বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রমনায় বিটিআরসি ভবনে এক বছরের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
গুণগত সেবা নিয়ে গ্রাহকরা নানা রকম সমস্যায় রয়েছে, এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অপারেটররা বলে তরঙ্গ খুব কম কিন্তু গ্রাহক বেশি, সেজন্য সমস্যা হচ্ছে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহফুজুল করিম মজুমদার বলেন, কলড্রপ বেড়েছে, ইন্টারনেটের গতি কমেছে- এগুলো সত্য। আমরা যে ড্রাইভ টেস্ট করি তার ফলাফলে স্ট্যান্ডার্ডের থেকে অনেক কম ছিল। সেজন্য অপারেটরকে ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিছু সময় দিয়েছি যেন সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে। এটার প্রভাব অনেকটা পড়েছে। অপারেটররা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এটার জন্য দায় তাদেরই নিতে হবে। আমরা তাদের সময় দিয়েছি।
‘আমরা আবারও ড্রাইভ টেস্টে নামবো, যদি স্ট্যান্ডার্ড লেভেল মেইনটেন করতে না পারে তাহলে টেলিকমউনিকেশন আইন অনুযায়ী অপারেটরদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবো। তবে আইনগত কারণে দুই অপারেটরের এনওসি বন্ধ থাকার কারণে নেটওয়ার্ক এক্সপান্ড করতে পারছে না। এটি কেটে গেলে আরো উন্নত হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। ’
বিটিআরসি চেয়াররম্যান বলেন, এনওসি আমাদের ইচ্ছায় বন্ধ হয়নি, পাওনা টাকা না দেওয়ার জন্য এনওসি বন্ধ রয়েছে।
মোবাইল হ্যান্ডসেটের কোয়ালিটির ওপরও নির্ভর করে জানিয়ে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেলর শহীদুল আলম বলেন, আমরা সবার জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিসের স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দেবো এবং সে অনুযায়ী ড্রাইভ টেস্ট হবে।
অপারেটরগুলো যথেষ্ট পরিমাণ তরঙ্গ নিচ্ছে না কেন- প্রশ্নে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো বাংলাদেশে তরঙ্গের দাম বেশি। কিন্তু দাম বেশি করা যেভাবে সম্ভব হয়েছে, কমানো ওভাবে সম্ভব না। দাম কমাতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।
‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। দাম কত কমানো যাবে- এ ব্যাপারে অপারেটররা এখনও প্রস্তাব দেয়নি। প্রস্তাব দিলে পাঠানো হবে। আমাদের স্ট্যাডি রেডি রয়েছে। ’
বর্ডার এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক তিনদিন বন্ধ রাখা নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, বর্ডারে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা হচ্ছিল, সেজন্য সরকারের উচ্চ মহল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
২০২০ সালের পরিকল্পনা
ফাইভজি চালু বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি করতে চাই। এ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ফাইভজি’র জন্য নতুন কোনো অপারেটর এলে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পজেটিভলি ভাববো।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ফাইভজি চালু করার জন্য প্রস্তুতি নেবো। আর মোবাইল সেটগুলো যেন আরো উন্নত হয়ে সেই চেষ্টা করবো।
ফাইভজি নিয়ে কমিটির সভাপতি বিটিআরসির ডিজি মো. আমিনুল হাসান বলেন, আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। পেপার ওয়ার্ক আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করবো। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে তরঙ্গ চূড়ান্ত করবো, ২০২১ এর শুরুতে ফাইভজি চালু করতে পারবো বলে আশা করি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এবছর টেলিফোন মনিটর সিস্টেম অনেক এগিয়ে গেছি। এতে মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে তথ্য পাবো।
এক বছরে অর্জন
এক বছরে বিটিআরসির অর্জন নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, গত এক বছরে মোবাইল গ্রাহক ৮৬ লাখ, টেলিডেনসিটি ২ দমমিক ৮৪ শতাংশ, ইন্টারনেট গ্রাহক ৭৮ লাখ, ইন্টারনেট ডেনসিটি ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, ফোরজি গ্রাহক ১ কোটি ৫৪ লাখ, ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৭৫০ জিবিপিএস ও ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে ২৮ জিবিপিএস।
দুই বছরে মোবাইল ফোনের কারখানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে নয়টি। মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে উৎপাদন হয়েছে ৭০ লাখ, এরমধ্যে স্মার্টফোন ২০ লাখ।
প্রতিষ্ঠানের আয় নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে সব সময়ই সরকারি প্রতিষ্ঠান মানে লোকসানি খাত। বিটিআরসি সরকারি প্রতিষ্ঠান কিন্তু লোকসানি খাত না, লাভজনক খাত। ২০০১ সালে বিটিআরসির প্রতিষ্ঠার বছরে তিন কোটি ৪৫ লাখ আয় ছিল, এখন প্রতি বছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকা। এটি দেশের জন্য বড় অর্জন এবং সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেই কেবল লোকসান যায়-এ বদনাম যেন না থাকে সেজন্য বিটিআরসি তৎপর।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গত একবছরে ৫৬৩টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে মনিটর করার জন্য লোকবল কম হলেও দক্ষতা বেশি। এজন্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে লোকবল বাড়ানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২০
এমআইএইচ/এএ