বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীতে আইইবি মিলনায়তনে ফাইভজি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফাইভজির সঙ্গে পরিচয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফাইভজির সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে লিংক করা হয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফাইভজি অনেকের কাছে মনে হয়েছে ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। বিশেষজ্ঞ-বিজ্ঞানীরাও বলেছেন ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। ১৯৯৭ সালে যখন আমরা স্যাটেলাইটের কথা বলছিলাম তখনও বলা হয়েছে ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। আজ ফাইভজি কি আমাদের জন্য ঘোড়া রোগ নাকি অনিবার্য? বস্তুতপক্ষে ফাইভজি কেবল কথা বলার প্রযুক্তি না, ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার প্রযুক্তি না, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ছোট্ট ঢেউ না। আমরা জানি না ফাইভজি প্রবর্তনের ফলে আমাদের দেশের জনগণ, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কতভাবে কোন স্তরে ব্যবহার করবে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমি যখনই কোনো জায়গায় বিশেষ করে ফেসবুকে ইয়ং জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করি তখনই বলে এখন পর্যন্ত থ্রিজিতে কথা বলতে পারি না, ফোরজির স্পিড পাই না, টুজি ঠিকমতো কাজ করে না, নেটওয়ার্ক কাজ করে না, অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
‘নিঃসন্দেহে আমাদের মেবাইল ও ইন্টারনেট সেবাদাতাদের যে গুণগত মানের সেবা দেওয়া উচিত ছিল সেই গুণগত মানের সেবা আমরা দিতে সক্ষম হচ্ছি না। জনগণের প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি এরমধ্যে কাজ করেছে। একজন মন্ত্রী পর্যন্ত সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের অপারেটরদের সমালোচনার মধ্যে ফেলেছেন। আমার এমন কোনো দিন যায় না যেদিন দুইটা চারটা পাঁচটা কথা আসে না। বহু জায়গায় অভিযোগ- আমার নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না। ’
এই সংকটটা রয়ে গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে কারণে আমাদের সাধারণ মানুষের ধারণা রয়েছে যে, টুজি, থ্রিজি, ফোরজির নেটওয়ার্ক এখন পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারিনি; ফাইভজি নিয়ে কেন কথা বলছেন? আমি গালিটা একটু বেশি খাই, কারণ ফাইভজি নিয়ে বেশি কথা বলি।
‘এটি খুব স্পষ্ট করা দরকার যে, ফাইভজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভুউলেশনের মহাসড়ক। সে কারণে আমি পছন্দ করি আর না করি আমার টুজি, থ্রিজি, ফোরজির কোয়ালিটি অব সার্ভিস কতটা উন্নত করতে করতে পারবো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি ফাইভজির মহাসড়ক যথাসময়ে নির্মাণ করতে পারব কিনা?’
পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ ফাইভ-জি নিয়ে তৎপর হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খুব কম দেশের মধ্যে আমরা এরই মধ্যে ফাইভজির পরীক্ষা করে ফেলেছি, ৪ দশমিক ১৩ জিপিপিএস স্পিড পেয়েছিলাম।
ফাইভজির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জনগণ ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আলোচনা করছি। গাইডলাইন তৈরি করতে হবে সবার মতামত নিয়ে। এটি এমনভাবে তৈরি করতে চাই যাতে প্রত্যেকের কাছে ব্যবহার করে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়।
তিনি বলেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে চালু হবে, ওই বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়ে যাবে। আমি আশা করি ২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, সাবমেরিন ক্যাবল-৩ এবং ফাইভজির সক্ষমতা অর্জন করা হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিল্প-পরিবহন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। ফাইভজির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড, আইওটির মতো উন্নত প্রযুক্তির সামগ্রিক ব্যবহার বিকাশের পথ উন্মোচন করবে। এজন্য বিটিআরসি একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম ফাইভজির রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি চালু করার জন্য সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২১ সালের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে, ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ জেলা শহর, ২০২৩ সালের মধ্যে সব জেলা শহর এবং ২০২৬ সালের মধ্যে সব উপজেলা, হাইওয়ে, রেলওয়েতে ফাইভজি চালু করা হবে।
সেমিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান, গ্রামীণফোনের এন্টারপ্রাইজ বিজনেসের জেনারেল ম্যানেজার রেদওয়ান হাসান খান, এরিকসন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুস সালাম, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার জেরি ওয়াং সু বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ