অপারেটর দুটির পাওনা আদায়ে সরকার অ্যাকশনে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে সমঝোতা হয়। এসময় অপারেটর দুটির কর্তৃপক্ষও উপস্থিত ছিলেন ওই সমঝোতা বৈঠকে।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সব পন্থা পরিহার করে বৈঠকে বসে সমাধান করা হবে। এতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, আমরা মনে করি যেন অবস্থাটি উইন উইন সিচুয়েশন হয়। আমরা কোনো পক্ষ হারতেও চাই না, কোনো পক্ষকে হারাতেও চাই না। সেই দিক থেকে আমি প্রত্যাশা করব একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ হবে ব্যবসার ক্ষেত্রে আলোচনায় পাওনা আদায় হলে।
গ্রামীণফোনের বিবৃতি:
ওই বৈঠকের পর গ্রামীণফোন বিবৃতিতে বলে, আমরা খুব আশাবাদী যে আজকে আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি। বিষয়টি একটি স্বচ্ছ ও গঠনমূলক উপায়ে সমাধানের দিকে নিয়ে যাব। আজকের এই অগ্রগতির বিষয়ে সহায়তা করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং এনবিআর চেয়ারম্যানকে।
‘আমরা এমন একটি সুন্দর সমাধানের প্রত্যাশা করছি, যেটি টেলিযোগযোগ খাত ও সরকারকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পুনরায় মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে। ’
রবির বিবৃতি:
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বিবৃতিতে বলেন, বিরোধপূর্ণ নিরীক্ষা আপত্তি সমাধানে সরকারের আন্তরিক ও স্বচ্ছ পদক্ষেপের ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এ ব্যাপারে কার্যকর হস্তক্ষেপের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
‘আমাদের বিশ্বাস, আজকের ঘোষণার মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে সৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতির অবসান হবে। যা এই শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। বিগত কয়েক মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থার গৃহীত কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপের কারণে সরকার, গ্রাহক ও মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প যে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, তা শিগগির বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে টেলিযোগাযোগ খাতের সার্বিক অগ্রগতির বিকল্প নেই; আমরা খুবই আনন্দিত, সে অগ্রযাত্রা আবারও তার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে। ’
পাওনা হিসাব:
বিটিআরসি জানায়, অডিট আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসি’র ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে পাওনা ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব পাওনা ছিল। দীর্ঘদিনের এ পাওনা পরিশোধ না করায় গত ৪ জুলাই বিটিআরসি পাঁচটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণফোন এবং রবির অনুকূলে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের মধ্যস্থতায় দুই অপারেটরের ব্যান্ডউইথ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৭ জুলাই সেই ব্যান্ডউইথ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর রাজস্ব বকেয়া আদায়ে গ্রামীণফোন ও রবির টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে গত ৫ সেপ্টেম্বর ৩০ দিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করে বিটিআরসি। পাওনা টাকা আদায় না হলে বিটিআরসি অপারেটর দু’টিতে প্রশাসক নিয়োগ করার চিন্তাও করছিল।
এরইমধ্যে অডিট আপত্তিতে পাওয়া রাজস্ব বকেয়া চাওয়াকে অযৌক্তিক ও ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে গ্রামীণফোন ও রবি পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। গত ২৫ অগাস্ট রবি এবং ২৬ অগাস্ট গ্রামীণফোন ঢাকার দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করে বলে অপারেটর দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আরও পড়ুন>> গ্রামীণফোন-রবির পাওনা আদায় অ্যাকশনে নয় আলোচনায় হবে
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এমআইএইচ/টিএ