।
এরপর ভুক্তভোগী মাহমুদ খান নিজেই অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে খুব রাগ হচ্ছিল। পরে ভাবলাম আমি নিজেই তো অনলাইনে আবেদন ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে পারি। কিন্তু নিজে কাজটি করতে গিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না।
গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বাসায় এবং দোকানে বারবার চেষ্টা করেও সার্ভারের সমস্যার কারণে এখনও অনলাইনে আবেদন করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
বাসায় চেষ্টার পাশাপাশি মিরপুর-১৩ নম্বরের দু’টি কম্পিউটারের দোকানে চেষ্টা করেছেন জানিয়ে মাহমুদ বলেন, একটি দোকানে গিয়ে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার কথা বললে প্রথমে রাজি হয়নি। পরে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে দোকানের কম্পিউটার অপারেটরসহ আধঘণ্টার চেষ্টায় নিবন্ধকের কার্যালয় সিলেক্ট করা পর্যন্ত যেতে পারিনি। পরে দোকানের অন্য কাস্টমারদের সময় নষ্ট হচ্ছে এজন্য এ যাত্রায় চেষ্টা বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, অন্য আরেকটি কম্পিউটারের দোকানে গেলে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের কথা শুনে কম্পিউটার অপারেটর বলেন, এর সার্ভার ভয়ানক খারাপ। এত সময় নিয়ে আমরা এটা করতে পারবো না। আপনি নিজে যদি করতে পারেন তবে করে নেন। সেখানেও এক ঘণ্টার নিষ্ফল চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে আরও দু’জন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেক্টরে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন সরকারির অফিসের সার্ভার, বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভারের এত বাজে অবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অন্তত ১০/১২ দফায় চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন ধাপে গিয়ে সার্ভারের সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আবেদনটি সম্পন্ন করতে পারেননি বলে জানান মাহমুদ খান।
ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার কাজ করেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একেকটা জন্ম নিবন্ধন করতে কখনও কখনও ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সার্ভারে প্রচুর সমস্যা।
অনলাইনে আবেদন শুরুর আগে বিভাগ, জেলা, থানা, ইউনিয়ন ধাপ ওয়ার্ড পর্যন্ত নির্বাচন করতে হয়। এরপর অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন ফরম প্রথমে বাংলায় (ইউনিকোড) ও পরবর্তীতে ইংরেজিতে পূরণের পর সংরক্ষণ বাটনে ক্লিকের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়।
অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তার বিবরণ তুলে ধরে মাহমুদ বলেন, ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে ‘ক্লিক করুন’- এখানে ক্লিক করে আবেদন শুরু করতে হয়। এটি ক্লিক করার পর আবেদনের পেজ আসতে অনেক সময় নেয়, কখনও কখনও পেজটি আসেই না।
তিনি বলেন, ভাগ্য ভালো হলে পেজটি যদি আসে তবে পরের ধাপে বিভাগ, জেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড সিলেক্ট করতে হয়। কিন্তু এ ধাপে এগুলো সহজে সিলেক্ট হয় না। বিভাগ সিলেক্ট করার পর আর জেলা সিলেক্টের ধাপে আর যাওয়া যায় না। বারবার চেষ্টা করতে হয়। কখনও কখনও এই সিলেক্ট করার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে থাকতে আর সামনে যাওয়া যায় না।
বহুবারের চেষ্টায় একবার সবগুলো অপশন সিলেক্ট করে আবেদন ফরমে বাংলা অংশ পূরণ করতে পেরেছেন। কিন্তু বাংলা অংশ শেষ করে পরবর্তী অপশনের ক্লিক করে আর সামনে এগোতে পারেননি। বারবার পরবর্তী অপশনের ক্লিক করেও আর সামনে যেতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত আবেদনপত্র অসমাপ্ত থেকে যায় বলে জানান তিনি।
আবেদন করতে গিয়ে মাঝপথে গিয়ে সার্ভার আর কাজ না করলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়।
হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগের কম্পিউটারে বসে যাচাই করেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর পৌনে তিনটা থেকে চেষ্টা শুরু করে পৌনে দু’ঘণ্টার চেষ্টায় বিভাগ থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত নির্বাচন (সিলেক্ট) করা গেছে। একটি সিলেক্ট করার পর পরেরটি সিলেক্ট করার অপশন সহজে আসে না। বারবার পরবর্তী অপশনে ক্লিক করতে করতে এত লম্বা সময়ে এটুকু এগোনো গেছে।
এরপর কম্পিউটারে বসে ওয়ার্ড সিলেক্ট করার ২০ মিনিট চেষ্টা করেও মূল আবেদন ফরমে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
অথচ মূল আবেদন শুরুর আগে বিভাগ থেকে ওয়ার্ড সিলেক্ট পর্যন্ত যেতে কোনোভাবেই ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড সময়ের চেয়ে বেশি লাগার কথা নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক রেজিস্ট্রার জেনারেল মানিক লাল বণিক বাংলানিউজকে বলেন, সার্ভারের আপগ্রেডেশনের জন্য কাজ করছি, কাজ চলছে। এটি ২০১০ সালে ইনস্টল করা হয়েছে। এরপর এখন আমরা আবার নতুন করে আপগ্রেডেশন করছি।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে যখন এটি করা হয় তখন একই সময়ে দুই হাজার লোক হিট করতে পারতো। এখন একই সময়ে অনেক বেশি হিট হচ্ছে। এর ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। কখনও কখনও ৮/১০ হাজার হিট করে।
আগামী দু’মাসের মধ্যে আপগ্রেডেশন করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এমইউএম/এএ