বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএমপিআইএ জানায়, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে দেশেই মোবাইল ফোন কারখানা করার জন্য নির্দেশনা দেয়। সরকারের এ যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে প্রায় সব প্রধান প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের কারখানা গড়ে তুলেছে।
এরই মধ্যে দেশে ৯টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কারখানা গড়ে তুলেছে এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মোবাইল ফোন এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানায় বিএমপিআইএ। কিন্তু অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোন দেশীয় উৎপাদন শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করে বিএমপিআইএ।
সংগঠনটির মতে, দেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এখন অবৈধ পথে আমদানি হওয়া ব্যবসার দখলে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে স্মার্টফোন আমদানির ওপর সরকার টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট বা টিটিআই ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে মোবাইল ফোনের দাম বেড়েছে। এই কারণেও গত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর আরও বেশি বেড়ে গেছে অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার।
অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের কারণে প্রথমত ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, নন-ওয়ারেন্টি পণ্য কিনে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। ওয়ারেন্টি ছাড়া অবৈধ ও রিফারবিশড পণ্য কেনার ফলে ভোক্তা ফোন নষ্ট হওয়ার পরে অথোরাইজড সার্ভিস পাচ্ছেন না, তাই নষ্ট ফোন সারাতে গুণতে হচ্ছে অনেক টাকা। এতে কাস্টমারের বিপুল সময় নষ্ট হচ্ছে উপরন্তু ফোনটি ঠিক হবে কিনা সেটাও নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, টাকার অংকে যা আড়াই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
তৃতীয়ত বৈধ আমদানিকারক ও দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ, অবৈধ পথে আসা নিম্নমানের পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় বৈধ পণ্যের বিক্রি কমে যাচ্ছে। ফলে মোবাইল কারখানার শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে।
বিএমপিআইএ বলছে, মাঝে মাঝেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা, প্রশাসন এবং র্যাবের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল ফোন ধরা পড়ছে, কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ফোন ব্যবসা। কারণ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।
বাজার তথ্য এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে বিএমপিআইএ জানায়, দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের মান এবং চীন দেশে বানানো ফোনের মান কাছাকাছি পর্যায়ের, কিছু কিছু নির্দিষ্ট মডেলের ক্ষেত্রে চীনের চাইতেও ভালো। দেশে উৎপাদিত ফোনের ক্ষেত্রে অভিযোগ কম হওয়াতে সার্ভিস সেন্টারগুলোতেও ক্রেতার ভিড় অনেক কম।
অবৈধ ফোনের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বিটিআরসি এবং বিএমপিআইএর যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) ডাটাবেইজ বা মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন। বৈধ পথে আসা ও দেশে তৈরি হওয়া সব ফোন এখন এ ডাটাবেইজে রেজিস্ট্রি করা।
ন্যাশনাল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টি রেজিস্ট্রারের (এনইআইআর) নামে প্রযুক্তিটির মাধ্যমে বাজারে থাকা আসল বা নকল মোবাইল ফোন পরীক্ষা সহজেই করা যাবে। মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি অচিরেই এ প্রযুক্তিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএমপিআইএ জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদন পেলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ শেষে এনইআইআর স্থাপনের কাজ শেষ করতে পারবে। এনইআইআর স্থাপনের কাজ শেষ হলে বিটিআরসি অবৈধ পথে আসা নকল ও অবৈধ মোবাইল ফোন তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বিএমপিআইএ বলছে, আইএমইআই ডাটাবেইজ সম্পর্কে গত বছরের আগস্ট মাসে বিটিআরসি গণমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছিলো, ফলে আমরা দেখেছি যে এরই মধ্যেই সাধারণ মানুষের মাঝেও সচেতনতা বেড়েছে, যদিও তা খুবই স্বল্প পরিসরে। সরকার সব স্তরের মানুষের কাছে সহজে এ ডাটাবেইজের কথা পৌঁছে দিলে ভোক্তা, সরকার এবং মোবাইল ফোন উদ্যোক্তাসহ সব পক্ষই লাভবান হবে।
সংগঠনটির তথ্যমতে, দেশের পুরো মোবাইল চাহিদার একটি বড় অংশ বিক্রি হয় রোজার ঈদের সময়। আসন্ন ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে অবৈধ ফোন ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বৈধ ব্যবসায়ীরা আছেন আতঙ্কে।
বিএমপিআইএ এরই মধ্যেই প্রধান প্রধান শপিং মলে জনসচেনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্টিকার ক্যাম্পেইন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেইসঙ্গে তারা বিটিআরসিকেও অনুরোধ করেছে মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে ঘনঘন যৌথ অভিযান চালানোর। এ উদ্যোগ অবিলম্বে কার্যকর হলে মোবাইল ফোনের দেশীয় উৎপাদন আরও ত্বরান্বিত হবে, একইসঙ্গে আরও অনেক দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে করে বিএমপিআইএ।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এমআইএইচ/ওএইচ/